ক্যান্টনমেন্ট রাজস্ব সার্কেলে দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র, সালাউদ্দিন, ছলিমুল্লাহ ও মিজানুরের নেতৃত্বে চলছে কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্য

- আপডেট: ০৮:৫৭:০৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩১ অগাস্ট ২০২৫
- / ১৮০১৮
নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকার ক্যান্টনমেন্ট রাজস্ব সার্কেলের এসিল্যান্ড অফিস বর্তমানে যেন এক দুর্নীতির দুর্গ। প্রতিদিন শত শত সেবাপ্রার্থী সেখানে সেবা নিতে গেলেও তারা এক চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। সেবা পাওয়ার বদলে অফিসের ভেতরে গড়ে উঠা একটি শক্তিশালী ঘুষ সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। এই চক্রের মূল নেতৃত্বে রয়েছে অফিস সহকারী সালাউদ্দিন নাজিম, নাজির কাম ক্যাশিয়ার ছলিমুল্লাহ ও সার্ভেয়ার মিজানুর রহমান। এদের সঙ্গে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে কথিত ওমেদার পরিচয়ধারী সাইফুল, যার ভূমিকা নিয়েও উঠেছে নানা প্রশ্ন। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন, ক্যান্টনমেন্ট সার্কেলের এই সিন্ডিকেট শুধু সাধারণ সেবাপ্রার্থীই নয়, বরং অফিসের কানুনগো ও এসিল্যান্ড পর্যন্ত তাদের প্রভাবের বাইরে নন। কেউ জমির নামজারি, জমাভাগ, খারিজ কিংবা খতিয়ানের জন্য ফাইল তুলতে গেলে শুরুতেই সেবার নামে ঘুষের নির্ধারিত তালিকা সামনে আসে। ‘ঘুষ না দিলে ফাইল নড়ে না’ এটাই যেন এখনকার নিয়ম। বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, একটি সাধারণ নামজারি ও মিসকেস প্রদানের নামে কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা, এলএ-৩৮ কেসে ৪০ হাজার, খ তালিকায় ৬০ হাজার, ১/১ খতিয়ানে ৮০ হাজার, রিট কেসে দুই লাখ এবং অর্পিত সম্পত্তির কেসে আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ আদায় করা হয়। জমির পরিমাণ বেশি হলে সেই অনুযায়ী ঘুষের অঙ্কও বাড়ে।
এক ভুক্তভোগী জানান, “পৈত্রিক জমির নামজারির জন্য আমি প্রথমে ১৫ হাজার টাকা দিয়েছিলাম। তারপরও কেস বাতিল হয়ে গেল। পরে আবার বলা হয় আরও ৪০ হাজার দিলে ফাইল সচল হবে। সেই একই কাগজ দিয়েই অবশেষে নামজারি অনুমোদন করা হয়। ঘুষ আদায়ে সালাউদ্দিন নাজিম ও ছলিমুল্লাহর ভূমিকা রয়েছে সবচেয়ে বেশি। ছলিমুল্লাহ সরাসরি টাকা লেনদেনের দায়িত্বে থাকেন, আর সালাউদ্দিন সিন্ডিকেটের অপারেশন চালান অফিসের ভেতর থেকে। সার্ভেয়ার মিজানুর রহমান সরাসরি দালালদের সঙ্গে সমন্বয় করে ফাইলের অগ্রগতির জন্য রেট নির্ধারণ করেন। এই তিনজনের ত্রাসে পুরো অফিস কার্যত পরিণত হয়েছে ঘুষ বাণিজ্যের কারখানায়।
সার্কেলের একজন কর্মকর্তা, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অবস্থায় বলেন, “এই চক্রের কাছে শুধু সেবাপ্রার্থী নয়, আমাদের এসি ল্যান্ড, কানুনগো সবাই জিম্মি। আমরা অনেকেই কিছু করতে পারি না, কারণ তারা উপর মহলের সাপোর্টে চলে।
এদের সঙ্গে যুক্ত কথিত ওমেদার এক সময়ের ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সদস্য খ্যাত সাইফুল সরাসরি সেবাপ্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা তুলে নেয়। তাছাড়া এই স্থানীয় ভুমিদস্যু কথিত ওমেদার সাইফুল অফিসে বসেই মাদক সেবন করে থাকেন ও মাদক সংশ্লিষ্ট ব্যবসাও পরিচালনা করেন বলে একাধিক প্রত্যক্ষদর্শি জানান। ফাইল প্রসেসিংয়ের নামে নানা ধাপে ঘুষ আদায় হয়, এবং কাজের রেট ঠিক করে দালালরাই। অফিসে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে দালালদের ঘিরে ধরা, সরাসরি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে যেতে না দেওয়া এখন নিয়মে দাঁড়িয়েছে।
এক সেবাপ্রার্থী বলেন, “অফিসে ঢুকতেই দালালরা চারপাশ ঘিরে ধরে। সরাসরি কিছু করতে দেয় না। বলে, এ রেট না দিলে ফাইল চলবে না। বাধ্য হয়েই টাকা দিতে হয়। আরেকজন বলেন, “আমার জমির ওয়ারিশ সার্টিফিকেট জমা দিয়েও ঘুষ না দেওয়ায় কাজ থেমে ছিল। পরে টাকা দিতেই নকশা মিলিয়ে কাজ করে দিলো। অথচ পাশেই জাল সার্টিফিকেট দিয়ে আরেকজন কাজ করিয়ে নিলো, কারণ সে বেশি ঘুষ দিয়েছে।
দৈনিক সোনালী খবর পত্রিকায় একাধিকবার তাদের দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশিত হলেও চক্রটির আচরণে পরিবর্তন আসেনি। বরং এখন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে তারা। সাংবাদিকরা অনুসন্ধানে গেলে হুমকি দেওয়া হয়, ফাইল গায়েব করে দেওয়ার ভয় দেখানো হয়। এই সিন্ডিকেটের উপর মহলে সুরক্ষা থাকায় প্রশাসনও কার্যত নীরব দর্শকের ভূমিকায়। ক্যান্টনমেন্ট রাজস্ব সার্কেলে এই দুর্নীতির সিন্ডিকেট চক্রের মূল নেতৃত্বে থাকা সালাউদ্দিন নাজিম, ছলিমুল্লাহ ও মিজানুর রহমান আজ ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। সাধারণ মানুষ জমির স্বত্ব বুঝে পেতে গিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে, কেউ কেউ জমি হারিয়েও ফেলেছে। ভূমি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “এই সিন্ডিকেট ভাঙতে হলে জরুরি ভিত্তিতে তদন্ত, ফৌজদারি মামলা এবং টাস্কফোর্স গঠন প্রয়োজন। নয়তো এমন অনিয়ম দ্রুতই দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে। সাধারণ মানুষের দাবি, সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষা ও দুর্নীতিমুক্ত সেবা নিশ্চিত করতে হলে, সালাউদ্দিন, ছলিমুল্লাহ, মিজানুর ও ওমেদার সাইফুলসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।