০২:৪২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫

ভুয়া গোয়েন্দা প্রতিবেদনের কারিগর এসপি শিবলী কায়সার: সামসুজ্জামান সামু

  • আপডেট: ০৯:৪৯:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫
  • / ১৮০১৬

নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা

সম্প্রতী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘গোপনীয়’ লেখা কিছু ভুয়া গোয়েন্দা প্রতিবেদন ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা ব্যাক্তি এবং পুলিশের কিছু কর্মকর্তাকে জড়িয়ে তৈরী করা হয়েছে ভুয়া গল্প। এই গোপন প্রতিবদনের পেছনে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া এসপি শিবলী কায়সার বলে অভিযোগ করেছেন রংপুর-৩ আসনে বিএনপি প্রার্থী সামসুজ্জামান সামু। বর্তমানে শিবলী কায়সার সামরিয়ক বরখাস্ত রয়েছেন। এরআগেও তিনি শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বরখাস্ত হয়েছিলেন। সোমবার সন্ধ্যায় সেলফোনে যোগাযোগ করা হলে সামু এমন অভিযোগ করেন।

সামসুজ্জামান সামু বলেন, একজন নারীর কাছে চাঁদাদাবীর ঘটনায় এসপি শিবলী কায়সারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা হয়েছে। এরপর থেকে তিনি নানাভাবে আমার নামে কথা ছড়িয়ে বেড়াচ্ছেন। আমাকে নির্বাচনে জিততে দিবেন না এমন কথাও বলছেন। আবার আমাকে জড়িয়ে ভুয়া গোয়েন্দা প্রতিবেদন তৈরী করে সামাজিক মাধ্যমে ছড়াচ্ছেন। সেখানে বলা হচ্ছে ওবায়দুল কাদের এবং বিপ্লব সরকারকে আমি টাকার বিনিময়ে পালিয়ে যেতে সহযোগীতা করি। এমন কল্পকাহিনী ছড়িয়ে তিনি আমার নির্বাচনী ইমেজ নষ্ট করার চেষ্টা করছেন। একজন সাময়ীক বরখাস্ত হওয়া এসপি কিভাবে এসব কাজ করেন। আমি এসবে ভয় পাই না। আমি একজন রাজনীতিবিদ। কিন্তু সরকারের দায়িত্বশীল ব্যাক্তিদের সম্পৃক্ত করে মিথ্যাচার করছেন শিবলী কায়সার। তার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।

শিবলী কায়সার ২৮ বিসিএস ব্যাচের পুলিশ কর্মকর্তা। সবশেষ রংপুরে কর্মরত থাকা অবস্থায় তার বিরুদ্ধে গুরুত্বর অভিযোগ ওঠে। লিপি ভরসা নামের একজন নারী উদ্যক্তা ব্যবসায়ীর কাছে চাঁদা দাবি করেন। পরে ওই ব্যবসায়ী তার ম্যানেজার পলাশকে থানায় মামলা করতে পাঠান। মামলায় নিজের নাম রয়েছে জেনে শিবলী কায়সার তাকে মারধর করেন। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে সেবা নিতে আসা বাবা ছেলেকে উল্টো থানা হেফাজতে পাঠিয়ে হয়রানির অভিযোগও রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে পুলিশ সদর দফতরের তদন্ত কমিটি শিবলী কায়সারের শৃঙ্খলা ভঙ্গের প্রমাণ পেয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার অভিযোগে গত ১৩ নভেম্বর রংপুরের হারাগাছের ব্যবসায়ী লিপি খান ভরসার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। মামলার পর রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বারের পরিচালক অমিত বণিকের মাধ্যমে লিপি খানের কাছে ১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগ ওঠে পুলিশ কর্মকর্তা শিবলী কায়সারের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে ১১ মার্চ পুলিশ সদর দপ্তরে শিবলী কায়সারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন লিপি খান। অভিযোগের সঙ্গে অমিত বণিকের সঙ্গে ঘুষ দাবির কথোপকথনের কয়েকটি অডিও রেকর্ড জমা দেন লিপি খান। বিষয়টি সার্বিক তদন্ত করে শিবলী কায়সারের শৃঙ্খলা ভঙ্গে প্রমাণ পাওয়া গেছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরে বলা হয়, গত ১১ মার্চ পুলিশ সদর দপ্তরে শিবলী কায়সারের বিরুদ্ধে ১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগ করেন রংপুরের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী করিম উদ্দীন ভরসার পুত্রবধূ লিপি খান ভরসা। এর দুদিন পর লিপির পক্ষে তার প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তা রংপুর কোতয়ালী থানায় শিবলী কায়সারের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করতে এলে তাকে ডিসি শিবলী মারধর করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এরমধ্যে ১৬ মার্চ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময়কার একটি মামলায় লিপিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সাময়িক বরখাস্তের আদেশে বলা হয়, ‘বেসামরিক ব্যক্তির প্রতি তার এমন উগ্র আচরণ ও আক্রোশ থাকায় এবং তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চলমান থাকায় তিনি কর্মরত থাকলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।’

