১০:৩১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫

ভুলুয়ার সীমারেখা নিয়ে ‘নোয়াখালী বিভাগ’ বাস্তবায়নে ঐতিহাসিক পুনর্জাগরণের আহ্বান

  • আপডেট: ০৬:২৩:১৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫
  • / ১৮০২৭

লেখক: মোহাম্মদ সোহেল বাদশা

বাংলাদেশের ইতিহাসে ‘ভুলুয়া’ নামটি শুধুমাত্র একটি অঞ্চলের পরিচায়ক নয়, বরং এটি আমাদের প্রশাসনিক বিকাশ, সংস্কৃতি ও সামাজিক ঐতিহ্যের এক জীবন্ত দলিল। বর্তমান বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চল যার অন্তর্গত নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অংশ বিশেষ ও হাতিয়া-সোনদিয়া দ্বীপমালা একসময় ভুলুয়া পরগনার অন্তর্ভুক্ত ছিল। সেই ভুলুয়ার প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ঐক্য আজও বিদ্যমান, অথচ রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের জটিলতায় তা বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এই ঐতিহাসিক বিচ্ছিন্নতা দূর করে স্বতন্ত্র নোয়াখালী বিভাগ বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি।

ঐতিহাসিক দলিল অনুযায়ী, ১৭শ শতাব্দীতে ভুলুয়া ছিল মোগল আমলের একটি সুপ্রশাসিত পরগনা। এর সীমানা পশ্চিমে মেঘনা নদী, পূর্বে ফেনী নদী, উত্তরে চাঁদপুর পর্যন্ত এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের দ্বীপাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। ব্রিটশ শাসনামলে ভুলুয়ার নাম পরিবর্তন হয়ে হয় নোয়াখালী জেলা ১৯৮৪ সালে প্রশাসনিক পুনর্গঠনের সময় বৃহত্তর নোয়াখালীকে তিন ভাগে ভাগ করে নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুর জেলা গঠিত হয়। কিন্তু মানুষের সামাজিক-অর্থনৈতিক সম্পর্ক, ভাষা ও সংস্কৃতি রয়ে গেছে অভিন্ন।

নোয়াখালী ছিল নদীমাতৃক জনপদ, যেখানে বাণিজ্য, কৃষি, শিক্ষা ও সাহিত্য সমৃদ্ধ এক সমাজের বিকাশ ঘটে। ‘মাইজদী’, ‘চরজব্বর’, ‘চরভৈরবী’, ‘সোনাপুর’ এসব স্থানের নাম যেমন কৃষিনির্ভর জীবনের প্রতীক, তেমনি ফেনী ও লক্ষ্মীপুরের ইতিহাসও একই সাংস্কৃতিক সূত্রে গাঁথা। এখানকার মানুষ পরিশ্রমী, অতিথিপরায়ণ এবং দেশপ্রেমিক। নোয়াখালীর মাটি জন্ম দিয়েছে অসংখ্য জাতীয় নেতা, বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক ও মুক্তিযোদ্ধার, যাঁরা জাতির উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন।

বৃহত্তর নোয়াখালী দেশের অন্যতম বৃহৎ প্রবাসী ও কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির অঞ্চল। প্রবাসী আয়, কৃষিজ উৎপাদন, শিল্প-বাণিজ্য এবং উপকূলীয় সম্পদ মিলে এই অঞ্চলের জিডিপিতে অবদান জাতীয় গড়ের চেয়েও বেশি। অথচ প্রশাসনিক দিক থেকে এই অঞ্চলটি এখনও অন্য বিভাগের ওপর নির্ভরশীল। চিকিৎসা, শিক্ষা, প্রশাসন ও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ঢাকায় বা কুমিল্লায় দৌড়াতে হয়, যা জনগণের মৌলিক সেবা পাওয়ার পথে বড় বাধা।
নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং কুমিল্লার লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পশ্চিম সীমানার কয়েকটি এলাকার ভৌগোলিক অবস্থান ও পারস্পরিক সংযোগ নতুন বিভাগের জন্য যথাযথ প্রশাসনিক কাঠামো গঠনে সহায়ক।

বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পরিচালনা পর্যন্ত নোয়াখালীর মানুষ সব সময় নেতৃত্ব দিয়েছে। প্রথম মাইনিং ইঞ্জিনিয়ার ওবায়দুল্লাহ, বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী আবদুল মালেক উকিল, প্রখ্যাত অভিনেতা ও নাটক পরিচালক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, নাট্যকার মনির চৌধুরী, বিচারপতি বদরুল হায়দার চৌধুরী, শহীদ সার্জেন্ট জহিরুল হক, শহীদ বুদ্ধিজীবি এ.এন.এম শমসের আলী, অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান, প্রকাশনা শিল্পের পথিকৃৎ চিত্তরঞ্জন সাহা, বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক মোতাহের হোসেন চৌধুরী, ইসলামি পন্ডিত শায়খ আহমদুল্লাহ, ইসলামি চিন্তাবিদ ড. আ.ফ.ম খালিদ হুসাইন সবাই এই মাটির সন্তান। প্রশাসনিকভাবে নোয়াখালী অঞ্চল সর্বদা অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে, কিন্তু প্রাপ্য মর্যাদা পায়নি।

নোয়াখালী ও কুমিল্লা দুটি ভিন্ন সাংস্কৃতিক ও প্রশাসনিক পরিচয়ের অঞ্চল। কুমিল্লা ত্রিপুরার ঐতিহাসিক উত্তরাধিকার বহন করে, আর নোয়াখালী তার উৎস ভুলুয়া সভ্যতায়। এই দুই অঞ্চলের ভাষা, জীবনধারা ও সাংস্কৃতিক রীতিও ভিন্ন। বৃহত্তর নোয়াখালার দক্ষিণাঞ্চলে সমূদ্র থেকে জেগে ওঠেছে শতাধিক চর ও দ্বীপ। যা ভবিষ্যতে এই অঞ্চলের ভৌগোলিক পরিধি বৃদ্ধির সম্ভাবনাময় হাতছানি দিচ্ছে। এছাড়া নোয়াখালীতে রয়েছে হাজার হাজার একর সরকারি খাস জমি, যা নোয়াখালী বিভাগ হলে সরকারি বিভিন্ন অধিদপ্তর ও প্রতিষ্ঠান স্থাপনে সহায়ক হবে। অপরদিকে, কুমিল্লাকে বিভাগ করলে, সেখাসেনতুন করে সরকারি স্থাপনা গড়ে তুলতে বিড়ম্বনা পড়াতে হবে। এক কথায় বলা চলে, একটি বিভাগ বাস্তবায়নের জন্য যত যৌক্তিকতার প্রয়োজন, সবটুকুই নোয়াখালীতে রয়েছে। তাই নোয়াখালীর জনগণ মনে করে তাদের প্রশাসনিক পরিচয় কুমিল্লার সঙ্গে নয়, নিজস্ব ঐতিহাসিক স্বাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠিত হওয়া উচিত। তাই জুলাই জাতীয় সনদে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের করা চুড়ান্ত ৬৮ নং কলামে কুমিল্লাকে প্রশাসনিক বিভাগের সুপারিশ বাতিল করতে হবে। তা বাতিল না করলে একই কলামে ‘নোয়াখালী বিভাগ’ বাস্তবায়নের সুপারিশ যুক্ত করে ভুলুয়ার সীমারেখার ভৌগোলিক অঞ্চল নিয়ে নোয়াখালী বিভাগ ঘোষণা করতে হবে।
সাম্প্রতিক নোয়াখালীকে কুমিল্লার সঙ্গে যুক্ত করে কুমিল্লা বিভাগের প্রস্তাবনার প্রতিবাদে বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলে আন্দোলন জোরদার হয়েছে। আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠেছে পুরো নোয়াখালী অঞ্চল। স্লোগান উঠেছে- “ভুলুয়ার সীমারেখা থেকেই শুরু হোক নোয়াখালী বিভাগের সীমানা নির্ধারণ।” “কুমিল্লা নয়, নোয়াখালীই আমাদের আত্মপরিচয়।”
“নোয়াখালীর ইতিহাসের সূত্রপাত ভুলুয়ার সীমারেখা থেকে। তাই বিভাগ গঠনের ভিত্তি হবে সেই ঐতিহাসিক ঐক্য। নোয়াখালীর মানুষ উন্নয়ন ও প্রশাসনিক সুবিধার স্বার্থে, আত্মমর্যাদা রক্ষায়, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারাবাহিকতায় স্বতন্ত্র বিভাগ চায়। কুমিল্লা সঙ্গে কোনোভাবেই নোয়াখালীবাসী যুক্ত হবে না। ভুলুয়ার ভৌগোলিক ঐক্যই নোয়াখালী বিভাগের মূল শক্তি।”
নোয়াখালী বিভাগ বাস্তবায়ন কোনো রাজনৈতিক বা আঞ্চলিক প্রতিযোগিতা নয়, এটি একটি ঐতিহাসিক পুনরুদ্ধার, প্রশাসনিক প্রয়োজন ও আত্মপরিচয়ের প্রতীক। ভুলুয়ার সীমানা যেখানে শেষ, সেখানেই শুরু নোয়াখালীর আত্মমর্যাদার সীমানা।
দেশের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে হলে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ প্রয়োজন, আর সেই বিকেন্দ্রীকরণের পথে নোয়াখালী বিভাগ বাস্তবায়নই একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।

