০৫:৩০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫

গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের লাশ সনাক্ত: দুটি লাশের ডিএনএ সংগ্রহ ও পোস্টমর্টেম সম্পন্ন,আরও ৩টি চলমান

  • আপডেট: ০৪:৪৮:৩২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৫
  • / ১৮০১১

নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা

আন্তর্জাতিক প্রোটোকল মেনে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শাহাদাৎবরণকারী অজ্ঞাত শহীদদের মরদেহ সনাক্তে কাজ করছে সিআইডি। এরই মধ্যে কবর থেকে উত্তোলিত দুটি লাশের ডিএনএ সংগ্রহ ও পোস্টমর্টেম সম্পন্ন হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে আরও তিনটি মরদেহের ডিএনএ সংগ্রহ ও পোস্টমর্টেম কাজ চলমান রয়েছে বলেও জানানো হয়।

সোমবার (০৮ডিসেম্বর) এক সংবাদ সন্মেলনে এসব জানান সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান।

এর আগে গতকাল রবিবার (০৭ডিসেম্বর) রাজধানীর মোহাম্মদপুর রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ সংলগ্ন কবরস্থানে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শাহাদাৎবরণকারী অজ্ঞাত শহীদদের লাশ উত্তোলনপূর্বক শনাক্তকরণ কার্যক্রম শুরু হয়।

জসীম উদ্দিন খান বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে এ পর্যন্ত যত ফ্যামিলি তাদের স্বজন হারিয়েছে তাদের মধ্যে সাতটা ফ্যামিলির ১১ জন সদস্য আমাদের সিআইডিতে এসে তাদের ডি এন স্যাম্পল দিয়ে গেছে। আমাদের কাজ হচ্ছে গণঅভ্যুত্থানের সময় যে গুলোকে কবরস্থ করা হয়েছে সেগুলোর সাথে এখন যারা ফ্যামিলি মেম্বার ডিএনএ দিয়ে যাচ্ছে এটা ম্যাচিং করে দেখতে চাই কবরের শায়িত এই নাম পরিচয় বিহীন এই লোকটার নাম পরিচয় সনাক্ত করা। এটি হচ্ছে আমাদের মূল উদ্দেশ্য। যাতে আমরা তাদের সঠিক পরিচয় নির্ধারণ করে তাদের পরিবারের কাছে ফেরত দিতে পারি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রথম দিনে আমরা দুইটা বডি কবর থেকে উত্তোলন করে তার ডিএনএ সংগ্রহ এবং পোস্টমর্টেম সম্পন্ন করে আবার তাদের পুনরায় কবরস্থ করা হয়েছে। যথারীতি আজকে আমাদের সকাল থেকে কাজ শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে তিনটি বডির ডিএনএ সংগ্রহের কাজ চলছে। চলমান থাকবে।

এর আগে গতকাল রবিবার (০৭ডিসেম্বর) লাশ উত্তোলনপূর্বক শনাক্তকরণ কার্যক্রম সম্পর্কে এক সংবাদ সন্মেলনে সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. ছিবগাত উল্লাহ বলেন, আন্তর্জাতিক প্রোটোকল মেনে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শাহাদাৎবরণকারী অজ্ঞাত শহীদদের লাশ উত্তোলন করা হবে।

মো. ছিবগাত উল্লাহ বলেন, আনাসের মতো যারা বুকের রক্ত ঢেলে দেশের জন্য রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, তাদের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা। এই কবরস্থানে যারা নাম-পরিচয়হীন অবস্থায় শুয়ে আছেন, তাদের পরিচয় তখন যাচাই-বাছাই করা হয়নি। তাদের পরিচয় উদঘাটন করা জাতির কাছে আমাদের একটি দায়িত্ব। আজ সেই মহান কাজের সূচনা হলো।

তিনি বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার (ওএইচসিএইচআর) মাধ্যমে আর্জেন্টিনা থেকে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ লুইস ফান্ডার ঢাকায় এসে পুরো কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি গত ৪০ বছরে ৬৫টি দেশে একই ধরনের অপারেশন পরিচালনা করেছেন।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক প্রোটোকল—মিনেসোটা প্রোটোকল—অনুসরণ করে কবর উত্তোলন, পোস্টমর্টেম, ডিএনএ স্যাম্পলিংসহ প্রতিটি ধাপ সম্পন্ন হবে। আমরা সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা মেডিকেল, ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ, ডিএমপি, বিভাগীয় কমিশনারসহ সব স্টেকহোল্ডারকে আমরা প্রশিক্ষণ দিয়েছি।

কবর উত্তোলন থেকে পুনঃদাফন পর্যন্ত নির্দিষ্ট ধাপ সকাল কার্যক্রম করা হবে জানিয়ে সিআইডি প্রধান বলেন, আবেদন অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে ১১৪টি কবর চিহ্নিত হয়েছে, যা বাস্তবে কমবেশি হতে পারে। মৃতদেহ উত্তোলনের পর পোস্টমর্টেম, বোন স্যাম্পল/টিস্যু সংগ্রহ, ডিএনএ প্রোফাইল তৈরি করা হবে।পরিচয় নিশ্চিত হলে ধর্মীয় সম্মান বজায় রেখে আবার পুনঃদাফন করা হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরিচয় শনাক্তের পর কেউ যদি লাশ গ্রহণ করতে চান তাহলে গ্রহণ করতে পারবেন।

আবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ১০ জন স্বজন আবেদন করেছেন, আরও কেউ থাকলে সিআইডিতে যোগাযোগ করতে পারবেন।
সিআইডি হটলাইনে যোগাযোগ করলে স্বজনদের ডিএনএ স্যাম্পল সংগ্রহ করা হবে।

তিনি বলেন, আমরা জানি না কোন কবরে কে আছেন। তাই সময় কত লাগবে বলা সম্ভব নয়। তবে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এই প্রক্রিয়ায় সকল শহীদের পরিচয় আমরা বের করতে পারব।

সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে সিআইডি প্রধান সাংবাদিকদের অনুরোধ করে বলেন, আন্তর্জাতিক প্রোটোকল অনুযায়ী মৃতদেহের কোনো ছবি বা সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করা যাবে না। এটি অত্যন্ত সম্মানজনক ও মানবাধিকার–সংশ্লিষ্ট কাজ। আপনাদের আগের মতোই সহযোগিতা চাই।

পরিবারদের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে তিনি বলেন, অনেক বাবা-মা, ভাই–বোন বছর ধরে ঘুরে বেড়িয়েছেন তাদের আপনজনদের পরিচয় জানার জন্য। আমরা চাই, এই জাতীয় বেদনার দায় থেকে দেশকে মুক্ত করতে পারি।

শেষে তিনি সকল সংশ্লিষ্ট সংস্থা, চিকিৎসক, সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসন, ডিএমপি এবং আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

এসময় ইউনাইটেড ন্যাশনস হাইকমিশনার ফর হিউম্যান রাইটস (ইউএনএইচআর) আর্জেন্টিনার আন্তর্জাতিক ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ লুইস ফন্ডিব্রাইডার বলেন, আমি গত তিন মাস ধরে সিআইডির সাথে কাজ করছি। আন্তর্জাতিক মানের এই কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি এই কাজ আন্তর্জাতিক ফরেন্সিক মানদণ্ড ফলো করে করা হবে। আন্তর্জাতিক রুলস ফলো করে আমরা লোকাল সংস্থা (সিআইডি) কে সহায়তা করা হবে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের লাশ সনাক্ত: দুটি লাশের ডিএনএ সংগ্রহ ও পোস্টমর্টেম সম্পন্ন,আরও ৩টি চলমান

আপডেট: ০৪:৪৮:৩২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা

আন্তর্জাতিক প্রোটোকল মেনে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শাহাদাৎবরণকারী অজ্ঞাত শহীদদের মরদেহ সনাক্তে কাজ করছে সিআইডি। এরই মধ্যে কবর থেকে উত্তোলিত দুটি লাশের ডিএনএ সংগ্রহ ও পোস্টমর্টেম সম্পন্ন হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে আরও তিনটি মরদেহের ডিএনএ সংগ্রহ ও পোস্টমর্টেম কাজ চলমান রয়েছে বলেও জানানো হয়।

সোমবার (০৮ডিসেম্বর) এক সংবাদ সন্মেলনে এসব জানান সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান।

এর আগে গতকাল রবিবার (০৭ডিসেম্বর) রাজধানীর মোহাম্মদপুর রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ সংলগ্ন কবরস্থানে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শাহাদাৎবরণকারী অজ্ঞাত শহীদদের লাশ উত্তোলনপূর্বক শনাক্তকরণ কার্যক্রম শুরু হয়।

জসীম উদ্দিন খান বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে এ পর্যন্ত যত ফ্যামিলি তাদের স্বজন হারিয়েছে তাদের মধ্যে সাতটা ফ্যামিলির ১১ জন সদস্য আমাদের সিআইডিতে এসে তাদের ডি এন স্যাম্পল দিয়ে গেছে। আমাদের কাজ হচ্ছে গণঅভ্যুত্থানের সময় যে গুলোকে কবরস্থ করা হয়েছে সেগুলোর সাথে এখন যারা ফ্যামিলি মেম্বার ডিএনএ দিয়ে যাচ্ছে এটা ম্যাচিং করে দেখতে চাই কবরের শায়িত এই নাম পরিচয় বিহীন এই লোকটার নাম পরিচয় সনাক্ত করা। এটি হচ্ছে আমাদের মূল উদ্দেশ্য। যাতে আমরা তাদের সঠিক পরিচয় নির্ধারণ করে তাদের পরিবারের কাছে ফেরত দিতে পারি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রথম দিনে আমরা দুইটা বডি কবর থেকে উত্তোলন করে তার ডিএনএ সংগ্রহ এবং পোস্টমর্টেম সম্পন্ন করে আবার তাদের পুনরায় কবরস্থ করা হয়েছে। যথারীতি আজকে আমাদের সকাল থেকে কাজ শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে তিনটি বডির ডিএনএ সংগ্রহের কাজ চলছে। চলমান থাকবে।