এর আগে, রংপুরে হিন্দু জাগরণ মঞ্চের মিছিল থেকে জাহাজ কোম্পানি মোড়ে হামলায় গুরুতর আহত জিয়া মঞ্চের নেতা লুসার আহমেদ ব্যবসায়ী অমিত বণিককে আসামি করে মামলা করলে শিবলী কায়সার নিজে থানায় উপস্থিত হয়ে তার নাম কেটে দেন। এ সময় এক বিএনপি নেতা আপত্তি করলে উল্টো তাকে মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন শিবলী কায়সার।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে এসপি শিবলী কায়সারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, এসব অভিযোগ উদ্দেশ্য প্রণোদিত। এসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। আমি আইনানুগ ভাবে পরবর্তী পদক্ষেপ অনুসরণ করবো।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

ভুয়া গোয়েন্দা প্রতিবেদনের কারিগর এসপি শিবলী কায়সার: সামসুজ্জামান সামু

আপডেট: ০৯:৪৯:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা

সম্প্রতী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘গোপনীয়’ লেখা কিছু ভুয়া গোয়েন্দা প্রতিবেদন ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা ব্যাক্তি এবং পুলিশের কিছু কর্মকর্তাকে জড়িয়ে তৈরী করা হয়েছে ভুয়া গল্প। এই গোপন প্রতিবদনের পেছনে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া এসপি শিবলী কায়সার বলে অভিযোগ করেছেন রংপুর-৩ আসনে বিএনপি প্রার্থী সামসুজ্জামান সামু। বর্তমানে শিবলী কায়সার সামরিয়ক বরখাস্ত রয়েছেন। এরআগেও তিনি শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বরখাস্ত হয়েছিলেন। সোমবার সন্ধ্যায় সেলফোনে যোগাযোগ করা হলে সামু এমন অভিযোগ করেন।

সামসুজ্জামান সামু বলেন, একজন নারীর কাছে চাঁদাদাবীর ঘটনায় এসপি শিবলী কায়সারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা হয়েছে। এরপর থেকে তিনি নানাভাবে আমার নামে কথা ছড়িয়ে বেড়াচ্ছেন। আমাকে নির্বাচনে জিততে দিবেন না এমন কথাও বলছেন। আবার আমাকে জড়িয়ে ভুয়া গোয়েন্দা প্রতিবেদন তৈরী করে সামাজিক মাধ্যমে ছড়াচ্ছেন। সেখানে বলা হচ্ছে ওবায়দুল কাদের এবং বিপ্লব সরকারকে আমি টাকার বিনিময়ে পালিয়ে যেতে সহযোগীতা করি। এমন কল্পকাহিনী ছড়িয়ে তিনি আমার নির্বাচনী ইমেজ নষ্ট করার চেষ্টা করছেন। একজন সাময়ীক বরখাস্ত হওয়া এসপি কিভাবে এসব কাজ করেন। আমি এসবে ভয় পাই না। আমি একজন রাজনীতিবিদ। কিন্তু সরকারের দায়িত্বশীল ব্যাক্তিদের সম্পৃক্ত করে মিথ্যাচার করছেন শিবলী কায়সার। তার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।