লেখক: মোহাম্মদ সোহেল বাদশা,
সাংবাদিক, নাগরিক টেলিভিশন ও ভোরের কাগজ।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

ভুলুয়ার সীমারেখা নিয়ে ‘নোয়াখালী বিভাগ’ বাস্তবায়নে ঐতিহাসিক পুনর্জাগরণের আহ্বান

আপডেট: ০৬:২৩:১৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

লেখক: মোহাম্মদ সোহেল বাদশা

বাংলাদেশের ইতিহাসে ‘ভুলুয়া’ নামটি শুধুমাত্র একটি অঞ্চলের পরিচায়ক নয়, বরং এটি আমাদের প্রশাসনিক বিকাশ, সংস্কৃতি ও সামাজিক ঐতিহ্যের এক জীবন্ত দলিল। বর্তমান বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চল যার অন্তর্গত নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অংশ বিশেষ ও হাতিয়া-সোনদিয়া দ্বীপমালা একসময় ভুলুয়া পরগনার অন্তর্ভুক্ত ছিল। সেই ভুলুয়ার প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ঐক্য আজও বিদ্যমান, অথচ রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের জটিলতায় তা বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এই ঐতিহাসিক বিচ্ছিন্নতা দূর করে স্বতন্ত্র নোয়াখালী বিভাগ বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি।

ঐতিহাসিক দলিল অনুযায়ী, ১৭শ শতাব্দীতে ভুলুয়া ছিল মোগল আমলের একটি সুপ্রশাসিত পরগনা। এর সীমানা পশ্চিমে মেঘনা নদী, পূর্বে ফেনী নদী, উত্তরে চাঁদপুর পর্যন্ত এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের দ্বীপাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। ব্রিটশ শাসনামলে ভুলুয়ার নাম পরিবর্তন হয়ে হয় নোয়াখালী জেলা ১৯৮৪ সালে প্রশাসনিক পুনর্গঠনের সময় বৃহত্তর নোয়াখালীকে তিন ভাগে ভাগ করে নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুর জেলা গঠিত হয়। কিন্তু মানুষের সামাজিক-অর্থনৈতিক সম্পর্ক, ভাষা ও সংস্কৃতি রয়ে গেছে অভিন্ন।

