গাজীপুর বিআরটিএ, অফিসের কম্পিউটারও দালালের দখলে

- আপডেট: ১১:১০:১৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫
- / ১১
নিজস্ব প্রতিবেদক;
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) গাজীপুর কার্যালয় পরিণত হয়েছে দালালের আখড়ায়। তাঁদের তৎপরতা দেখে মনে হবে, তাঁরা যেন এই কার্যালয়ে চাকরি করেন। আর তাঁদের ও কার্যালয়ের অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীর কারণে পদে পদে ভোগান্তিতে পড়ছেন সেবা নিতে আসা গ্রাহকেরা। এই অনিয়মের চিত্র দীর্ঘদিনের হলেও কর্তৃপক্ষ রয়েছে নীরব ভূমিকায়।
গাজীপুর বিআরটিএ অফিসে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে পাঁচ জন। এর মধ্যে দালাল সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন কম্পিউটার অপারেটর শাহ্ আলম। ২০২৩ সালের ২১ নভেম্বর তিনি গাজীপুরে যোগদান করেন। আর এরপরই তিনি দায়িত্ব নিয়ে নেন দালাল নিয়ন্ত্রণের। নিয়ম অনুযায়ী শাহ্ আলমের কাজ কম্পিউটারে হলেও তিনি কাজ করান সাজ্জাদ সুমন নামে এক দালালের মাধ্যমে। অফিস না করে তিনি নিয়ন্ত্রণ করে ড্রাইভিং লাইসেন্স বোর্ড। প্রতিটি ড্রাইভিং পরীক্ষার দিন সকালে দালাল রুহুল ও লিমনের মাধ্যমে সকল দালালের লার্নার কর্ডের রোল ওয়ার্টস অ্যাপ এর মাধ্যমে বুজে নেন শাহ আলম। এরপর সেই মার্ক করা ব্যাক্তিরা খাতায় কিছু না লিখলেও পাশ করিয়ে দেন শাহ আলম। দিনশেষে হিসেব করে দালাল শান্তর কাছ থেকে লার্নার প্রতি দুই হাজার টাকা বুজে নেন তিনি। অনেকটা এককভাবে গাজীপুর বিআরটিএ নিয়ন্ত্রণ করেন উচ্চমান সহকারী শাহ আলম। দালালদের যেন সরকারি অফিসে বৈধ লাইসেন্স দিয়ে দিয়েছেন তিনি।
গত রোববার সকালে গাজীপুর বিআরটিএ অফিসের সার্ভার রুমে গিয়ে দেখা যায় সরকারি কম্পিউটারে বসে কাজ করছেন দালাল সাজ্জাদ। সাংবাদিকের উপস্থিতিতে দালাল তখন দৌড়ে পালিয়ে যান। সেসময় দালালের ব্যাবহৃত কম্পিউটারে দেখা যায় ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদনের ফাইল যাচাই-বাছাইয়ের উচ্চমান সহকারী শাহ আলমের নির্ধারিত প্যানেল ওপেন করা। এছাড়াও সরকারি কম্পিউটারে দালাল সাজ্জাদের পার্সোনাল ওয়ার্টস অ্যাপ লগইন করা। ওয়ার্টস অ্যাপে দেখা যায় দালাল সাজ্জাদ সুমনের নিয়মিত কথা হয় উচ্চমান সহকারী শাহ্ আলমের সাথে। এছাড়াও গাজীপুর বিআরটিএর আলোচিত দালাল লিমন ও রুহুলের সাথেও নিয়মিত কথোপকথনের আলামত রয়েছে।
দালাল সাজ্জাদ সুমনের সাথে শাহ্ আলমের অন্য একটি ভিডিও রয়েছে এই প্রতিবেদকের কাছে। সেখানে দেখা গাজীপুর বিআরটিএ অফিসের অফিসকক্ষে দালাল সাজ্জাদের সাথে একত্রে কাজ করছেন শাহ আলম।
তার এসব অপকর্মের সহযোগীতা করেন অফিস প্রধান সহকারী পরিচালক আবদুল আল মামুন।
বিআরটিএ সূত্রে জানা যায়, প্রতিমাসে নতুন এবং নবায়ন মিলে গড়ে ১৭/১৮ টি ড্রাইভিং পরীক্ষার বোর্ড হয়ে থাকে। এরমাধ্যমে প্রায় দুই হাজারেরও বেশি লাইসেন্স প্রধান করা হয়ে থাকে। এরথেকে গড়ে দালালের মাধ্যমে দেড় হাজারেরও বেশি লাইসেন্স প্রধান করার মাধ্যমে মাসে ত্রিশ লাখেরও বেশি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তারা।
এর আগে গত মাসে দেখা যায় রাত এগারোটায় আলোচিত দালাল রুহুলকে নিয়ে অফিস করছেন শাহ আলম ও সহকারী পরিচালক আবদুল আল মামুন। সূত্র জানায়, পরীক্ষা শেষে রাতে ঘুষের টাকা ভাগাভাগি করতেই এত রাতে অফিস করেন তারা। তবে গাজীপুর বিআরটিএর এতসব দুর্নীতি ও গ্রাহক হয়রানি নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলেও কোন ব্যাবস্থা নেয়নি কতৃপক্ষ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গাজীপুর বিআরটিএর এক কর্মচারী বলেন,ঘুষের টাকার একটি ভাগ শাহ আলম এবং সহকারী পরিচালকের মাধ্যমে ঢাকা বিআরটিএ প্রধান কার্যালয়ে পৌঁছে দেওয়া হয়। এর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনা।
সচেতন মহল বলছে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় গাজীপুর বিআরটিএ অফিসে তারা বেপরোয়া হয়ে গিয়েছেন। তাইতো কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই গ্রাহক হয়রানি করে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা।
অভিযোগের বিষয়ে উচ্চমান সহকারী শাহ আলম বলেন,দালাল সাজ্জাদ সুমনের সাথে ছবিটি বেশ কিছুদিন আগের।এছাড়াও প্রতিবেদনটি না করার জন্য তিনি নানাভাবে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন।
গাজীপুর বিআরটিএ এর সহকারী পরিচালক আবদুল আল মামুন বলেন,আমি এখান থেকে চলে যাওয়ার চেষ্টা করছি কিন্তু কতৃপক্ষ বদলি করছে না।
এ বিষয়ে বিআরটিএ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সাড়া দেননি।