এডিসি ওয়ারেছ আনসারীর বিরুদ্ধে প্রতারনায় জড়িত থাকার অভিযোগ

- আপডেট: ০৭:১০:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ অগাস্ট ২০২৫
- / ১৮০২৭
মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনির :
বগুড়া জেলার গাবতলী উপজেলার সাবেক নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আব্দুল ওয়ারেছ আনসারীর বিরুদ্ধে অসদাচরণ, অর্থ আত্মসাৎ, ইজারা ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম, নিয়োগ ও টেন্ডার বাণিজ্য এবং পরিচয়ভিত্তিক প্রতারণা সংশ্লিষ্ট গুরুতর অভিযোগগুলো নতুন নয়; এগুলো ক্রমান্বয়ে জমতে জমতে এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে তাঁর অতীত-বর্তমান দুই সময়ের ভূমিকাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে এবং সুশাসন ও দায়বদ্ধতার স্বার্থে নিরপেক্ষ উচ্চপর্যায়ের তদন্ত ও আইনি ব্যবস্থা এখন সময়ের দাবি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অভিযোগপত্র ও উপলব্ধ দাপ্তরিক সারাংশ অনুযায়ী, বগুড়া জেলায় ইউএনও থাকাকালে ডাকুমারা হাট ইজারার প্রক্রিয়ায় অনিয়মের মাধ্যমে সরকারি রাজস্ব ক্ষতির অভিযোগ ওঠে; এ কারণে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের হয় এবং প্রশাসনিক শাস্তি হিসেবে টানা দুই বছরের বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি স্থগিত করা হয় যা সরকারি চাকরিজীবী শৃঙ্খলা বিধির কাঠামোয় উল্লেখযোগ্য শাস্তি হিসেবে বিবেচিত। শাস্তি-উত্তর সময়ে সংশোধনের বদলে অভিযোগের পরিধি বরং বেড়েছে এমনই অভিযোগ ভুক্তভোগী ও স্থানীয় সূত্রের। পরবর্তীতে নারায়ণগঞ্জে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (মানবসম্পদ) পদে থাকাকালে নিয়োগ, বদলি ও পদায়ন প্রক্রিয়ায় ইচ্ছাকৃত হস্তক্ষেপ, বিশেষ সুবিধা প্রদান ও সুপারিশ বাণিজ্যের নানা অভিযোগ সামনে আসে; বিভিন্ন প্রার্থী ও মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে বিপুল অঙ্কের টাকার দাবিদাওয়ার অভিযোগও তোলা হয়। সরকারি কর্মকর্তার এমন অবস্থান থেকে কোনো নিয়োগ-প্রক্রিয়ায় অনৈতিক লেনদেনের অভিযোগ স্বয়ংক্রিয়ভাবে জনস্বার্থবিরোধী এবং প্রশাসনের ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর; তবু অভিযোগকারীরা দাবি করেন, এই সময়টাতে সেবা প্রত্যাশীদের সঙ্গে তাঁর আচরণ ছিল রূঢ়, অবমাননাকর ও ভয়ভীতি সৃষ্টিকারী, অনেক ক্ষেত্রে টেন্ডার গ্রহণে আগ্রহী উদ্যোক্তা ও প্রতিনিধিদের উদ্দেশে অযৌক্তিক শর্ত আরোপ, ‘অভ্যন্তরীণ নির্দেশনা’ বলে দোহাই দিয়ে ফাইল আটকে রাখা, এমনকি সরাসরি অনৈতিক দাবিদাওয়া উপস্থাপনের অভিযোগও আছে। সরকারি ক্রয়বিধি (পিপিআর) অনুসরণ, সমান প্রতিযোগিতার সুযোগ, দরপত্রের স্বচ্ছ মূল্যায়ন এসব যেখানে নিয়ম, সেখানে