নোয়াখালী ছিল নদীমাতৃক জনপদ, যেখানে বাণিজ্য, কৃষি, শিক্ষা ও সাহিত্য সমৃদ্ধ এক সমাজের বিকাশ ঘটে। ‘মাইজদী’, ‘চরজব্বর’, ‘চরভৈরবী’, ‘সোনাপুর’ এসব স্থানের নাম যেমন কৃষিনির্ভর জীবনের প্রতীক, তেমনি ফেনী ও লক্ষ্মীপুরের ইতিহাসও একই সাংস্কৃতিক সূত্রে গাঁথা। এখানকার মানুষ পরিশ্রমী, অতিথিপরায়ণ এবং দেশপ্রেমিক। নোয়াখালীর মাটি জন্ম দিয়েছে অসংখ্য জাতীয় নেতা, বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক ও মুক্তিযোদ্ধার, যাঁরা জাতির উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন।

বৃহত্তর নোয়াখালী দেশের অন্যতম বৃহৎ প্রবাসী ও কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির অঞ্চল। প্রবাসী আয়, কৃষিজ উৎপাদন, শিল্প-বাণিজ্য এবং উপকূলীয় সম্পদ মিলে এই অঞ্চলের জিডিপিতে অবদান জাতীয় গড়ের চেয়েও বেশি। অথচ প্রশাসনিক দিক থেকে এই অঞ্চলটি এখনও অন্য বিভাগের ওপর নির্ভরশীল। চিকিৎসা, শিক্ষা, প্রশাসন ও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ঢাকায় বা কুমিল্লায় দৌড়াতে হয়, যা জনগণের মৌলিক সেবা পাওয়ার পথে বড় বাধা।
নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং কুমিল্লার লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পশ্চিম সীমানার কয়েকটি এলাকার ভৌগোলিক অবস্থান ও পারস্পরিক সংযোগ নতুন বিভাগের জন্য যথাযথ প্রশাসনিক কাঠামো গঠনে সহায়ক।

বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পরিচালনা পর্যন্ত নোয়াখালীর মানুষ সব সময় নেতৃত্ব দিয়েছে। প্রথম মাইনিং ইঞ্জিনিয়ার ওবায়দুল্লাহ, বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী আবদুল মালেক উকিল, প্রখ্যাত অভিনেতা ও নাটক পরিচালক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, নাট্যকার মনির চৌধুরী, বিচারপতি বদরুল হায়দার চৌধুরী, শহীদ সার্জেন্ট জহিরুল হক, শহীদ বুদ্ধিজীবি এ.এন.এম শমসের আলী, অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান, প্রকাশনা শিল্পের পথিকৃৎ চিত্তরঞ্জন সাহা, বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক মোতাহের হোসেন চৌধুরী, ইসলামি পন্ডিত শায়খ আহমদুল্লাহ, ইসলামি চিন্তাবিদ ড. আ.ফ.ম খালিদ হুসাইন সবাই এই মাটির সন্তান। প্রশাসনিকভাবে নোয়াখালী অঞ্চল সর্বদা অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে, কিন্তু প্রাপ্য মর্যাদা পায়নি।

