তুরাগে পরিবারিক কলহের জেরে স্ত্রী হত্যা,স্বামীসহ গ্রেফতার দুই
																
								
							
                                - আপডেট: ০২:৫০:২৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
 - / ১৮০২১
 
নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা
রাজধানীর তুরাগ এলাকায় পরিবারিক কলহের জের ধরে বিথী আক্তার ওরফে বিলকিস (৩৫) নামে এক নারীরকে হত্যার ঘটনায় স্বামীসহ দুইজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তুরাগ থানা পুলিশ।
রবিবার (২১সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মিন্টুরোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সন্মেলনে এসব জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের উত্তরা বিভাগের ডিসি মো.মুহিদুল ইসলাম।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- মো. বাবুল মিয়া (৪৭) ও মো. সম্রাট (২০)।
মো.মুহিদুল ইসলাম বলেন,গত ১৪ সেপ্টেম্বর রাত আনুমানিক সাড়ে ৭টার দিকে বিথী আক্তার নিখোঁজ হন। ভিকটিমের মা মনোয়ারা বেগম ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পরবর্তীতে ১৮ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে তুরাগ থানাধীন রাজউকের ১৭ নম্বর সেক্টরের খেলার মাঠে কাশবনের মধ্যে একজন অজ্ঞাতনামা নারীর মৃতদেহ পাওয়া যায়। ভিকটিমের মা মনোয়ারা বেগম ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পারেন উক্ত মৃতদেহ তুরাগ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিনি তুরাগ থানায় গিয়ে মৃতদেহের ছবি দেখে তার মেয়ে বিথী আক্তারকে সনাক্ত করেন। এ ঘটনায় ভিকটিমের মা মনোয়ারা বেগমের অভিযোগের ভিত্তিতে তুরাগ থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়।
তিনি বলেন,মামলার পর তুরাগ থানা পুলিশ তদন্ত শুরু করে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের অবস্থান সনাক্ত করা হয়। গতকাল শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুর আনুমানিক ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে পল্লবী থানা পুলিশের সহায়তায় মিরপুর ডিওএইচএস এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ভিকটিমের স্বামী বাবুলকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে একই দিন বিকাল আনুমানিক সাড়ে ৫ টার দিকে মিরপুর-১২ কালাপানি এলাকা থেকে সম্রাটকে গ্রেফতার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতরা পরিবারিক কলহের জেরে ধরে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে মর্মে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে বলেও জানান তিনি।
জিজ্ঞাসাবাদে আসামির স্বীকারক্তিমূলক জবানবন্দির কথা জানিয়ে তিনি বলেন,ভুক্তভোগীর স্বামী বাবুল যেটা আমাদেরকে জানিয়েছে সেটি হলো,তাদের মধ্যে প্রায় দীর্ঘ ছয় বছর ধরে এই দাম্পত্য কলহ। কলহের পেছনে বড় কারণ হচ্ছে সে এবং তার স্ত্রী অনেকগুলো টাকা প্রায় ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা মানুষের কাছ থেকে লাভের উপরে গ্রহণ করেছে। এই ইন্টারেস্টের উপরে এবং এই টাকার প্রচুর লোন তাকে ইন্টারেস্ট দিতে হয়। বাবুল চাকরি করে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের ৭০৩ সেন্ট্রাল ওয়ার্কশপে সে কাজ করে। সে মাসে ৩১ হাজার টাকার মত বেতন পায়। এই টাকা দিয়ে তার প্রতি মাসে সুদের টাকা দিতে গিয়ে তাকে হিমসিম খেতে হচ্ছে। এগুলো দিয়ে যখন সে বাসায় যাচ্ছে তার স্ত্রী বলে যে,মানুষ সুদের টাকার জন্য সবসময় আসতেছে। সে শুতে পারে না,খাইতে পারে না। সবসময় যে পাওনাদাররা আসে তার বাসায়। এটা নিয়ে তার স্ত্রী খুব বকাবকি করে এবং এইটা নিয়ে তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ চরম পর্যায়ে। এবং তার সংসার চালাতে গিয়ে তার আরো অভিযোগ রয়েছে তার স্ত্রী যেই টাকা দিয়েছে সে হয়তো তার সে সন্দেহ করে তার ভাইকে বা তার বাসায় দিয়েছে এবং এগুলো নিয়ে তাদের মধ্যে দন্ড চরমে। লাস্ট দু-তিন মাস আগে সে পরিকল্পনা করেছে যে এই হত্যাকাণ্ডে সে তার স্ত্রীকে মেরে ফেলবে। তার সাথে সাঙ্গপাঙ্গসহ চারজন ছিল। সম্রাট আর দুজনের নামও আমাদের কাছে রয়েছে তাদেরকেসহ এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে।
তাকে হত্যা করলে যে সমাধান হবে এটা বাবুল বিবেচনা করলো কিভাবে এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,এই ধরনের কোন সমাধানের বিষয়ে কোন কথা সে বলেনি। সে তো লেবার অল্প শিক্ষিত বা অশিক্ষিত মানুষ। বাবুলের বয়স ৩৫ বছর। এরকম হতে পারে তার এই যে কলহের যে সে হয়তো একমুখী চিন্তা করেছে। আমাদের বলেছে সে তিক্ততার কারণে তার যে পারিবারিক কলহ সে কারণেই সে হত্যা করেছে বলে আমাদের কাছে স্বীকার করেছে। আদালতেও সে সেটা স্বীকার করবে বলে সে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
স্ত্রী হত্যা যারা তার সাথে ছিলো তারা কি ভাড়াটে হিসেবে কাজ করেছ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যে সম্রাট ছিলো তাসে সে এ ঘটনার পর ৫০ থেকে ১ লাখ টাকা দিবে বলে আমাদের কাছে স্বীকার করেছে। এই ঘটনার পরে বিভিন্নভাবে সে সম্রাটকে বলেছে যে সে তো খুব বেশি বেতন পায় না তাই বিভিন্ন সময় তাকে এই টাকা প্রদান করবে।
স্ত্রীকে সে বাসার ভিতরে কৌশল অবলম্বন করে হত্যা করতে পারতো? সে কেনো বাইরে নিয়ে হত্যা করেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,এই ধরনের কোন ইনফরমেশন সে আমাদের দেয়নি। সে যেহেতু আমাদের কাছে স্বীকারক্তি দিয়েছে তাই আমরা সে দিকে বেশি ফোকাস করেছি। তো আমরা যেহেতু হত্যা ঘটনার তদন্তার মধ্যে অগ্রাধিকার দিয়েছে অন্যদিকে আমরা আর গুরুত্ব দেইনি। তার শাশুড়ির কাছ থেকে আমরা আরেকটা তথ্য পেয়েছি সে কিছুটা মাদকাসক্ত ছিল। সবসময় অপসেট থাকতো। মাদকাসক্ত ছিল। আমাদেরও তার কাছে চলাফেরায় মনে হয়েছে এবং তার চেহারা দেখে মনে হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতদের আদালতে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
																			
																		




