এর আগে গতকাল রবিবার (০৭ডিসেম্বর) লাশ উত্তোলনপূর্বক শনাক্তকরণ কার্যক্রম সম্পর্কে এক সংবাদ সন্মেলনে সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. ছিবগাত উল্লাহ বলেন, আন্তর্জাতিক প্রোটোকল মেনে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শাহাদাৎবরণকারী অজ্ঞাত শহীদদের লাশ উত্তোলন করা হবে।

মো. ছিবগাত উল্লাহ বলেন, আনাসের মতো যারা বুকের রক্ত ঢেলে দেশের জন্য রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, তাদের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা। এই কবরস্থানে যারা নাম-পরিচয়হীন অবস্থায় শুয়ে আছেন, তাদের পরিচয় তখন যাচাই-বাছাই করা হয়নি। তাদের পরিচয় উদঘাটন করা জাতির কাছে আমাদের একটি দায়িত্ব। আজ সেই মহান কাজের সূচনা হলো।

তিনি বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার (ওএইচসিএইচআর) মাধ্যমে আর্জেন্টিনা থেকে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ লুইস ফান্ডার ঢাকায় এসে পুরো কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি গত ৪০ বছরে ৬৫টি দেশে একই ধরনের অপারেশন পরিচালনা করেছেন।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক প্রোটোকল—মিনেসোটা প্রোটোকল—অনুসরণ করে কবর উত্তোলন, পোস্টমর্টেম, ডিএনএ স্যাম্পলিংসহ প্রতিটি ধাপ সম্পন্ন হবে। আমরা সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা মেডিকেল, ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ, ডিএমপি, বিভাগীয় কমিশনারসহ সব স্টেকহোল্ডারকে আমরা প্রশিক্ষণ দিয়েছি।

কবর উত্তোলন থেকে পুনঃদাফন পর্যন্ত নির্দিষ্ট ধাপ সকাল কার্যক্রম করা হবে জানিয়ে সিআইডি প্রধান বলেন, আবেদন অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে ১১৪টি কবর চিহ্নিত হয়েছে, যা বাস্তবে কমবেশি হতে পারে। মৃতদেহ উত্তোলনের পর পোস্টমর্টেম, বোন স্যাম্পল/টিস্যু সংগ্রহ, ডিএনএ প্রোফাইল তৈরি করা হবে।পরিচয় নিশ্চিত হলে ধর্মীয় সম্মান বজায় রেখে আবার পুনঃদাফন করা হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরিচয় শনাক্তের পর কেউ যদি লাশ গ্রহণ করতে চান তাহলে গ্রহণ করতে পারবেন।

আবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ১০ জন স্বজন আবেদন করেছেন, আরও কেউ থাকলে সিআইডিতে যোগাযোগ করতে পারবেন।
সিআইডি হটলাইনে যোগাযোগ করলে স্বজনদের ডিএনএ স্যাম্পল সংগ্রহ করা হবে।

তিনি বলেন, আমরা জানি না কোন কবরে কে আছেন। তাই সময় কত লাগবে বলা সম্ভব নয়। তবে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এই প্রক্রিয়ায় সকল শহীদের পরিচয় আমরা বের করতে পারব।

সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে সিআইডি প্রধান সাংবাদিকদের অনুরোধ করে বলেন, আন্তর্জাতিক প্রোটোকল অনুযায়ী মৃতদেহের কোনো ছবি বা সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করা যাবে না। এটি অত্যন্ত সম্মানজনক ও মানবাধিকার–সংশ্লিষ্ট কাজ। আপনাদের আগের মতোই সহযোগিতা চাই।

পরিবারদের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে তিনি বলেন, অনেক বাবা-মা, ভাই–বোন বছর ধরে ঘুরে বেড়িয়েছেন তাদের আপনজনদের পরিচয় জানার জন্য। আমরা চাই, এই জাতীয় বেদনার দায় থেকে দেশকে মুক্ত করতে পারি।

শেষে তিনি সকল সংশ্লিষ্ট সংস্থা, চিকিৎসক, সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসন, ডিএমপি এবং আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

এসময় ইউনাইটেড ন্যাশনস হাইকমিশনার ফর হিউম্যান রাইটস (ইউএনএইচআর) আর্জেন্টিনার আন্তর্জাতিক ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ লুইস ফন্ডিব্রাইডার বলেন, আমি গত তিন মাস ধরে সিআইডির সাথে কাজ করছি। আন্তর্জাতিক মানের এই কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি এই কাজ আন্তর্জাতিক ফরেন্সিক মানদণ্ড ফলো করে করা হবে। আন্তর্জাতিক রুলস ফলো করে আমরা লোকাল সংস্থা (সিআইডি) কে সহায়তা করা হবে।