পরিবর্তন হচ্ছে বাংলাদেশ জেলের নাম জানালো আইজি প্রিজন

- আপডেট: ০১:১৭:৪৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৫
- / ১৮০১৫
নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা
বাংলাদেশ জেলের নাম পরিবর্তন করে নতুন নামকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে কারা অধিদপ্তর। বাংলাদেশ জেলের নাম পরিবর্তন করে ‘কারেকশন সার্ভিসেস বাংলাদেশ’ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) কারা সদরদপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন।
তিনি বলেন, কারাগার কেন্দ্রীক সংশোধনের বিষয়টির উপর অধিক গুরুত্তরোপের জন্য বাংলাদেশ জেলের নাম পরিবর্তন করে ‘কারেকশন সার্ভিসেস’ (Correction Services Bangladesh) করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। কারা বিভাগ সংশ্লিষ্ট আইন কানুন যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে “Correction Service Act-2025” এর খসড়া চূড়ান্ত করত; অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত বন্দিদের স্থান সংকুলাণের নিমিত্তে নতুন করে ২ টি কেন্দ্রীয় কারাগার এবং ৪ টি জেলা কারাগার চালু করা হয়েছে। এছাড়াও অধিকতর সমন্বয়ের জন্য ঢাকা বিভাগকে ভেঙে ২ টি বিভাগ করা হয়েছে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন বলেন, কারাগারে লোকবল সংকট রয়েছে। সেই সংকট নিরসনের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সরকার ১৮৯৯ নতুন জনবলের অনুমোদন দিয়েছে। এছড়া আরও ১৫০০ জনবলের চাহিদা পাঠানো হয়েছে। কারা অধিদপ্তরের কার্যক্রমে গতিশীলতা আনায়নের লক্ষ্যে সদর দপ্তরসহ বিভাগীয় সদর দপ্তর সমূহকে ঢেলে সাজানো হয়েছে এবং নতুন জনবল পদায়ণ করা হয়েছে।
দেশব্যাপী সকল কারাগার সমূহকে কারা অধিদপ্তরের নিজস্ব ফাইবার নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থলে উপস্থিতি নিশ্চিতের জন্য ডিজিটাল এটেনডেন্ট সিস্টেম এবং টিম ট্রেকার্স চালু করা হয়েছে।
কমপ্রিহেনসিভ মোবাইল জ্যামিং সিস্টেম, বডি স্ক্যানার, লাগেজ স্ক্যানার, গ্রাউন্ড সুইপিং মেশিন ও মোবাইল ডিটেক্টর কারা নিরাপত্তায় ব্যবহার করা হচ্ছে। এআই নির্ভর সিসি ক্যামেরার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ ডিউটিসমূহে দায়িত্বরতদের বডি ক্যামেরা ব্যবহারের প্রচলন করা হয়েছে।
এছাড়া কারাগারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অস্ত্র কেনার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
বন্দিদের সাক্ষাৎ ও টেলিফোন কলের বিষয়ে আইজি প্রিজন বলেন, বন্দিদের টেলিফোন কল এবং দেখা সাক্ষাতের বিষয়টি ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনা হয়েছে যাতে। এক্ষেত্রে সেবাগ্রহীতাদের কোনরূপ হয়রানীর স্বীকার হতে না হয় এবং একই সাথে নিবিড় নজরদারিও বজায় রাখা যায়। আমরা এজন্য এআই নির্ভর তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করছি।কোন কারাগারপ্রাঙ্গনে আগত দর্শনার্থীদের সঙ্গে সম্মানসূচক ব্যবহার করা হচ্ছে এবং সাক্ষাতের সময় তারা যাতে হয়রানির স্বীকার না হয় তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। হটলাইন সেবা (১৬১৯১) চালু করা হয়েছে যার মাধ্যমে সেবা গ্রহণকারীরা বন্দি সম্পর্কিত সুনির্দিষ্ট কিছু তথ্য আদান প্রদান করতে পারছে।
বন্দিদের খাবার নিয়ে তিনি বলেন, বন্দিদের খাবারের মেন্যুতে প্রোটিনের পরিমাণ ইতোমধ্যেই স্বল্প পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে এবং তা যৌক্তিক পর্যায়ে বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছিল এবং ইতোমধ্যে তার অনুমোদন পাওয়া গেছে। এছাড়া সকালের নাস্তা এবং বিশেষ দিবসের জন্যও খাদ্য বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে।