ক্ষমতাসীন এডিসি মানবসম্পদ হিসাবে কোনো ব্যক্তির ‘নরম-গরম’ ইঙ্গিতেই ফাইল কোথাও আটকে যাওয়া বা হঠাৎ দ্রুতগতিতে এগোনো এমন অভিযোগ প্রশাসনিক শৃঙ্খলার জন্য বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত তৈরি করে; অভিযোগকারীদের বক্তব্যে প্রতিফলিত হয়েছে ঠিক এমনই এক কাঠামোগত সমস্যার চিত্র, যার কেন্দ্রে ছিলেন আব্দুল ওয়ারেছ আনসারী। একই সময়সীমার আরেকটি চাঞ্চল্যকর ঘটনায় তাঁর নাম জড়িয়েছে পরিচয়ভিত্তিক প্রতারণার সঙ্গে; অভিযোগ করা হয়েছে যে বাংলাদেশ ব্যাংকে ২০১৩ সালের ২২ জুলাই ‘মো. আবদুল ওয়ারেশ আনসারী’ নামে একজন ব্যক্তি সহকারী পরিচালক পদে যোগদান করে পরবর্তী প্রায় ১২ বছর কর্মরত ছিলেন, অথচ তিনি নন ‘আসল’ ওয়ারেছ আনসারী আসল ব্যক্তি তখন ৩১তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দিয়েছেন এবং বর্তমান সময়ে ঢাকা জেলার এডিসি শিক্ষা ও তেজগাঁও উন্নয়ন সার্কেলের অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন। ঘটনাটি যদি সামগ্রিকভাবে সত্য হয়, তাহলে প্রশ্ন দেখা দেয় কীভাবে একজন প্রতারক একই নাম, পিতা-মাতা, স্থায়ী ঠিকানা, শিক্ষাগত যোগ্যতা সংক্রান্ত কাগজপত্র সবকিছু ‘দুর্ভেদ্য’ভাবে মিলিয়ে একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতো সংবেদনশীল প্রতিষ্ঠানে সফলভাবে চাকরি করতে পারেন, সেখানে তো নিয়োগ ও ভেরিফিকেশনের একাধিক স্তর থাকে: লিখিত-মৌখিক পরীক্ষা, ভেরিফিকেশন, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, আবেদনপত্রে দেওয়া জাতীয় পরিচয়পত্র ও শিক্ষাগত সনদের সত্যতা যাচাই, মেডিকেল; এসব স্তর পেরোনো কোনো একক ব্যক্তির পক্ষে অসম্ভব না হলেও অত্যন্ত কঠিন, আর তাই অভিযোগকারী মহলের সন্দেহ আসল ওয়ারেছ আনসারী বা তাঁর প্রভাববলয়ের কেউ না কেউ ইচ্ছাকৃত বা অবহেলাজনিত সহযোগিতা দিয়েছেন কি না, অন্তত নীরব সম্মতি বা তথ্য-প্রবাহের সুযোগ তৈরি হয়েছে কি না এগুলো গভীরভাবে অনুসন্ধান করা দরকার। কারণ, কারও পুরো নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, জন্মতারিখ, ঠিকানা, এমনকি শিক্ষাজীবনের পর্যায়ক্রমিক সনদ এ রকম সূক্ষ্ম তথ্যের ‘হুবহু’ মিল তৈরি করতে হলে হয় বিশেষ দক্ষ চক্রের সহায়তা লাগে, না হয় তথ্য-অভ্যন্তরে প্রবেশাধিকার পাওয়া কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ছায়া থাকে; উভয় অবস্থাতেই অপরাধ দুর্বল নয়, বরং সংগঠিত ও উচ্চঝুঁকিপূর্ণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো সংবেদনশীল প্রতিষ্ঠানে ‘ভুয়া’ পরিচয়ে নিয়োগ ও দীর্ঘস্থায়ী চাকরির ঘটনাকে হালকা করে দেখার সুযোগ নেই; এর সঙ্গে সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হলে দণ্ডবিধি, দুর্নীতি দমন আইন, জালিয়াতি ও প্রতারণার ধারাসহ সরকারি