শিবলী কায়সার ২৮ বিসিএস ব্যাচের পুলিশ কর্মকর্তা। সবশেষ রংপুরে কর্মরত থাকা অবস্থায় তার বিরুদ্ধে গুরুত্বর অভিযোগ ওঠে। লিপি ভরসা নামের একজন নারী উদ্যক্তা ব্যবসায়ীর কাছে চাঁদা দাবি করেন। পরে ওই ব্যবসায়ী তার ম্যানেজার পলাশকে থানায় মামলা করতে পাঠান। মামলায় নিজের নাম রয়েছে জেনে শিবলী কায়সার তাকে মারধর করেন। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে সেবা নিতে আসা বাবা ছেলেকে উল্টো থানা হেফাজতে পাঠিয়ে হয়রানির অভিযোগও রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে পুলিশ সদর দফতরের তদন্ত কমিটি শিবলী কায়সারের শৃঙ্খলা ভঙ্গের প্রমাণ পেয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার অভিযোগে গত ১৩ নভেম্বর রংপুরের হারাগাছের ব্যবসায়ী লিপি খান ভরসার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। মামলার পর রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বারের পরিচালক অমিত বণিকের মাধ্যমে লিপি খানের কাছে ১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগ ওঠে পুলিশ কর্মকর্তা শিবলী কায়সারের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে ১১ মার্চ পুলিশ সদর দপ্তরে শিবলী কায়সারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন লিপি খান। অভিযোগের সঙ্গে অমিত বণিকের সঙ্গে ঘুষ দাবির কথোপকথনের কয়েকটি অডিও রেকর্ড জমা দেন লিপি খান। বিষয়টি সার্বিক তদন্ত করে শিবলী কায়সারের শৃঙ্খলা ভঙ্গে প্রমাণ পাওয়া গেছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরে বলা হয়, গত ১১ মার্চ পুলিশ সদর দপ্তরে শিবলী কায়সারের বিরুদ্ধে ১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগ করেন রংপুরের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী করিম উদ্দীন ভরসার পুত্রবধূ লিপি খান ভরসা। এর দুদিন পর লিপির পক্ষে তার প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তা রংপুর কোতয়ালী থানায় শিবলী কায়সারের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করতে এলে তাকে ডিসি শিবলী মারধর করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এরমধ্যে ১৬ মার্চ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময়কার একটি মামলায় লিপিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সাময়িক বরখাস্তের আদেশে বলা হয়, ‘বেসামরিক ব্যক্তির প্রতি তার এমন উগ্র আচরণ ও আক্রোশ থাকায় এবং তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চলমান থাকায় তিনি কর্মরত থাকলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।’

এর আগে, রংপুরে হিন্দু জাগরণ মঞ্চের মিছিল থেকে জাহাজ কোম্পানি মোড়ে হামলায় গুরুতর আহত জিয়া মঞ্চের নেতা লুসার আহমেদ ব্যবসায়ী অমিত বণিককে আসামি করে মামলা করলে শিবলী কায়সার নিজে থানায় উপস্থিত হয়ে তার নাম কেটে দেন। এ সময় এক বিএনপি নেতা আপত্তি করলে উল্টো তাকে মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন শিবলী কায়সার।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে এসপি শিবলী কায়সারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, এসব অভিযোগ উদ্দেশ্য প্রণোদিত। এসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। আমি আইনানুগ ভাবে পরবর্তী পদক্ষেপ অনুসরণ করবো।