০২:০৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫

বিয়ামে এসি বিস্ফোরণ নয়: নথি পোড়াতে গিয়ে আগুনে পুড়ে ২ জন নিহত, এআই দিয়ে শনাক্ত আসামি

সোনালী খবর
সোনালী খবর
  • আপডেট: ০৩:৩০:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫
  • / ১৮০০৬

নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা

চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ইস্কাটনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (বিয়াম) ফাউন্ডেশনের একটি অফিস কক্ষে এসি বিস্ফোরণে অফিস সহায়ক ও গাড়িচালকের মৃত্যুর খবর আসে। ফায়ার সার্ভিসও জানায় এসি বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছে তাদের।

তবে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড অপারেশন ইউনিট (এসআইঅ্যান্ডও) তিন মাস তদন্ত করে বের করে এসি বিস্ফোরণে নয়, এটি একটি হত্যাকাণ্ড। হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য ছিল না আসামিদের, পেট্রোল ঢেলে শুধু নথিপত্র পুড়িয়ে দেওয়ার কারণেই এ হত্যাকাণ্ডটি ঘটে যায়। আগুন লাগিয়ে নথিপত্র পুড়িয়ে ফেলার কাজের জন্য চুক্তি হয় ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা।

পিবিআই এ হত্যামামলার আসামি শনাক্ত ও পরে গ্রেফতার করে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (এআই) মাধ্যমে। গ্রেফতার আসামিরা হলেন, ঘটনার মাস্টারমাইন্ড বিয়ামের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম (৩৮) এবং তার ভাড়াটে সহযোগী মো. আশরাফুল ইসলাম (৩৬)। গত ২৫ জুলাই তাদের কুড়িগ্রাম ও ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।

সোমবার (২৮ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর কল্যাণপুরে পিবিআই উত্তর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুর রহমান।

তিনি বলেন, গত ২৭ জুলাই রাত ৩টা ২০ মিনিটের দিকে বিয়াম ভবনে ৫০৪ নম্বর কক্ষে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে ৫০৪ নম্বর কক্ষে রক্ষিত সমিতির দলিলপত্রাদি, নামজারি সংক্রান্তে কাগজপত্রাদি, ব্যাংক হিসাব, চেক বই, জমি ক্রয় সংক্রান্ত ৪টি চুক্তিপত্র, ইলেকট্রিক সামগ্রী, আসবাবপত্র কক্ষের এসিসহ অন্যান্য মালামাল পুড়ে ভস্মীভূত, চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়।

অফিস সহায়ক মো. আব্দুল মালেক ঘটনাস্থলেই মারা যান এবং সমিতির সেক্রেটারির গাড়িচালক মো. ফারুক গুরুতর আহত হলে তাকে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয় এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনায় বিসিএস (প্রশাসন) কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক অবসরপ্রাপ্ত সচিব মো. মশিউর রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয়ের আসামিদের বিরুদ্ধে হাতিরঝিল থানায় মামলা করেন।

আব্দুর রহমান বলেন, হাতিরঝিল থানা পুলিশ দুই মাস মামলাটি তদন্ত করেন। গত ৬ মে পিবিআই এসআইঅ্যান্ডও (উত্তর) মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে এবং এসআই মোহাম্মদ গোলাম মওলাকে তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করা হয়।

পিবিআইয়ের বিশেষ টিম মামলার ঘটনার তারিখ ও সময় এবং সিসি ক্যামেরার ফুটেজে বিশ্লেষণে জানতে পারেন ২৭ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে মাথায় মাস্কিং ক্যাপ, মুখে মাস্ক, হাতে হ্যান্ড গ্লাভস, পায়ে স্যান্ডেল পরিহিত অবস্থায় অনুমান ৩০-৩৫ বছর বয়সী এক সন্দেহভাজন যুবক বিয়াম ভবন মাঠের পশ্চিম দিক থেকে এসে সিঁড়ি দিয়ে ভবনের পঞ্চম তলায় চলে যান এবং সিসি ক্যামেরা বন্ধ করে দেন।

