১০:৫৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নারায়ণগঞ্জ এল, এ শাখার সার্ভেয়ার মামুনের দুর্নীতির মহোৎসব

  • আপডেট: ০৮:৫৪:২৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩১ অগাস্ট ২০২৫
  • / ১৮০১৪

মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনির :
দেশের ভূমি অফিসগুলোতে দুর্নীতি যেন নতুন কোনো ঘটনা নয়। তবে সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘিরে যা প্রকাশ পাচ্ছে, তা যেন আগুনে ঘি ঢালার মতো। যেখানে সরকারের পক্ষ থেকে “ডিজিটাল ভূমি সেবা” এবং “দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন” গড়ার কথা বলা হচ্ছে, সেখানে একজন দুর্নীতিবাজ সার্ভেয়ার মো. মামুন হোসেন—তার টাকার দাপটে গোটা প্রশাসনকে পকেটে পুরে ফেলার মতো দৃশ্যপট তৈরি করেছেন। সারাদেশের ভুক্তভোগীরা এখন বলে, “যেখানে জমির কাগজ, সেখানেই মামুনের ভাগ।” এই বাস্তবতা শুধু কথার কথা নয়, এর পেছনে আছে ভয়ংকর সব তথ্য, যেগুলো প্রকাশ্যে আসছে একে একে। বাংলাদেশের ভূমি প্রশাসনে এখন এক ভয়ংকর মনোরম বাঁধন ছিন্ন করে দেওয়া এক ব্যক্তি আটকে রেখেছে পুরো সিস্টেমটাকে তিনি রয়েছেন একাপরাধী, সাম্রাজ্যবাদী ক্ষমতার কেন্দ্রে, ঘুষের সিংহাসন কায়েম করেছেন যার নাম সার্ভেয়ার মো. মামুন হোসেন। তার কাছে সবাই যেন নিঃসস্থ, তিনি একাই সেটাই প্রমাণ করছেন, কারণ তার নিমন্ত্রণে তালিকার প্রথম সারিতে রয়েছে বিভাগীয় কমিশনার, ভূমি মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তারা সবাই যেন তার টাকার কাছে মুখে তালা লাগিয়ে ফেলেছে; কোনো কর্মকর্তা তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করার সাহস করেন না, কারণ তাঁর কাছে সে-সমস্তের রায়, বিচার, বা ক্ষমতাই বিক্রি হয়ে গেছে। মামুনকে দেখে মনে হয়, সে আদতে কোনো প্রতিকূলতা মনে করেন না, ভয় পান না কারো মুখের হাউ, হুমকি, বা শাস্তির কথা শুনে কারণ তার কাছে সবাই খেলনা পুতুল; এক একটি পদরক্ষাকেও সে তার দখলে নিয়েছে, তার টাকার দাপটে সেই অঞ্চলের প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক কাঠামো একে একে তার দৌড়ের পথ, তার নিয়ন্ত্রণশীল অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। ২০১৯ সালে নারায়ণগঞ্জে বদলি হয়ে আসা সার্ভেয়ার মামুন হোসেন আজ এক ভয়ংকর দুর্নীতির আইকন যে ব্যক্তি আদতে সরকারি চুক্তির এক সদস্য, যিনি সাধারণ মানুষের সেবা করতে থাকবেন সে জায়গা থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে এক দুর্নীতির অটল সাম্রাজ্যবাদী হিসেবে, যেখানে সরকারী ভূমিকা এবং নিয়ন্ত্রণ মানে হল তার ভাগ, তার স্বার্থ। যা তাকে বদলি করলেও নির্দিষ্টভাবে নারায়ণগঞ্জ বন্দর উপজেলা এসিল্যান্ড অফিসে তাকে বাধা দিতে পারেনি, বরং নতুন ভূগোলে তাকে আরও বিচরণ করার সুযোগ দিয়েছে। সেখানে সে