নোয়াখালী ও কুমিল্লা দুটি ভিন্ন সাংস্কৃতিক ও প্রশাসনিক পরিচয়ের অঞ্চল। কুমিল্লা ত্রিপুরার ঐতিহাসিক উত্তরাধিকার বহন করে, আর নোয়াখালী তার উৎস ভুলুয়া সভ্যতায়। এই দুই অঞ্চলের ভাষা, জীবনধারা ও সাংস্কৃতিক রীতিও ভিন্ন। বৃহত্তর নোয়াখালার দক্ষিণাঞ্চলে সমূদ্র থেকে জেগে ওঠেছে শতাধিক চর ও দ্বীপ। যা ভবিষ্যতে এই অঞ্চলের ভৌগোলিক পরিধি বৃদ্ধির সম্ভাবনাময় হাতছানি দিচ্ছে। এছাড়া নোয়াখালীতে রয়েছে হাজার হাজার একর সরকারি খাস জমি, যা নোয়াখালী বিভাগ হলে সরকারি বিভিন্ন অধিদপ্তর ও প্রতিষ্ঠান স্থাপনে সহায়ক হবে। অপরদিকে, কুমিল্লাকে বিভাগ করলে, সেখাসেনতুন করে সরকারি স্থাপনা গড়ে তুলতে বিড়ম্বনা পড়াতে হবে। এক কথায় বলা চলে, একটি বিভাগ বাস্তবায়নের জন্য যত যৌক্তিকতার প্রয়োজন, সবটুকুই নোয়াখালীতে রয়েছে। তাই নোয়াখালীর জনগণ মনে করে তাদের প্রশাসনিক পরিচয় কুমিল্লার সঙ্গে নয়, নিজস্ব ঐতিহাসিক স্বাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠিত হওয়া উচিত। তাই জুলাই জাতীয় সনদে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের করা চুড়ান্ত ৬৮ নং কলামে কুমিল্লাকে প্রশাসনিক বিভাগের সুপারিশ বাতিল করতে হবে। তা বাতিল না করলে একই কলামে ‘নোয়াখালী বিভাগ’ বাস্তবায়নের সুপারিশ যুক্ত করে ভুলুয়ার সীমারেখার ভৌগোলিক অঞ্চল নিয়ে নোয়াখালী বিভাগ ঘোষণা করতে হবে।
সাম্প্রতিক নোয়াখালীকে কুমিল্লার সঙ্গে যুক্ত করে কুমিল্লা বিভাগের প্রস্তাবনার প্রতিবাদে বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলে আন্দোলন জোরদার হয়েছে। আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠেছে পুরো নোয়াখালী অঞ্চল। স্লোগান উঠেছে- “ভুলুয়ার সীমারেখা থেকেই শুরু হোক নোয়াখালী বিভাগের সীমানা নির্ধারণ।” “কুমিল্লা নয়, নোয়াখালীই আমাদের আত্মপরিচয়।”
“নোয়াখালীর ইতিহাসের সূত্রপাত ভুলুয়ার সীমারেখা থেকে। তাই বিভাগ গঠনের ভিত্তি হবে সেই ঐতিহাসিক ঐক্য। নোয়াখালীর মানুষ উন্নয়ন ও প্রশাসনিক সুবিধার স্বার্থে, আত্মমর্যাদা রক্ষায়, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারাবাহিকতায় স্বতন্ত্র বিভাগ চায়। কুমিল্লা সঙ্গে কোনোভাবেই নোয়াখালীবাসী যুক্ত হবে না। ভুলুয়ার ভৌগোলিক ঐক্যই নোয়াখালী বিভাগের মূল শক্তি।”
নোয়াখালী বিভাগ বাস্তবায়ন কোনো রাজনৈতিক বা আঞ্চলিক প্রতিযোগিতা নয়, এটি একটি ঐতিহাসিক পুনরুদ্ধার, প্রশাসনিক প্রয়োজন ও আত্মপরিচয়ের প্রতীক। ভুলুয়ার সীমানা যেখানে শেষ, সেখানেই শুরু নোয়াখালীর আত্মমর্যাদার সীমানা।
দেশের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে হলে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ প্রয়োজন, আর সেই বিকেন্দ্রীকরণের পথে নোয়াখালী বিভাগ বাস্তবায়নই একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।

লেখক: মোহাম্মদ সোহেল বাদশা,
সাংবাদিক, নাগরিক টেলিভিশন ও ভোরের কাগজ।