এসিল্যান্ডকে জিম্মি করে রায় আদায়, প্রশাসনের ইতিহাসে কালো অধ্যায়, নেপথ্যে নাজিম-শিপন-আসিফ-ছলিমুল্লাহ গং

- আপডেট: ০৯:১৪:৫৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ১৮০১৩
মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনির :
ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট রাজস্ব সার্কেল আজ আর জনগণের সেবার স্থান নয় বরং এটি পরিণত হয়েছে দুর্নীতির দুর্গে, ঘুষের সাম্রাজ্যে, দালালদের আখড়ায় এবং ভূমি দস্যুদের এক ভয়ংকর মাফিয়া ঘাঁটিতে যেখানে সেবা পাওয়ার আগে সাধারণ মানুষকে ঘুষের প্রাচীর ভাঙতে হয় আর সেই প্রাচীর রচনা করেছে ঘুষের লেনদেনের প্রধান কারিগর অফিস সহকারী সালাউদ্দিন নাজিম, তার সহযোগী শিপন ও আসিফ। তাদের রক্ষাকবচ হিসেবে পরিচিত ডিসি অফিসের মাহমুদ, যিনি নিজেকে জেলা প্রশাসকের ভাই পরিচয় দিয়ে নিয়মিত মাসোহারা নেন এবং এই চক্রকে অদৃশ্য ছায়ায় রক্ষা করেন। এই দুর্নীতির চক্রে আরও যুক্ত হয়েছে কথিত মহিলা বিএনপি নেত্রী কাজল রেখা যিনি নিজেকে বিএনপির হাইকমান্ড দাবি করে থাকেন, তার নেতৃত্বে স্থানীয় ভূমি দস্যুরাও সিন্ডিকেটে শরিক হয়ে ক্যান্টনমেন্ট সার্কেলকে রাষ্ট্রের ভেতরে রাষ্ট্রে রূপ দিয়েছে, আর এই ভয়ংকর চক্রের প্রমাণ মিলল গতকাল, যখন এসিল্যান্ডের শেষ কর্মদিবসে অফিসজুড়ে সৃষ্টি হয় এক নজিরবিহীন কালো নাটক। পরিকল্পিতভাবে নাজিম, শিপন, আসিফ, ছলিমুল্লাহ, ঝাড়ুদার জুয়েল, কথিত বিএনপি নেত্রী কাজল রেখা এবং আরও ২০-২৫ জন দুর্বৃত্ত মব নিয়ে অফিসে প্রবেশ করে। তারা একসাথে কক্ষে প্রবেশ করে প্রথমেই সুকৌশলে টাঙিয়ে দেয় শেখ মুজিবুর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ছবি। এরপর এসিল্যান্ডকে ঘিরে ধরে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে রাজনৈতিক ট্যাগ লাগায়। চারপাশে সৃষ্টি হয় এক ভয়ংকর মব। তারা একসাথে চিৎকার করে ভয়ভীতি দেখায় এমনকি শারীরিক হুমকিও দেয়, উদ্দেশ্য ছিল স্পষ্ট বিশেষভাবে মিসকেস নং-১৫৮/২৫ (উত্তরখান) রায় জোরপূর্বক আদায় করা। আর এই মবের চাপের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ে এসিল্যান্ড। এছাড়া তারা ঝাড়ুদার জয়নালের নিয়োগ আদেশ (স্মারক নং-৩১.৩০.২৬০৮.০০১.৩১.০০১.২৪-১৩১৩, তারিখ ৭ নভেম্বর ২০২৪ ইং) বাতিল করে দেয়, আইনগতভাবে বৈধ এই নিয়োগও এক ঝটকায় বাতিল হয়ে যায়, এবং সাধারণ মানুষ দেখেন একজন সরকারি কর্মকর্তার ক্ষমতাকেও তারা প্রকাশ্যে জিম্মি করে রাখে। এটি স্পষ্ট করে যে এখানে সরকারি নিয়মানুবর্তিতা নেই, আছে শুধু দুর্নীতি, ঘুষ, দালাল এবং মাফিয়া চক্রের অপ্রতিরোধ্য শাসন। মব সৃষ্টিকারীদের চেহারা স্পষ্টভাবে অত্র সার্কেলের সিসিটিভি ক্যামেরার ধারনকৃত ফুটেজে সংরক্ষিত রয়েছে। যা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনে যথার্থ উপযোগী বলে সচেতনমহল মনে করেন। বছরের পর বছর ধরে নাজিম-শিপন-আসিফ-ছলিমুল্লাহ গংরা এই চক্র চালিয়ে আসছে। সাধারণ নামজারি করতে হয় ১০ হাজার টাকা, এলএ-৩৮ কেসে ৪০ হাজার, খতিয়ান সংশোধন বা খ তালিকায় ৬০ হাজার, আর রিট কেসে দুই লাখ পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়, অফিসে ঢুকেই দালালরা ফাইল হাতে নেওয়ার আগে ঘুষের তালিকা ধরিয়ে দেয়। টাকা না দিলে ফাইল গায়েব, বেশি দিলে মুহূর্তে সমাধান, এক অফিসে একজনের ফাইল আটকে থাকলেও অন্যজনের বেশি ঘুষ দিয়ে কাজ হয় যেন এটি সরকারি অফিস নয় বরং এক নিলামঘর। ঘুষ লেনদেনের সরাসরি নিয়ন্ত্রক হল ছলিমুল্লাহ, তার টেবিল থেকেই টাকা ওঠানো হয়, অপারেশনাল হেড নাজিম কর্মকর্তাদের সঙ্গে বোঝাপড়া করে সিন্ডিকেট চালায়, তাদের ক্ষমতার উৎস ডিসি অফিসের মাহমুদ, যিনি নিজেকে জেলা প্রশাসকের ভাই পরিচয় দিয়ে মাসোহারা নিয়ে তাদের রক্ষা করেন। এজন্য প্রশাসনের ভেতর কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। অফিসের ভেতরে প্রতিদিন সাধারণ মানুষ ফাইল নিতে এলে সরাসরি কর্মকর্তার কাছে যেতে দেওয়া হয় না। দালালরা ঘিরে ধরে, নানা অজুহাতে ঘুষ দাবি করে। না দিলে ফাইল আটকে রাখে, কখনো হুমকি, কখনো কাগজ গায়েবের ভয় দেখায়, এতে সাধারণ মানুষ সম্পূর্ণ জিম্মি। এসিল্যান্ডও অসহায়, সাংবাদিকরা অনুসন্ধানে গেলে হুমকি ক্যামেরা ভাঙার ভয় ফাইল গায়েবের ভয়, প্রতিবেদন প্রকাশে বাধা। বারবার গণমাধ্যমে প্রতিবেদন হলেও প্রশাসন কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি বরং প্রতিবার রক্ষা পেয়েছে কারণ প্রভাবশালী মহল তাদের টিকিয়ে রেখেছে। জনগণ ক্ষুব্ধ বলছে এই চক্র শুধু ঘুষ খায়নি সরকারি প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে, প্রশাসনের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। দেশের আইনের প্রতি মানুষের বিশ্বাস ভেঙেছে। এখন প্রশ্ন একটাই প্রশাসন কি সত্যিই চাইলে এই সিন্ডিকেট ভাঙতে পারবে? নাজিম, শিপন, আসিফ, ছলিমুল্লাহ, মাহমুদ, কথিত মহিলা বিএনপি নেত্রী কাজল রেখা, ঝাড়ুদার জুয়েল এবং স্থানীয় ভূমি দস্যুদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, না হলে ক্যান্টনমেন্ট সার্কেলের মতো আরও অফিস দুর্নীতির দুর্গে পরিণত হবে। যেখানে জনগণ অসহায় দাস আর দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট সর্বশক্তিমান শাসক। রাষ্ট্রের ভেতরে রাষ্ট্র গড়ে উঠবে, প্রশাসনিক কাঠামো ধ্বংস হবে এবং ঘুষই নতুন সংবিধান হবে। এই ঘুষ বাণিজ্যের মাফিয়া সিন্ডিকেট ও মবসৃষ্টিকারী প্রত্যেকের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ি বিচার ও শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিতের দাবী জানান সচেতনমহল।