চাকরিজীবী আচরণবিধির একাধিক বিধান লঙ্ঘনের বিষয় দাঁড়ায়। এ বিষয়ে আব্দুল ওয়ারেছ আনসারীর আনুষ্ঠানিক বক্তব্য প্রকাশ্যে পাওয়া যায়নি; অভিযোগগুলোর বিষয়ে তাঁর অবস্থান জানা অতীব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ন্যায়সংগত সাংবাদিকতা ও আইনের শাসন দুটি নীতিরই দাবি হলো, অভিযুক্ত ব্যক্তি নিজের বক্তব্য উপস্থাপনের সুযোগ পাবেন। তবে ভুক্তভোগীরা বলছেন, অতীতে তাঁকে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি বা তিনি ‘ব্যস্ত’ আছেন বলে জানানো হয়েছে; অন্যদিকে অভিযোগ-সংশ্লিষ্ট কোনো নথি-প্রমাণ চাইলে ‘দাপ্তরিক গোপনীয়তা’ উল্লেখ করে তথ্য গোপনের প্রবণতাও তারা লক্ষ করেছেন। অভিযোগ-প্রমাণের প্রশ্নে আমরা দেখছি বগুড়ার মামলায় বিভাগীয় শাস্তির প্রমাণ প্রশাসনিক নথিতেই আছে; যা আংশিকভাবে হলেও ‘অসদাচরণের একটি পর্ব’কে নিশ্চিত করে। নারায়ণগঞ্জের সময়ে যে নিয়োগ বাণিজ্য ও টেন্ডার হস্তক্ষেপের কথা বলা হচ্ছে, সেখানেও অভিযোগকারীদের সঙ্গত দাবি ফোনালাপ, মেসেজ, মধ্যস্বত্বভোগীর সঙ্গে অর্থ লেনদেনের টোকেন ও ব্যাংক-স্টেটমেন্ট, দরপত্র-পরিবর্তিত স্পেসিফিকেশনের খসড়া—এসব জোগাড় করা সম্ভব এবং তদন্ত সংস্থার পক্ষে তুলনামূলক সহজ; ফলে অভিযোগ ‘আপনি বললেন, আমি বিশ্বাস করলাম’ এই স্তরে আটকে থাকার কারণ নেই, বরং ডিজিটাল ফরেনসিক ও দাপ্তরিক ট্রেইল বিশ্লেষণে সত্য-অসত্য দ্রুত উন্মোচিত হতে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচয়ভিত্তিক প্রতারণা-সংশ্লিষ্ট জটিল অংশটি আরও গভীর; সেখানে পরীক্ষা-ভর্তি-জয়েনিং প্রতিটি স্তরে কারা কারা জড়িত থাকতে পারে তার একটি সম্ভাব্য নেটওয়ার্ক ম্যাপ আঁকা দরকার প্রার্থী, নিয়োগ-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, পুলিশ ভেরিফিকেশন টিম, শিক্ষা বোর্ডে ‘ট্রু কপি’ সত্যায়ন, মেডিকেল বোর্ড, জয়নিং অথরিটি, পেরোল সিস্টেমে এনআইডি ও ব্যাংক-অ্যাকাউন্ট লিংকিং প্রতিটি ধাপের ব্যাক-ট্র্যাকিং করলে ছিদ্র কোথায় তা বেরিয়ে আসবে। অভিযোগ যদি সঠিক হয়, তাহলে আসল আব্দুল ওয়ারেছ আনসারীর ‘জানতাম না’ বলা দায়সারা বক্তব্যে দায় এড়ানো উচিত হবে না; কারণ এমন স্তরের পরিচয়-ডুপ্লিকেশন দীর্ঘ ১২ বছর টিকে থাকা মানে কেবল কোনো বহিরাগত প্রতারকের সক্ষমতা নয়, বরং অন্তত একটি অংশে ‘ইন্টারনাল নলেজ’ বা ‘সিস্টেমিক নীরবতা’ সক্রিয় ছিল। এর সঙ্গে তাঁর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্পৃক্ততার সুতো মেলাতে হলে তাঁর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সম্পদের হঠাৎ বৃদ্ধি, জীবনযাপনের ধাঁচ, দায়মুক্তির চেষ্টা এসব সূচক বিশ্লেষণ জরুরি। তাঁর বর্তমান অবস্থান ঢাকা জেলার এডিসি (শিক্ষা) এবং তেজগাঁও উন্নয়ন সার্কেলের অতিরিক্ত দায়িত্ব এই দুই পদই