আবারও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, দুর্নীতির নতুন রথ গড়ে তুলছে যেন এক সময়, একাকার হয়ে উঠেছে সেবাপ্রার্থীদের যে প্রতিষ্ঠানটি থাকা উচিত ছিল জনগণের সেবা, সেখানে এখন ‘জিম্মি’ তৈরি করেছেন এক জন দুর্নীতিবাজ আধিকারিক। জমি অধিগ্রহণ, মহাসড়ক প্রকল্পের প্রসেসিং, নামজারি, শ্রেণি পরিবর্তন সার্বিকভাবে মামুনের সিন্ডিকেট জনগণের পকেট থেকে কোটি কোটি টাকা ঘুষের নামে লুটে নেয়, এবং প্রশাসনিক মহল নিরব। এলএ কেস নম্বর ২১/২০২১-২০২২-এর অধীনে ঢাকা—সিলেট মহাসড়কের প্রশস্তকরন প্রকল্পে বরপা, খাদুন, আধুরিয়া, মাহনা, আড়িয়াবসহ একাধিক মৌজায় জমির প্রকৃত শ্রেণি ভিটি বা নাল ছিল; কিন্তু এই সিন্ডিকেট ষড়যন্ত্রে, যারা টাকা বেশি দিয়েছে, তাদের জমি বানিজ্যিক প্রদর্শন করা হয়; যারা দেয়নি, তাদের জমি থেকে যায় আগের মতো, এইভাবে ঘুষের পরিমাণ অনুযায়ী নির্ধারিত হয় “সরকারি সিদ্ধান্ত” যা প্রকৃতভাবে একটি কাঠামোগত লুটের ব্যবস্থা। এই দুর্নীতির মহাযজ্ঞে পরিকল্পিতভাবে সরকারের সম্পদ অপচয় করা হয়, প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানো হয় প্রায় ৪৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা পর্যন্ত, যার মধ্যে অন্তত ৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা সরাসরি এই সিন্ডিকেট নিয়ে গেছে যা ভুক্তভোগীদের স্বপ্ন ভেঙে দেয়, স্বাভাবিক নাগরিক অধিকার বাতিল করে দেয়। অথচ মামুন সরকারের ১২ তম গ্রেডের একজন কর্মকর্তা, যার মাসিক বেতন সর্বোচ্চ মাত্র ৪০ হাজার টাকা, কিন্তু, তার বিলাস উপভোগের কোনো শেষ নেই; টয়োটা প্রিমিও গাড়ি, পূর্বাচল ও ঝিলমিল এলাকায় জমি, উত্তরা ও মীরহাজারীবাগে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকানাসহ, স্ত্রীর নামে উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরে ফ্ল্যাট, “ইকরা লাইট হাউজ” বায়িং হাউজ, এবং পটুয়াখালীতে বাবার নামে এক কোটি ৫৫ লাখ টাকার জমি—আজ এ সমস্ত দেখে প্রশ্ন ওঠে, এই সম্পদের উৎস কি তার সরকারি বেতন? নিশ্চিন্তভাবে বলা যায় না, কারণ নগদ তা নয় এগুলো একটি প্রণোদিত দুর্নীতির ফল। তাছাড়া দ্রুত লোভ প্রকাশ পায় তার ব্যক্তিগত অফিস থেকেও, যা জেলা প্রশাসকের অফিস সংলগ্ন একটি ফ্ল্যাটে, মাত্র ১৫ হাজার টাকার ভাড়ায় রয়েছে, এবং দিনদিন সেখানে প্রতিদিন দুর্নীতির অঙ্ক প্রক্রিয়ায় মিলছে কোটি কোটি ঘুষের টহল।
তবে একজন প্রমাণিত দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে কি আর কোনো ব্যবস্থা নেই? দেশের নাগরিক হিসেবে, জনগণের সেবা নিশ্চিত হচ্ছে না এই বার্তা নিয়ে ভুক্তভোগী এক ব্যক্তির আপত্তি ভূমি মন্ত্রণালয়ের নজরে আসে। ২০২৫ সালের ৯ এপ্রিল ভূমি মন্ত্রণালয় ডকেট নম্বর ৪০৫৫, স্মারক নম্বর ২০৫৪ জারি করে, বিভাগীয় কমিশনারকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু, পরিবার, প্রশাসন, এবং