পিবিআইয়ের টিম আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্সের মাধ্যমে আসামির ছবি শনাক্ত করে। তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পিবিআইয়ের একাধিক টিম আত্নগোপনে থাকা ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আসামি মো. আশরাফুল ইসলামকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আশরাফুল ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন এবং তার দেওয়া তথ্যমতে ঘটনার মাস্টারমাইন্ড বিয়ামের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলামকে তার বর্তমান বাসা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার আশরাফুল পিবিআইকে জানান, বিয়ামের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এসএম জাহিদুল ইসলাম তার পূর্ব পরিচিত এবং এলাকার ভাই। জাহিদুল ইসলাম তাকে গত বছরের ৫ আগস্ট ২/৩ মাস আগে ঢাকায় এনে মগবাজার থ্রি-স্টার হোটেলে একটানা ৫/৬ মাস রাখেন। জাহিদুল ইসলামের সূত্র ধরে সে প্রায়ই বিয়াম প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করতো এবং ওই অফিসের কাজে কয়েকজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি হয়। সমিতির মূল নথিপত্র স্থায়ীভাবে ধ্বংসের লক্ষ্যে বিয়ামের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এসএম জাহিদুল ইসলাম আসামি আশরাফুল, অফিস সহায়ক আ. মালেক ও গাড়িচালক ফারুক মিলে পরিকল্পনা করেন।

পিবিআইয়ের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, পরিকল্পনা মোতাবেক কাজ শেষে তাদেরকে ১০/১২ লাখ টাকা দেওয়ার মৌখিক চুক্তি করে। পরিকল্পনা মোতাবেক একদিন জাহিদ আশরাফুলকে কিছু টাকা দিয়ে বিয়ামের পঞ্চম তলার সিসি ক্যামেরা বন্ধ করতে বলেন। জাহিদের দেওয়া টাকায় আশরাফুল মাস্ক, মাস্কিং ক্যাপ, হ্যান্ড গ্লাভস ও ফুল স্লিপ শার্ট কেনেন।

তিনি বলেন, ঘটনার দিন আশরাফুল মাথায় মাস্কিং ক্যাপ, মুখে মাস্ক এবং হ্যান্ড গ্লাভস পরে বিয়াম ভবনের পঞ্চম তলায় উঠে ক্যামেরা বন্ধ করে দেন। ক্যামেরা বন্ধ করার পর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী অফিস সহায়ক মালেক ও ড্রাইভার ফারুক চতুর্থ তলার ৫০৪ নম্বর কক্ষে প্রবেশ করেন। তখন আশরাফুল দরজার পাশে সিঁড়ির কোনায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। ৫০৪ নম্বর কক্ষে প্রবেশ করে গাড়িচালক মালেক বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেন।

আব্দুর রহমান আরও বলেন, আশরাফুল পঞ্চম তলা থেকে তৃতীয় তলা নামতেই বিকট বিস্ফোরণের শব্দ হয়। ঘটনাস্থলেই অফিস সহায়ক মালেক মারা যান। জাহিদ গাড়ি নিয়ে আশরাফুলের সহযোগিতায় গুরুতর আহত অবস্থায় ড্রাইভার ফারুককে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করান। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ড্রাইভার ফারুক মারা গেলে জাহিদ আশরাফুলকে ডেকে নিয়ে ঢাকা ছেড়ে অন্য কোথাও গা-ঢাকা দিয়ে থাকতে বলেন। জাহিদের কথামতো পরদিন রংপুর চলে যান। এই কাজে আশরাফুলকে ১০/১২ লাখ টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও জাহিদ এখন পর্যন্ত তাকে ৬/৭ লাখ টাকা দেন।

গত ২৬ জুলাই বিয়ামের প্রশাসনিক কর্মকর্তা গ্রেফতার জাহিদুল ইসলাম এবং মো. আশরাফুলকে আদালতে সোপর্দ করা হলে তারা ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

বিশেষ পুলিশ সুপার আরও বলেন, দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

