এলজিইডি’র প্রকল্প পরিচালক আবদুল বারেক ও হিসাব রক্ষক মানিক লাল এর বিরুদ্ধে সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ

- আপডেট: ০৯:৫৫:২৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫
- / ০
বিশেষ প্রতিনিধি:
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডি’তে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ নিয়ে নানা অনিয়ম ও দলীয়করণের অভিযোগ রয়েছে। এসব প্রকল্প পরিচালকের মধ্যে বেশিরভাগই আওয়ামী মতাদর্শের। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকারের পতনের পর সরকারের বিভিন্ন সেক্টরে রদ-বদল হলেও আওয়ামী সুবিধাভোগী এসব প্রকল্প পরিচালক এখনো স্বপদে বহাল রয়েছে। তাদের সহযোগিতা করছে জুলাই-আগস্টে আ’লীগ সরকারের পক্ষে রাস্তায় মিছিলে অংশ নেওয়া অধিদপ্তরের এক শ্রেণির কর্মকর্তা ও কর্মচারী। এলজিইডি’র আওতায় ৬০২ মিলিয়ন ডলার (৬ হাজার ৩শ কোটি টাকা প্রায়) বাজেটের নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প আইইউজিআইপি এর প্রকল্প পরিচালক হিসেবে তৎকালীন গাজীপুর জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল বারেককে নিয়োগ দেয় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। মন্ত্রী তাজুল ইসলামকে ৫ কোটি টাকা উৎকোচ দিয়ে হন প্রকল্প পরিচালক। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এলজিইডি’র তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী শেখ মোহাম্মদ মহসিনের বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠানো অভিযোগ পত্রেও উঠে আসে প্রকল্প পরিচালক আব্দুল বারেকের নাম। অভিযোগে বলা হয়, অধিদপ্তরের বিভিন্ন প্রকল্পে প্রকল্প পরিচালক পদে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নিয়োগ না দিয়ে জুনিয়র প্রকৌশলীদের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন পৌরসভার জন্য বরাদ্দকৃত কাজের প্রাক্কলন ও দরপত্র অনুমোদন এবং বিল প্রদানের সময় ২-৫ শতাংশ কমিশন আদায় করা হয় সংশ্লিষ্ট পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারের কাছ থেকে। এ কাজ পিডি আব্দুল বারেক নিজে না করে হিসাব শাখার কর্মরত হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মাণিক লাল কুন্ডের মাধ্যমে আদায় করেন। একাজে তাকে সহায়তা করে হিসাব রক্ষক মোঃ রিয়াজ উদ্দিন, হিসাব রক্ষক মোঃ আরিফুল আক্তার টুটুল ও এলকেএসএস এর হিসাব রক্ষক মতিন। প্রকল্পের আওতায় দরপত্র প্রক্রিয়াতেও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আতাতের মাধ্যমে এসব টেন্ডার নির্দিষ্ট ঠিকাদারকে পাইয়ে দেন তিনি। এ প্রকল্পের আওতায় যশোরের কেশবপুর পৌরসভার ৫ টি দরপত্রের সবগুলো কাজ পান মোজেহার এন্টারপ্রাইজ প্রাইভেট ও জেভি বনান্তর ট্রেডিং লিমিটেড নামের একই মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এছাড়া আলমডাঙ্গা, গাংনীসহ এ প্রকল্পের আওতায় অন্যান্য পৌরসভাগুলোতেও একই চিত্র। গাজীপুর জেলার এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী থাকা কালীন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কাজ না করে কোটি কোটি টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছে আবদুল বারেক চক্র এমন অভিযোগ বিস্তর। গাজীপুর থাকাকালীন শত শত কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন তার স্ত্রীর মাধ্যমে এছাড়াও তার বর্তমান প্রকল্পের হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মানিক লাল কুন্ড ও তার স্ত্রী স্বপ্না কুন্ড কোটি কোটি টাকা