তার সিন্ডিকেটের টাকার শক্তি সব মিলিয়ে, সেখানে প্রতিবেদন জমা হয়নি। অভিযোগ ওঠে মামুনের টাকার দাপটে, এমনকি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের সহায়তায়, সেই তদন্ত প্রক্রিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে দমিয়ে রাখা হয়েছে। অথচ—জুন মাসের শেষের দিকে তদন্ত কমিটি মাঠ পর্যায়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন জমা দেয়; সেখানে অন্তত ২৫-৩০টি জমির প্রকৃত শ্রেণি পরিবর্তন করে প্রায় ৮০-৯০ কোটি টাকা লেনদেন প্রমাণিত হয়, খাদুন মৌজায় সিটি গ্রুপ, বরপা মৌজায় হাজী মোখলেছুর রহমান, আড়িয়াবে মো. শাহিন ভূইয়া, আধুরিয়া ও মাহনা মৌজায় ভুক্তভোগীরা সবাই একই দাউদাউ করা দাবির সম্মুখীন। অথচ এই প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও মামুন আজও বহাল তবিয়তে—তার অফিসেই থেকে গেছে, এবং যে বদলি পায়, সেটা কোনো শাস্তি নয়; বরং একটা নতুন পালা দুর্নীতি চালানোর সুযোগ মাত্র।
এর প্রায়শই সাড়া দেয় রাজ্য সম্পদ বাঁচাতে হলে শুধু বাল পরিবর্তন নয়, দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে মামলা বা স্থায়ী বরখাস্ত অপরিহার্য শিক্ষা হিসেবে প্রয়োজন। সবিশেষ জনগণ এখন প্রশ্ন করে এভাবে একজন দুর্নীতিবাজ তার টাকার জোরে কীভাবে প্রশাসনকে নিরব করে রেখেছে, এবং এমনকি প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কতিপয়েই তার জিম্মি? এটা কি শুধু দুর্নীতি নয়, পারিপার্শ্বিক প্রশাসন দুর্বল হয়ে যাচ্ছে, দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে? মানুষ সরকারে আস্থা হারাচ্ছে, দেখা যাচ্ছে, সরকারি অফিসে যায়েও সেবা না পেয়ে চলে আসে হতাশায়। যদি তৎপরতা না দেখানো হয়, তবে নারায়ণগঞ্জ ভূমি অধিগ্রহণ শাখার এই দুর্নীতি বীরজয়ী হবে এলাকা থেকে ছড়িয়ে পড়বে সারাদেশে। সামাজিক প্রতিক্রিয়া তীব্র, মানুষ বলতে শুরু করেছে, “আমরা চাই মামুনকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হোক, সম্পদের উৎস তদন্ত করা হোক, আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা করা হোক।”
মামুনের এই ভয়ংকর ক্ষমতা, তার টাকার প্রভাব, এবং প্রশাসনের সহনশীলতা আজ আমাদের জনগণের সেবা ব্যবস্থাকে এক ভয়ানক সংকটের মুখে নিয়ে এসেছে। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা আরেকটাই দুর্নীতি মুক্ত প্রশাসন, যেখানে সেবা তো দূর, প্রতিটি নাগরিক তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে না। আর তাহলেই মানবাধিকার বাঁচবে, দেশের ভাবমূর্তি রক্ষা পাবে। দিনের শেষে প্রশ্ন থেকে যায়—মামুনের মতো এক দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে কেন নীরব প্রশাসন, কেন টাকার দাপটের সামনে সেবা হারালো? এটি কি শুধুই স্থানান্তর না, বরং ক্ষমতার একটি মানসিক দেহরক্ষা?

