শয়তানের নিঃশ্বাস ব্যবহার করে চার বছরের শিশু অপহরণ,আড়াই লাখে বিক্রির পরিকল্পনা, অতঃপর
- আপডেট: ০২:১৯:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫
- / ১৮০০৬
নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা
রাজধানীর পল্লবী এলাকা থেকে শয়তানের নিঃশ্বাস হিসেবে পরিচিত একটি নেশা জাতীয় দ্রব্যের ব্যবহার করে অপহরণ করা হয় চার বছরের কণ্যা শিশু তানহা পাখিকে।
মূলত শিশুকে দত্তক নেওয়া পরিবারের কাছে বিক্রির উদ্দেশ্যে অপহরণ করা হলেও চক্রের অন্য সদস্য শিশুটিকে উদ্ধারের নামে জ্বীনের বাদশা পরিচয়ে যোগাযোগ করে শিশুটির পরিবারের সঙ্গে। এরপর বিশ্বাস অর্জনে শিশুটির শারীরিক গঠনের বর্ননা দিয়ে উদ্ধারের নামে বিকাশের মাধ্যমে কয়েক ধাপে অর্থ হাতিয়ে নেয় হয় বলে জানিয়েছেন র্যাব-৪ এর কোম্পানি কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো.আমিনুর রহমান।
এ ঘটনায় প্রধান আসামিসহ ঘটনায় জড়িত ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
বৃহস্পতিবার (৩০অক্টোবর) রাজধানীর মিরপুর ১ নম্বরে অবস্থিত র্যাব-৪ ব্যাটালিয়ন কার্যালয়ে আয়োজিত ‘কথিত শয়তানের নিঃশ্বাস ব্যবহার করে ৪ বছরের শিশু কন্যা অপহরণ,মুক্তিপণ ও বিক্রয় চক্রের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার’ সংক্রান্ত এক সংবাদ সন্মেলনে এসব জানান তিনি।
গ্রেফতারকৃত আসমিরা হলো- স্বপন সর্দার (৪১),তার দ্বিতীয় স্ত্রী মোছা.বিউটি বেগম (৪০) এবং প্রথম স্ত্রী নার্গিস বেগম (৩০)।
মো.আমিনুর রহমান বলেন,র্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল গতকাল (২৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় কেরানীগঞ্জ থানাধীন চড়াইল এলাকার একটি বাসায় অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে পল্লবী থানাধীন চাঁদনী বিউটি পার্লারের সামনে থেকে অপহরণকৃত ৪ বছর বয়সী কন্যা শিশু তানহা পাখিকে উদ্ধার করে অপহরণকারীর মূলহোতাসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করে।
তিনি বলেন,ভুক্তভোগী শিশুটির মা বিগত ৩ বছর আগে মারা যায়। বাবা ও দাদা-দাদীর সাথে পল্লবী থানাধীন সেকশন-১১ এলাকার একটি বাসায় বসবাস করে আসছিল শিশুটি। পরে গত (২৩ অক্টোবর) শিশুটি সকলের অগোচরে বাসার সামনে থেকে নিখোঁজ হয়। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। ভুক্তভোগী পরিবার শিশুটিকে খুঁজে না পেয়ে পল্লবী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। ঘটনার পরপরই পুলিশের পাশাপাশি র্যাব-৪ এর স্পেশাল কোম্পানী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ভুক্তভোগী শিশুর নিখোঁজের রহস্য উদঘাটনে ছায়াতদন্ত শুরু করে। বিভিন্ন সিসি ক্যামেরা ফুটেজ পর্যালোচনা করে তথ্য প্রযুক্তির ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বিষয়টি একটি অপহরণ ঘটনা হিসেবে পরিলক্ষিত হয়। পরে গতকাল (২৯ অক্টোবর) পল্লবী থানাধীন রংধনু কনভেনশন সেন্টারের সামনে অভিযান পরিচালনা করে অপহরণকারীর মূলহোতা স্বপন সর্দার (৪১)’কে র্যাব হেফাজতে নেওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে সে স্বীকার করে অপহরণকৃত শিশুটিকে সে কথিত শয়তানের নিঃশ্বাস ব্যবহার করে তার নিজ আয়ত্বে নিয়ে মিরপুর-১২’তে ২য় স্ত্রী মোছা.বিউটি বেগম (৪০) এর বাসায় নিয়ে রেখেছে। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সেই বাসায় অভিযান পরিচালনা করে তার ২য় স্ত্রীকেও র্যাব হেফাজতে নেওয়া হয়। পরে জিজ্ঞাবাদে তারা স্বীকার করে কেরানীগঞ্জ থানাধীন চড়াইল এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় স্বপন সর্দার এর প্রথম স্ত্রীর কাছে অপহৃত শিশুকে আটক করে রাখা হয়েছে।
পরবর্তীতে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান পরিচালনা করে অপহৃত ৪ বছর বয়সী কন্যা শিশুটি’কে উদ্ধার এবং তার প্রথম স্ত্রী নার্গিস বেগম (৩০)’কে র্যাব হেফাজতে নেওয়া হয়।
জিজ্ঞাবাদের তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন,তারা (আসামিরা) ঢাকা মহানগীর বিভিন্ন স্থান হতে শিশু অপহরণকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য। শিশুটিকে তারা কোন এক নিঃস্তান দম্পত্তির কাছে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রি করবে বলে জানায়।
জ্বীনের বাদশা পরিচয়ে উদ্ধারের নামে প্রতারণার বিষয়ে তিনি বলেন,অজ্ঞাত ফোন নম্বর থেকে জ্বীনের বাদশা পরিচয় দিয়ে অপহৃত শিশুর শারীরিক গঠনের বর্ননা দিয়ে বিশ্বাস অর্জন করে ভুক্তভোগীর বাবার নিকট। এরপর উদ্ধারের নাম করে বিভিন্ন সময়ে বিকাশের মাধ্যমে বেশ কয়েক হাজার টাকাও হাতিয়ে নেয় এই চক্রটি।
সিসিটিভির বর্ননা দিয়ে শয়তানের নিঃশ্বাস ব্যবহারের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন,আমরা ফুটেজ বিশ্লেষণে দেখতে পারি অপহরনকারী তার হাতে কিছু একটা লাগিয়ে সেই হাতটা শিশুটি নাকের কাছে নিয়ে যায়। এরপর থেকে শিশুটিকে তারা যেভাবে যা বলে সে তাই শোনে। এমনকি স্বাভাবিকভাবে স্বাচ্ছন্দ্যে শিশুটি অপহরণকারীর সঙ্গে চলে যায়।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।





