বিয়ামে এসি বিস্ফোরণ নয়: নথি পোড়াতে গিয়ে আগুনে পুড়ে ২ জন নিহত, এআই দিয়ে শনাক্ত আসামি

আপডেট: ০৩:৩০:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা

চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ইস্কাটনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (বিয়াম) ফাউন্ডেশনের একটি অফিস কক্ষে এসি বিস্ফোরণে অফিস সহায়ক ও গাড়িচালকের মৃত্যুর খবর আসে। ফায়ার সার্ভিসও জানায় এসি বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছে তাদের।

তবে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড অপারেশন ইউনিট (এসআইঅ্যান্ডও) তিন মাস তদন্ত করে বের করে এসি বিস্ফোরণে নয়, এটি একটি হত্যাকাণ্ড। হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য ছিল না আসামিদের, পেট্রোল ঢেলে শুধু নথিপত্র পুড়িয়ে দেওয়ার কারণেই এ হত্যাকাণ্ডটি ঘটে যায়। আগুন লাগিয়ে নথিপত্র পুড়িয়ে ফেলার কাজের জন্য চুক্তি হয় ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা।

পিবিআই এ হত্যামামলার আসামি শনাক্ত ও পরে গ্রেফতার করে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (এআই) মাধ্যমে। গ্রেফতার আসামিরা হলেন, ঘটনার মাস্টারমাইন্ড বিয়ামের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম (৩৮) এবং তার ভাড়াটে সহযোগী মো. আশরাফুল ইসলাম (৩৬)। গত ২৫ জুলাই তাদের কুড়িগ্রাম ও ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।

সোমবার (২৮ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর কল্যাণপুরে পিবিআই উত্তর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুর রহমান।

তিনি বলেন, গত ২৭ জুলাই রাত ৩টা ২০ মিনিটের দিকে বিয়াম ভবনে ৫০৪ নম্বর কক্ষে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে ৫০৪ নম্বর কক্ষে রক্ষিত সমিতির দলিলপত্রাদি, নামজারি সংক্রান্তে কাগজপত্রাদি, ব্যাংক হিসাব, চেক বই, জমি ক্রয় সংক্রান্ত ৪টি চুক্তিপত্র, ইলেকট্রিক সামগ্রী, আসবাবপত্র কক্ষের এসিসহ অন্যান্য মালামাল পুড়ে ভস্মীভূত, চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়।

অফিস সহায়ক মো. আব্দুল মালেক ঘটনাস্থলেই মারা যান এবং সমিতির সেক্রেটারির গাড়িচালক মো. ফারুক গুরুতর আহত হলে তাকে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয় এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনায় বিসিএস (প্রশাসন) কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক অবসরপ্রাপ্ত সচিব মো. মশিউর রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয়ের আসামিদের বিরুদ্ধে হাতিরঝিল থানায় মামলা করেন।

আব্দুর রহমান বলেন, হাতিরঝিল থানা পুলিশ দুই মাস মামলাটি তদন্ত করেন। গত ৬ মে পিবিআই এসআইঅ্যান্ডও (উত্তর) মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে এবং এসআই মোহাম্মদ গোলাম মওলাকে তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করা হয়।

পিবিআইয়ের বিশেষ টিম মামলার ঘটনার তারিখ ও সময় এবং সিসি ক্যামেরার ফুটেজে বিশ্লেষণে জানতে পারেন ২৭ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে মাথায় মাস্কিং ক্যাপ, মুখে মাস্ক, হাতে হ্যান্ড গ্লাভস, পায়ে স্যান্ডেল পরিহিত অবস্থায় অনুমান ৩০-৩৫ বছর বয়সী এক সন্দেহভাজন যুবক বিয়াম ভবন মাঠের পশ্চিম দিক থেকে এসে সিঁড়ি দিয়ে ভবনের পঞ্চম তলায় চলে যান এবং সিসি ক্যামেরা বন্ধ করে দেন।

