প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য আলাদা হাসপাতাল দরকার
- আপডেট: ০৮:৩৬:৫৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ১৮০৩০
নিজস্ব প্রতিবেদক,সোনালী খবর
দেশে নানা বিষয়ে বিশেষায়িত হাসপাতাল আছে। কিন্তু শুধু প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য আলাদা করে কোনো হাসপাতাল নেই। এমন একটি হাসপাতাল হলে সারা দেশের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা নির্বিঘ্নে চিকিৎসাসেবা নিতে পারে।
দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল এমনকি উপজেলা পরিষদেও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ওঠা-নামার জন্য কোনো বিশেষ ব্যবস্থা নেই। ফলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রবেশে তারা বাধার সম্মুখীন হন। প্রতিবন্ধী সেবাকেন্দ্রগুলোতে নারী থেরাপিস্ট না থাকায় মহিলারা সেখানে সেবা নিতে যেতে পারেন না।
এমনই নানা সমস্যা ও করণীয় বিষয়ে মতামত উঠে এসেছে ময়মনসিংহ বিভাগের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সাথে কৌশলগত আলোচনা সভায়।
আজ শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালে বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ট্রাস্ট (বিডিডিটি) ও দৈনিক ঢাকা টাইমস আয়োজিত আলোচনা সভাটি অনুষ্ঠিত হয় ময়মনসিংহ নগরের দিগারকান্দা আসপাডা ট্রেনিং একাডেমিতে।
আলোচনার শুরুতে প্রকল্প অ্যাসিস্ট্যান্ট তাসমিয়া জাহান ইকরা দিকনিদের্শনামূলক স্বাগত বক্তব্য দেন। তিনি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রগুলোর বাস্তব অবস্থা, সীমাবদ্ধতা ও সম্ভাবনা এবং মাঠ পর্যায়ে সেবার মান ও বাস্তব চিত্র তুলে ধরেন।
এই কৌশলগত আলোচনা সভায় ময়মনসিংহ জেলার ২০ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি তাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন ।
শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি কলেজ ছাত্রী রূপালী আক্তার বলেন, সেবাকেন্দ্রগুলোতে সেবা নিতে গেলে মেডিকেল কলেজ থেকে বিভিন্ন টেস্ট করতে হয়, যা ব্যয়বহুল। এ ছাড়া সেন্টারে নারী সেবা প্রদানকারী নেই। পুরুষ সেবাকর্মী থেরাপি সেবা দিয়ে থাকেন, যে কারণে অনেক নারী সেখানে থেরাপি দিতে যান না। সেন্টারে নারী সেবিকা জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
আনন্দমোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের মাস্টার্স পড়ুয়া ছাত্র অজয় কৃষ্ণ দে বলেন, ‘ময়মনসিংহ জেলার সরকারি, বেসরকারি হাসপাতাল এমনকি কোনো স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়েও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য র্যাম্প নেই, যার ফলে আমরা কোনো অফিস বা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারি না।’
সরকারি হাসপাতালে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের হয়রানির কথা তুলে ধরেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তি সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সরকারি হাসপাতালে টিকিট করে চার ঘণ্টা অপেক্ষা করে সেবা নিতে হয়। আমাদের সাথে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্লভাবে আচরণ করে স্টাফরা। হাসপাতালে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা দরকার।’
সাইফুল ইসলাম আরো বলেন, ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য যদি সরকার একটি আলাদা হাসপাতাল করে দিত তবে সব প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সেখানে চিকিৎসা নিতে পারত।’ ট্রেন স্টেশন ও বাস টার্মিনালে এবং ভ্রমণে তাদের জন্য বিশেষ সেবার ব্যবস্থার দাবিও জানান তিনি।
শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও শিক্ষার্থী মিলি আক্তার বলেন, ‘আমাদের জন্য পরীক্ষার হলে অতিরিক্ত ত্রিশ মিনিট সময় দেওয়ার কথা, কিন্তু সেই সুযোগ আমরা পাই না।’
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন তানিয়া, হারুন, রফিকুল ইসলাম, লিলি আক্তার, সিজার আকন্দ, বিলকিস আক্তার, শান্ত, মো. এনায়েত হোসেন ও অ্যাডভোকেট নাজমুল হক।
বক্তারা বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা নির্বাচনের সময় কেন্দ্রে ভোট গিয়ে ভোট দিতে পারেন না। হুইলচেয়ার দিয়ে ওঠার কোনো ব্যবস্থা নেই। দেশের কোনো প্রতিষ্ঠানে, বাসস্টেশন, রেলস্টেশন এমনকি উপজেলা পরিষদের নির্বাহীর সাথে দেখা করতে যেতে পারেন না, তাদের সমস্যার কথা বলতে, কারণ সেখানেও র্যাম্প নেই।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য মোটিভেশনের ব্যবস্থা করার কথা বলেন বক্তারা। এটি করতে পারলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা তাদের কাজটা নিজেই করতে পারবেন।
সেন্টারগুলোতে সেবার মান নিরবিচ্ছিন্ন রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ডিভাইস পর্যাপ্ত নয়। চাহিদামতো যন্ত্রপাতি নেই। কোনো যন্ত্রপাতি নষ্ট হলে মেরামতের ব্যবস্থা নেই। এমন সমস্যার কথাও উঠে আসে বক্তব্যে।
১২ বছর বয়সে একজন হুইলচেয়ারের জন্য আবেদন করে ১৪ বছর বয়সে চেয়ারটি পেল, তখন প্রার্থিত হুইলচেয়ারটি তার জন্য উপযুক্ত থাকে না, কারণ তত দিনে তার শারীরিক গঠনের পরিবর্তন হয়ে যায় অনেকখানি। এ বিষয়েও দৃষ্টি আকর্ষণ করেন কেউ কেউ।
সব প্রতিবন্ধী ব্যক্তির কোনো না কোনো প্রতিভা ও ক্ষমতা আছে, সেগুলো শনাক্ত করে চিকিৎসা করা হলে তারাও প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে পারবে বলে মন্তব্য করেন বক্তারা।
আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য দেন বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ট্রাস্টের (বিডিডিটি) সিইও মনিরুজ্জামান খান, কনসালট্যান্ট অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম সিদ্দিকী, প্রজেক্ট অ্য্যসিস্টেন্ট মো. মবিনুর রহমান, দৈনিক ঢাকা টাইমসের ময়মনসিংহ জেলা প্রতিনিধি জয়নাল আবেদীন।




