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

নারায়ণগঞ্জ এল, এ শাখার সার্ভেয়ার মামুনের দুর্নীতির মহোৎসব

আপডেট: ০৮:৫৪:২৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩১ অগাস্ট ২০২৫

মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনির :
দেশের ভূমি অফিসগুলোতে দুর্নীতি যেন নতুন কোনো ঘটনা নয়। তবে সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘিরে যা প্রকাশ পাচ্ছে, তা যেন আগুনে ঘি ঢালার মতো। যেখানে সরকারের পক্ষ থেকে “ডিজিটাল ভূমি সেবা” এবং “দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন” গড়ার কথা বলা হচ্ছে, সেখানে একজন দুর্নীতিবাজ সার্ভেয়ার মো. মামুন হোসেন—তার টাকার দাপটে গোটা প্রশাসনকে পকেটে পুরে ফেলার মতো দৃশ্যপট তৈরি করেছেন। সারাদেশের ভুক্তভোগীরা এখন বলে, “যেখানে জমির কাগজ, সেখানেই মামুনের ভাগ।” এই বাস্তবতা শুধু কথার কথা নয়, এর পেছনে আছে ভয়ংকর সব তথ্য, যেগুলো প্রকাশ্যে আসছে একে একে। বাংলাদেশের ভূমি প্রশাসনে এখন এক ভয়ংকর মনোরম বাঁধন ছিন্ন করে দেওয়া এক ব্যক্তি আটকে রেখেছে পুরো সিস্টেমটাকে তিনি রয়েছেন একাপরাধী, সাম্রাজ্যবাদী ক্ষমতার কেন্দ্রে, ঘুষের সিংহাসন কায়েম করেছেন যার নাম সার্ভেয়ার মো. মামুন হোসেন। তার কাছে সবাই যেন নিঃসস্থ, তিনি একাই সেটাই প্রমাণ করছেন, কারণ তার নিমন্ত্রণে তালিকার প্রথম সারিতে রয়েছে বিভাগীয় কমিশনার, ভূমি মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তারা সবাই যেন তার টাকার কাছে মুখে তালা লাগিয়ে ফেলেছে; কোনো কর্মকর্তা তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করার সাহস করেন না, কারণ তাঁর কাছে সে-সমস্তের রায়, বিচার, বা ক্ষমতাই বিক্রি হয়ে গেছে। মামুনকে দেখে মনে হয়, সে আদতে কোনো প্রতিকূলতা মনে করেন না, ভয় পান না কারো মুখের হাউ, হুমকি, বা শাস্তির কথা শুনে কারণ তার কাছে সবাই খেলনা পুতুল; এক একটি পদরক্ষাকেও সে তার দখলে নিয়েছে, তার টাকার দাপটে সেই অঞ্চলের প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক কাঠামো একে একে তার দৌড়ের পথ, তার নিয়ন্ত্রণশীল অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। ২০১৯ সালে নারায়ণগঞ্জে বদলি হয়ে আসা সার্ভেয়ার মামুন হোসেন আজ এক ভয়ংকর দুর্নীতির আইকন যে ব্যক্তি আদতে সরকারি চুক্তির এক সদস্য, যিনি সাধারণ মানুষের সেবা করতে থাকবেন সে জায়গা থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে এক দুর্নীতির অটল সাম্রাজ্যবাদী হিসেবে, যেখানে সরকারী ভূমিকা এবং নিয়ন্ত্রণ মানে হল তার ভাগ, তার স্বার্থ। যা তাকে বদলি করলেও নির্দিষ্টভাবে নারায়ণগঞ্জ বন্দর উপজেলা এসিল্যান্ড অফিসে তাকে বাধা দিতে পারেনি, বরং নতুন ভূগোলে তাকে আরও বিচরণ করার সুযোগ দিয়েছে। সেখানে সে