বন্দিদের স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে আইজি প্রিজন বলেন, বন্দিদের মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে কেরাণীগঞ্জে ‘কেন্দ্রীয় কারা হাসপাতাল’ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, যার মাধ্যমে কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীও সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। বন্দিদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি মাথায় রেখে বিভিন্ন কারাগারে স্থান সংকুলান সাপেক্ষে নানাবিধ খেলাধুলা, সাংস্কৃতি অনুষ্ঠানসহ নানাবিধ মনন চর্চার সবিধা প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া তাদের সংশোধনের নিমিত্তে ধর্মীয় শিক্ষাসহ নানাবিধ কাউন্সিলিং এর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
কারা অধিদপ্তরের চাকরিরত ও অবসরপ্রাপ্তদের সুযোগ সুবিধা নিয়ে তিনি বলেন, অবসরগামী কারারক্ষীদের আজীবন রেশন প্রদানের বিষয়টি সরকার নীতিগতভাবে অনুমোদন দিয়েছেন, যা বর্তমানে বাস্তবায়নের প্রত্রিয়াধীন রয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উন্নতমানের প্যাকেটজাত রেশন দ্রব্যাদি প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে এবং বিশেষ দিবসে খাবার পরিবেশনের জন্য বিশেষ আর্থিক বরাদ্দ করা হচ্ছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শারীরিকভাবে যোগ্য রাখার স্বার্থে ওয়েট চার্ট সুনির্দিষ্টকরণসহ পিটি-প্যারেড বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং এ সংক্রান্ত দ্রব্যসামগ্রী প্রদান করা হয়েছে।
এ সময় তিনি প্রশিক্ষণ নিয়ে বলেন, বিগত সময়ের চ্যালেঞ্জসমূহ থেকে উপলব্ধি করে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত কারারক্ষী গড়ে তুলতে আমরা সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য যুগপোযোগী/টেকনোলজি নির্ভর প্রশিক্ষণের মডিউল তৈরি করে প্রশিক্ষণ প্রদান করছি। বিগত এক বছরে ৬৯১ জন কারারক্ষী, ১৫০ জন প্রধান কারারক্ষী, ৬৯ জন সর্বপ্রধান কারারক্ষী, ৩০ জন সার্জেন্ট ইন্সট্রাক্টর, ৫৫ জন ডেপুটি জেলার ও জেলারগণকে বিভিন্ন পেশাগত বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।
মাদকাসক্তির বিষয়ে জিরো টলারেন্স কঠোরনীতি গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, গত ১ বছরে মাদকসেবী ২৯ জন সদস্যকে মাদক বহন/গ্রহণ/সরবরাহে জড়িত থাকার অপরাধে ফৌজদারী মামলায় কারাগারে প্রেরণসহ বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও এ সংক্রান্ত সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কারা সদর দপ্তর নিজস্ব ভোপ টেস্টিং মেশিন সংগ্রহ করেছে।
তিনি বলেন, কারা বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্ণীতি এবং সকল নিয়ম বহির্ভুত বিষয়েও আমাদের অবস্থান অত্যান্ত কঠোর। বিগত এক বৎসরে বিভিন্ন অনিয়মের সাথে জড়িতদের বাধ্যতামূলক অবসর, ৩৪ জনকে চাকুরীচ্যুত, ৪৪০ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাসহ ১৭২ জনকে প্রশাসনিক কারণে বিভাগের বাইরে বদলি করা হয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য পরিবার নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্যসেবা স্কিম হতে সহায়তার পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে সুদবিহীন লোন সহায়তা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।