নীতিনির্ধারণী ও সেবাধর্মী কাজের সঙ্গে যুক্ত; ফলে অভিযোগ-আশঙ্কা-প্রশ্নের মেঘ কাটাতে হলে তাঁকে স্বেচ্ছায় দপ্তর থেকে অব্যাহতি নিয়ে নিরপেক্ষ তদন্তে সহযোগিতা করার আহ্বান যুক্তিযুক্ত; অন্যথায় ক্ষমতার প্রভাব তদন্ত প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার শঙ্কা থেকেই যায়। প্রশাসন বিশেষজ্ঞদের মতে, যে কর্মকর্তা পূর্বে বিভাগীয় শাস্তি পেয়েছেন, তার ক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে ‘শূন্য সহনশীলতা’ নীতি অনুসরণ করা উচিত; অর্থাৎ তাঁর প্রতিটি দাপ্তরিক সিদ্ধান্তে জবাবদিহি ও অডিট থাকে, এবং কোনো অভিযোগ উঠলে তাৎক্ষণিক ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং কমিটি বসে। অভিযোগকারী পক্ষ বলছে, বাস্তবে উল্টোটা হয়েছে উপরে যোগাযোগ, প্রভাবশালী মহলের ছায়া, ‘সিস্টেম জানি’ এই মনোভাবের ফলে একাধিক অভিযোগ ‘রিপোর্ট ফাইনাল হয়নি’ বলে বছরের পর বছর ঝুলে থেকেছে; এতে ভুক্তভোগীরা হতাশ এবং দুর্নীতিবাজদের জন্য এটি ‘ডি-ফ্যাক্টো ইমিউনিটি’। জনস্বার্থ সুরক্ষার প্রশ্নে এখানে কয়েকটি নির্দিষ্ট পদক্ষেপ জরুরি প্রথমত, বগুড়ার ইজারা অনিয়ম-সংশ্লিষ্ট সম্পূর্ণ কেসফাইল, শো-কজ, জবাব, এনক্লোজার সবকিছু প্রকাশ্য করা; দ্বিতীয়ত, নারায়ণগঞ্জের এডিসি মানবসম্পদ থাকাকালীন নেয়া নিয়োগ/বদলি/পদায়নের প্রতিটি ফাইলের বিশেষ অডিট, সম্ভাব্য স্বার্থের সংঘাত চিহ্নিতকরণ এবং আর্থিক লেনদেনের ফরেনসিক ট্রেইল; তৃতীয়ত, বাংলাদেশ ব্যাংকে ‘ভুয়া’ পরিচয়ে নিয়োগকৃত ব্যক্তির কাগজপত্রের সঙ্গে ‘আসল’ ব্যক্তি আব্দুল ওয়ারেছ আনসারীর শিক্ষাগত ও ব্যক্তিগত তথ্যের ক্রস-ম্যাচ, এনআইডি-শিক্ষা বোর্ড-জন্মনিবন্ধনের সার্টিফায়েড ভেরিফিকেশন এবং পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ফাইলের উৎস-ভেঙে-দেখা বিশ্লেষণ; চতুর্থত, অভিযোগে উল্লিখিত টেন্ডার-প্রক্রিয়াগুলোতে স্পেসিফিকেশন-ইনফ্লুয়েন্স, মূল্যায়ন কম্পোজিশন ও ‘একক দরদাতা’ হওয়া-না হওয়া—এসব সূচকের পরিসংখ্যানগত বিশ্লেষণ; পঞ্চমত, অভিযুক্তের অ্যাসেট ডিক্লারেশন সংগ্রহ করে লাইফস্টাইল অডিট যাতে বেতনের তুলনায় ব্যয়ের অসামঞ্জস্য থাকলে তা ‘অবৈধ সম্পদ’ অনুসন্ধানের ভিত্তি হয়। আইনগত দৃষ্টিকোণ থেকে এই অভিযোগগুলোর যে-কোনো একটির সত্যতা প্রমাণিত হলেও কেবল ‘ভবিষ্যতে সতর্ক’ টাইপ নরম শাস্তি যথেষ্ট হবে না; দণ্ডবিধির জালিয়াতি-প্রতারণা, দুর্নীতি দমন আইন, সরকারি টাকা ক্ষতির দায়ে আর্থিক পুনরুদ্ধার, এমনকি চাকরি থেকে অপসারণ সবই তখন প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবে। প্রশাসনিক সংস্কৃতি-সংক্রান্ত আরেকটি প্রশ্ন এখানে জরুরি কেন বারবার অভিযোগ ওঠার পরও কোনো কর্মকর্তাকে ‘সংবেদনশীল’ জায়গায়ই রাখা হয়, অথবা ‘সমান্তরাল’ নতুন দায়িত্ব দিয়ে