আবারও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, দুর্নীতির নতুন রথ গড়ে তুলছে যেন এক সময়, একাকার হয়ে উঠেছে সেবাপ্রার্থীদের যে প্রতিষ্ঠানটি থাকা উচিত ছিল জনগণের সেবা, সেখানে এখন ‘জিম্মি’ তৈরি করেছেন এক জন দুর্নীতিবাজ আধিকারিক। জমি অধিগ্রহণ, মহাসড়ক প্রকল্পের প্রসেসিং, নামজারি, শ্রেণি পরিবর্তন সার্বিকভাবে মামুনের সিন্ডিকেট জনগণের পকেট থেকে কোটি কোটি টাকা ঘুষের নামে লুটে নেয়, এবং প্রশাসনিক মহল নিরব। এলএ কেস নম্বর ২১/২০২১-২০২২-এর অধীনে ঢাকা—সিলেট মহাসড়কের প্রশস্তকরন প্রকল্পে বরপা, খাদুন, আধুরিয়া, মাহনা, আড়িয়াবসহ একাধিক মৌজায় জমির প্রকৃত শ্রেণি ভিটি বা নাল ছিল; কিন্তু এই সিন্ডিকেট ষড়যন্ত্রে, যারা টাকা বেশি দিয়েছে, তাদের জমি বানিজ্যিক প্রদর্শন করা হয়; যারা দেয়নি, তাদের জমি থেকে যায় আগের মতো, এইভাবে ঘুষের পরিমাণ অনুযায়ী নির্ধারিত হয় “সরকারি সিদ্ধান্ত” যা প্রকৃতভাবে একটি কাঠামোগত লুটের ব্যবস্থা। এই দুর্নীতির মহাযজ্ঞে পরিকল্পিতভাবে সরকারের সম্পদ অপচয় করা হয়, প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানো হয় প্রায় ৪৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা পর্যন্ত, যার মধ্যে অন্তত ৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা সরাসরি এই সিন্ডিকেট নিয়ে গেছে যা ভুক্তভোগীদের স্বপ্ন ভেঙে দেয়, স্বাভাবিক নাগরিক অধিকার বাতিল করে দেয়। অথচ মামুন সরকারের ১২ তম গ্রেডের একজন কর্মকর্তা, যার মাসিক বেতন সর্বোচ্চ মাত্র ৪০ হাজার টাকা, কিন্তু, তার বিলাস উপভোগের কোনো শেষ নেই; টয়োটা প্রিমিও গাড়ি, পূর্বাচল ও ঝিলমিল এলাকায় জমি, উত্তরা ও মীরহাজারীবাগে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকানাসহ, স্ত্রীর নামে উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরে ফ্ল্যাট, “ইকরা লাইট হাউজ” বায়িং হাউজ, এবং পটুয়াখালীতে বাবার নামে এক কোটি ৫৫ লাখ টাকার জমি—আজ এ সমস্ত দেখে প্রশ্ন ওঠে, এই সম্পদের উৎস কি তার সরকারি বেতন? নিশ্চিন্তভাবে বলা যায় না, কারণ নগদ তা নয় এগুলো একটি প্রণোদিত দুর্নীতির ফল। তাছাড়া দ্রুত লোভ প্রকাশ পায় তার ব্যক্তিগত অফিস থেকেও, যা জেলা প্রশাসকের অফিস সংলগ্ন একটি ফ্ল্যাটে, মাত্র ১৫ হাজার টাকার ভাড়ায় রয়েছে, এবং দিনদিন সেখানে প্রতিদিন দুর্নীতির অঙ্ক প্রক্রিয়ায় মিলছে কোটি কোটি ঘুষের টহল।
তবে একজন প্রমাণিত দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে কি আর কোনো ব্যবস্থা নেই? দেশের নাগরিক হিসেবে, জনগণের সেবা নিশ্চিত হচ্ছে না এই বার্তা নিয়ে ভুক্তভোগী এক ব্যক্তির আপত্তি ভূমি মন্ত্রণালয়ের নজরে আসে। ২০২৫ সালের ৯ এপ্রিল ভূমি মন্ত্রণালয় ডকেট নম্বর ৪০৫৫, স্মারক নম্বর ২০৫৪ জারি করে, বিভাগীয় কমিশনারকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু, পরিবার, প্রশাসন, এবং