গত ষোল বছরে ভারত সহ বিভিন্ন দেশে পাচার করেছে। আব্দুল বারেক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে একটি গাড়ী ঘুষ গ্রহন করেছেন যার নং- ঢাকা মেট্রো গ- ২২-৩৪১৯। গাড়ীটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ দেওয়ার কথা বলে নিজের নামে ক্রয় করে নিয়েছে। টাকাটা সরবরাহ করেছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এলজিইডি প্রকৌশলী আব্দুল বারেকের বিরুদ্ধে আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ সীমাহীন। পরিবারের সদস্যদের নামে বেনামে দেশে বিদেশে অবৈধভাবে গাড়ী বাড়ী সহ অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছে। আবদুল বারেক ৬৩টি পৌরসভার বিল্ডিং এর কাজ নিম্ন মানের করে অবৈধ ভাবে উক্ত প্রকল্পের টাকা ঠিকাদারী প্রতিষ্টানের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করে ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়েছে। পৌরসভার ভবন নিম্ন মানের তৈরী করেছেন যা যেকোন সময় ভেঙ্গে পরতে পারে। মালামাল ক্রয় নানান অনিয়ম রয়েছে পৌরসভারগুলোর মধ্যে গাজীপুর জেলা কালিগঞ্জ পৌরসভা, গাজীপুর জেলার কালিয়াকোর পৌরসভা, টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর পৌরসভা, রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ পৌরসভা, মাদারীপুর জেলার কালকিনি পৌরসভা, রাজশাহীর বাঘা পৌরসভা, চাপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ পৌরসভা, লালমনির হাটের পাটগ্রাম পৌরসভা, গাইবান্ধার সুন্দারগঞ্জ পৌরসভা, কুড়িগ্রামের উলিপুর পৌরসভা, মৌলভিবাজারের কুলাউরা পৌরসভা, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট পৌরসভা, চট্টগ্রামের রাউজান পৌরসভা, চট্টগ্রামের সন্দিব পৌরসভা, যশোর ঝিনাইদহ মহেশপুর পৌরসভা সহ ৬৩টি পৌরসভা নিম্ন মানের ভবন নিমার্ণ করেছে। যা যে কোন সময় ভেঙ্গে পরে মানুষের জান মালের ক্ষতি হতে পারে। পৌরসভাগুলোর বরাদ্দকৃত অর্থ সঠিকভাবে ব্যয় না করে এবং কাজ না করে অবৈধভাবে উক্ত বরাদ্ধের টাকা উত্তোলন করে অবৈধভাবে আত্মসাৎ করেছে। আবদুল বারেক ১৯৯৮ সালে এস এস সি পাস করে। তার পরিবার অত্যান্ত গরিব ও অভাবী। কয়েক বছরে সে শত শত কোটি টাকার মালিকানা অর্জন করেছে। এই বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক আবদুল বারেকের সাথে মোবাইল ফোনে বারবার চেষ্টা করলেও ফোন রিসিভ না করায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এলজিইডির ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কাজ না করিয়ে বিল উত্তোলন করে উক্ত অর্থ হরিলুট করেছে। পতিত সরকারের দোষর আবদুল বারেক বর্তমানে এলজিইডির প্রধান কার্যালয় ঢাকা প্রকল্প পরিচালক হিসাবে কর্মরত আছে। আবদুল বারেক রোড জি-৫, বাসা-০৯, রোড-১১, সেক্টর-১০, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ তে স্ব-পরিবারে বসবাস করছেন। এলজিইডি’র প্রভাবশালী আবদুল বারেকের বাড়ি টাঙ্গাইলের গোপাল পুর থানার ডুবেইল। আবদুল বারেকের স্ত্রীয় ও সন্তানেরা আমিরিকায় বসবাস করছে। সেখানে তার ব্যবসা বানিজ্য কয়েকটি বাড়ী ও কয়েকটি গাড়ী রয়েছে। আবদুল বারেক এখন নামে বেনামে শতশত কোটি টাকার মালিক। অসাধু আবদুল বারেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে একটি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। দুদক সূত্রে জানা যায় অচিরেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সকল প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে আগামী সংখ্যায় বিস্তারিত জানা যাবে ।