জনদৃষ্টি সরিয়ে রাখা হয়; এটি কি দায় এড়ানোর কৌশল? নাকি ‘আমলাতান্ত্রিক সংহতি’ নামে এক ধরনের ‘বডি-আর্মার’ কাজ করে? দুর্নীতিবিরোধী কর্মীরা বলছেন, ‘সাসপেনশন’ কোনো শাস্তি নয়; তদন্তকালে দায়িত্বে থাকা মানে সাক্ষ্য-প্রমাণে প্রভাব খাটানোর ঝুঁকি বৃদ্ধি; তাই কার্যকর শূন্য সহনশীলতা নিশ্চিত করতে হলে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা মিললেই সাময়িক বরখাস্ত, তারপর সময়সীমাবদ্ধ তদন্ত ও চার্জশিট এই রোডম্যাপ অনুসরণ দরকার। জনস্বার্থের বিচারে সংবাদমাধ্যমের দায়িত্ব হলো অভিযোগ তুলে ধরা, লেখা-জবাবদিহি ও প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা দাবি করা; কিন্তু বিচার হবে আদালতে, প্রক্রিয়া অনুসরণ করবে তদন্ত সংস্থা—এই বিভাজন স্পষ্ট রেখেই বলা যায়, আব্দুল ওয়ারেছ আনসারীকে ঘিরে যে পরিমাণ প্রশ্ন জমেছে তা সাধারণ কোনো কর্মকর্তার ক্ষেত্রে দেখা যায় না; পূর্বের বিভাগীয় শাস্তি, পরের নিয়োগ বাণিজ্য অভিযোগ, টেন্ডার-হস্তক্ষেপের অভিযোগ, এবং সবচেয়ে বড়—কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পরিচয়-ডুপ্লিকেশনের কেলেঙ্কারি সব মিলিয়ে এটি একটি ‘প্যাটার্ন’ নির্দেশ করে, যেখানে ক্ষমতার কক্ষপথে থেকে নিজের বা কোনো চক্রের সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে বলে অভিযোগকারীরা মনে করেন। অবশ্যই, অভিযুক্তের বক্তব্য ও প্রতিপক্ষের জবাব শোনা জরুরি; তবু রাষ্ট্রীয় স্বার্থে নিরপেক্ষ তদন্ত ছাড়া এই জট খুলবে না। আরেকটি বাস্তবতা অভিযোগের সময়চক্র যত দীর্ঘায়িত হয়, ততই প্রমাণ নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে; তাই ‘টাইম-বাউন্ড’ তদন্তই এখানে একমাত্র পথ। স্বাধীন নিরীক্ষা, ডিজিটাল ফরেনসিক, সাক্ষ্য-সংরক্ষণ, হুইসেলব্লোয়ার প্রটেকশন এসব নিশ্চিত করে দ্রুত সত্যউন্মোচন করতে হবে। অভিযোগকারীরা আরও বলছেন, প্রশাসনিক অজুহাতে ‘ট্রান্সফার’ দিয়ে ইমপ্যাক্ট কমানো, অথবা ‘বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে’ বলে বছর কাটানো এসব পুরোনো কৌশল জনআস্থাকে তলানিতে নামায়; তাই এখন ‘ইন্টেগ্রিটি টেস্ট’ দরকার অভিযুক্ত ও সংশ্লিষ্টদের সম্পদ, ফোন-কল ডেটা, মেসেজিং অ্যাপের চ্যাট লগ, অফিসিয়াল ইমেইল ট্রেইল সবকিছুর আইনসঙ্গত যাচাই। একইসঙ্গে যারা ‘ভুয়া’ পরিচয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে ঢুকে দীর্ঘদিন চাকরি করেছেন তাঁরাও যেন আইনের আওতায় আসেন এবং তাঁদের ‘লিঙ্ক’ কোথায় তা স্পষ্ট হয়; যদি সেখানে আসল ওয়ারেছ আনসারীর কোনো সহযোগিতা, নীরব সম্মতি, বা তথ্য সরবরাহ প্রমাণিত হয় তাহলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। কারণ, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে এমন ঘটনা ‘সিস্টেম ভাঙার’ বীজ বপন করে; আজ ব্যাংকে, কাল রাজস্ব, পরশু নিরাপত্তা এই ডমিনো ইফেক্ট রুখতে উদাহরণ সৃষ্টি প্রয়োজন। একইভাবে, বগুড়ার হাট ইজারার ঘটনায় সরকারি রাজস্ব ক্ষতি যদি অডিটে নিশ্চিত হয় তাহলে অর্থ পুনরুদ্ধার, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দায় নির্ধারণ এবং ওই সময়ের কন্ট্রাক্ট-চক্রের সঙ্গে কর্মকর্তার সম্ভাব্য আঁতাত সবকিছু প্রকাশ্যে জানাতে হবে; এতে একদিকে ক্ষতিপূরণ হবে, অন্যদিকে ভবিষ্যৎ অনিয়মে ভয় দেখাবে। নারায়ণগঞ্জের অভিযোগগুলোর ক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট একটি তালিকা তৈরি করে প্রতিটি নিয়োগ/টেন্ডার-ফাইলে ‘ডিসিশন লজিক’কেন, কখন, কার নির্দেশে এসব লিখিতভাবে নথিভুক্ত করার বিধান কঠোরভাবে মানা হয়েছিল কি না তা যাচাই জরুরি; যদি ‘নীরব মৌখিক নির্দেশ’ প্রাধান্য পেয়ে থাকে, তবে সেটাই অনিয়মের সবচেয়ে বড় জানালা। বর্তমান দায়িত্বকালীন পর্যায়ে ঢাকা জেলার এডিসি শিক্ষা ও তেজগাঁও উন্নয়ন সার্কেলের অতিরিক্ত দায়িত্ব এই দুই জায়গায়ও সেবা প্রত্যাশীদের সঙ্গে আচরণ, ফাইল-প্রসেসিং টাইমলাইন, ই-নথিতে অস্বাভাবিক বিলম্ব এসব ডেটা-ড্রিভেন মেট্রিক্স দিয়ে রিভিউ করলে প্রশাসনিক মানচিত্র আরও পরিষ্কার হবে; ‘রেড ফ্ল্যাগ’ যেমন হঠাৎ করে কোনো নির্দিষ্ট কন্ট্রাক্টরের ধারাবাহিক জয়, নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠানের আবেদন বারবার ‘কারেকশন’-এ আটকে থাকা, রাতারাতি ফাইল অগ্রগতি, অথবা ‘ক্লোজড মিটিং’-এর পর সিদ্ধান্ত বদল এসবই অনিয়মের সূচক, যা ডেটা অ্যানালিটিক্সে সহজে ধরা পড়ে। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি ব্যক্তিবিশেষের ঊর্ধ্বে এটি প্রশাসনিক ন্যায্যতা, জনসম্পদের সুরক্ষা ও আইনের শাসনের প্রশ্ন; একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগের মেলা জমলে এবং পূর্বে শাস্তিপ্রাপ্তির নজির থাকলে, ‘সন্দেহের সুবিধা’ দিয়ে চুপ করে বসে থাকা রাষ্ট্রের পক্ষে বিপজ্জনক; বরং দ্রুত তদন্ত, জবাবদিহি, প্রয়োজন হলে চাকরি থেকে অপসারণ ও ফৌজদারি মোকাবিলা এই ধারাবাহিকতায় হাঁটা উচিত। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো প্রমাণিত হলে তিনি যে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির যোগ্য এতে দ্বিমত করা কঠিন; আর যদি তিনি নির্দোষ হন তবে নিরপেক্ষ তদন্তই তাঁর জন্য সবচেয়ে বড় পরিত্রাণ। কিন্তু ‘অন্তহীন অপেক্ষা’ ও ‘অর্ধেক সত্য’ দুটিই জনআস্থা ক্ষয় করে। তাই এখনই দরকার পরিষ্কার সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ, স্বচ্ছ ও সময়বদ্ধ অনুসন্ধান; যাতে সত্য প্রকাশ পায়, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বৃত্তায়নের কবল থেকে নিরাপদ থাকে এবং যিনি দায়ী তিনি আইনের মুখোমুখি হন।