তার সিন্ডিকেটের টাকার শক্তি সব মিলিয়ে, সেখানে প্রতিবেদন জমা হয়নি। অভিযোগ ওঠে মামুনের টাকার দাপটে, এমনকি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের সহায়তায়, সেই তদন্ত প্রক্রিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে দমিয়ে রাখা হয়েছে। অথচ—জুন মাসের শেষের দিকে তদন্ত কমিটি মাঠ পর্যায়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন জমা দেয়; সেখানে অন্তত ২৫-৩০টি জমির প্রকৃত শ্রেণি পরিবর্তন করে প্রায় ৮০-৯০ কোটি টাকা লেনদেন প্রমাণিত হয়, খাদুন মৌজায় সিটি গ্রুপ, বরপা মৌজায় হাজী মোখলেছুর রহমান, আড়িয়াবে মো. শাহিন ভূইয়া, আধুরিয়া ও মাহনা মৌজায় ভুক্তভোগীরা সবাই একই দাউদাউ করা দাবির সম্মুখীন। অথচ এই প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও মামুন আজও বহাল তবিয়তে—তার অফিসেই থেকে গেছে, এবং যে বদলি পায়, সেটা কোনো শাস্তি নয়; বরং একটা নতুন পালা দুর্নীতি চালানোর সুযোগ মাত্র।
এর প্রায়শই সাড়া দেয় রাজ্য সম্পদ বাঁচাতে হলে শুধু বাল পরিবর্তন নয়, দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে মামলা বা স্থায়ী বরখাস্ত অপরিহার্য শিক্ষা হিসেবে প্রয়োজন। সবিশেষ জনগণ এখন প্রশ্ন করে এভাবে একজন দুর্নীতিবাজ তার টাকার জোরে কীভাবে প্রশাসনকে নিরব করে রেখেছে, এবং এমনকি প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কতিপয়েই তার জিম্মি? এটা কি শুধু দুর্নীতি নয়, পারিপার্শ্বিক প্রশাসন দুর্বল হয়ে যাচ্ছে, দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে? মানুষ সরকারে আস্থা হারাচ্ছে, দেখা যাচ্ছে, সরকারি অফিসে যায়েও সেবা না পেয়ে চলে আসে হতাশায়। যদি তৎপরতা না দেখানো হয়, তবে নারায়ণগঞ্জ ভূমি অধিগ্রহণ শাখার এই দুর্নীতি বীরজয়ী হবে এলাকা থেকে ছড়িয়ে পড়বে সারাদেশে। সামাজিক প্রতিক্রিয়া তীব্র, মানুষ বলতে শুরু করেছে, “আমরা চাই মামুনকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হোক, সম্পদের উৎস তদন্ত করা হোক, আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা করা হোক।”
মামুনের এই ভয়ংকর ক্ষমতা, তার টাকার প্রভাব, এবং প্রশাসনের সহনশীলতা আজ আমাদের জনগণের সেবা ব্যবস্থাকে এক ভয়ানক সংকটের মুখে নিয়ে এসেছে। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা আরেকটাই দুর্নীতি মুক্ত প্রশাসন, যেখানে সেবা তো দূর, প্রতিটি নাগরিক তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে না। আর তাহলেই মানবাধিকার বাঁচবে, দেশের ভাবমূর্তি রক্ষা পাবে। দিনের শেষে প্রশ্ন থেকে যায়—মামুনের মতো এক দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে কেন নীরব প্রশাসন, কেন টাকার দাপটের সামনে সেবা হারালো? এটি কি শুধুই স্থানান্তর না, বরং ক্ষমতার একটি মানসিক দেহরক্ষা?