পিবিআইয়ের টিম আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্সের মাধ্যমে আসামির ছবি শনাক্ত করে। তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পিবিআইয়ের একাধিক টিম আত্নগোপনে থাকা ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আসামি মো. আশরাফুল ইসলামকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আশরাফুল ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন এবং তার দেওয়া তথ্যমতে ঘটনার মাস্টারমাইন্ড বিয়ামের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলামকে তার বর্তমান বাসা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার আশরাফুল পিবিআইকে জানান, বিয়ামের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এসএম জাহিদুল ইসলাম তার পূর্ব পরিচিত এবং এলাকার ভাই। জাহিদুল ইসলাম তাকে গত বছরের ৫ আগস্ট ২/৩ মাস আগে ঢাকায় এনে মগবাজার থ্রি-স্টার হোটেলে একটানা ৫/৬ মাস রাখেন। জাহিদুল ইসলামের সূত্র ধরে সে প্রায়ই বিয়াম প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করতো এবং ওই অফিসের কাজে কয়েকজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি হয়। সমিতির মূল নথিপত্র স্থায়ীভাবে ধ্বংসের লক্ষ্যে বিয়ামের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এসএম জাহিদুল ইসলাম আসামি আশরাফুল, অফিস সহায়ক আ. মালেক ও গাড়িচালক ফারুক মিলে পরিকল্পনা করেন।

পিবিআইয়ের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, পরিকল্পনা মোতাবেক কাজ শেষে তাদেরকে ১০/১২ লাখ টাকা দেওয়ার মৌখিক চুক্তি করে। পরিকল্পনা মোতাবেক একদিন জাহিদ আশরাফুলকে কিছু টাকা দিয়ে বিয়ামের পঞ্চম তলার সিসি ক্যামেরা বন্ধ করতে বলেন। জাহিদের দেওয়া টাকায় আশরাফুল মাস্ক, মাস্কিং ক্যাপ, হ্যান্ড গ্লাভস ও ফুল স্লিপ শার্ট কেনেন।

তিনি বলেন, ঘটনার দিন আশরাফুল মাথায় মাস্কিং ক্যাপ, মুখে মাস্ক এবং হ্যান্ড গ্লাভস পরে বিয়াম ভবনের পঞ্চম তলায় উঠে ক্যামেরা বন্ধ করে দেন। ক্যামেরা বন্ধ করার পর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী অফিস সহায়ক মালেক ও ড্রাইভার ফারুক চতুর্থ তলার ৫০৪ নম্বর কক্ষে প্রবেশ করেন। তখন আশরাফুল দরজার পাশে সিঁড়ির কোনায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। ৫০৪ নম্বর কক্ষে প্রবেশ করে গাড়িচালক মালেক বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেন।

আব্দুর রহমান আরও বলেন, আশরাফুল পঞ্চম তলা থেকে তৃতীয় তলা নামতেই বিকট বিস্ফোরণের শব্দ হয়। ঘটনাস্থলেই অফিস সহায়ক মালেক মারা যান। জাহিদ গাড়ি নিয়ে আশরাফুলের সহযোগিতায় গুরুতর আহত অবস্থায় ড্রাইভার ফারুককে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করান। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ড্রাইভার ফারুক মারা গেলে জাহিদ আশরাফুলকে ডেকে নিয়ে ঢাকা ছেড়ে অন্য কোথাও গা-ঢাকা দিয়ে থাকতে বলেন। জাহিদের কথামতো পরদিন রংপুর চলে যান। এই কাজে আশরাফুলকে ১০/১২ লাখ টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও জাহিদ এখন পর্যন্ত তাকে ৬/৭ লাখ টাকা দেন।

গত ২৬ জুলাই বিয়ামের প্রশাসনিক কর্মকর্তা গ্রেফতার জাহিদুল ইসলাম এবং মো. আশরাফুলকে আদালতে সোপর্দ করা হলে তারা ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

বিশেষ পুলিশ সুপার আরও বলেন, দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে তাদের গ্রেফতার করা হয়।