১০:৫০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫

ঢাকায় সড়ক নিরাপত্তা জোরদারে ডিএমপি-জাইকার যৌথ সেমিনার

  • আপডেট: ০৫:১২:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫
  • / ১৮০৩১

নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ— ডিএমপির উদ্যোগে এবং জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি— জাইকার অংশীদারিত্বে পরিচালিত ‘ঢাকা রোড ট্রাফিক সেফটি প্রজেক্ট’ বিষয়ক একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রচার সেমিনার সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই সেমিনারে প্রকল্পের তিন বছরের অভিজ্ঞতা, ফলাফল এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষণীয় বিষয়গুলো ভাগ করে নেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, পুলিশ কমিশনার সাজ্জাত আলী। বিশেষ অতিথি ছিলেন জাইকা বাংলাদেশের প্রধান প্রতিনিধি ইচিগুচি তোমোহিদে। মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) জিল্লুল রহমান। উপস্থিত ছিলেন— ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অ্যাডমিন) মো. সারওয়ার।

বক্তব্যে জানানো হয়, ঢাকা রোড ট্রাফিক সেফটি প্রকল্পটি ২০২২ সালের মার্চ মাসে শুরু হয়েছিল। যেখানে রাজধানীর সড়ক নিরাপত্তা উদ্যোগ বাস্তবায়নের সক্ষমতা উন্নত করা, দুর্ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করা এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি করায় ছিল প্রধান লক্ষ্য। গত তিন বছরে, প্রকল্পটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সহযোগিতা করেছে এবং ব্যবহারিক সরঞ্জাম এবং প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা তৈরি করেছে; যা শহরটিকে আরও নিরাপদ ও সুসংগঠিত করতে পারে।

বক্তারা জানান, আজকের এই সেমিনারটি অভিজ্ঞতা, ফলাফল এবং শিক্ষণীয় বিষয়গুলো ভাগ করে নেওয়ার এক মূল্যবান সুযোগ। এছাড়াও, ঢাকা শহরের জন্য একটি ‘টেকসই ও কার্যকর সড়ক নিরাপত্তা কাঠামো’ গড়ে তোলার জন্য উপস্থিত সকলের মতামত, প্রতিক্রিয়া এবং পরামর্শ শোনার একটি সুযোগ এটি।

সেমিনারে জোর দিয়ে বলা হয়, সড়ক নিরাপত্তার উন্নতি কেবল পুলিশের দায়িত্ব নয়, বরং এটি একটি ‘ভাগ করা অঙ্গীকার’। এই অঙ্গীকার সরকারি সংস্থা থেকে শুরু করে উন্নয়ন সহযোগী, চালক ও পথচারী থেকে শুরু করে সিটি প্ল্যানার এবং শিক্ষাবিদসহ সকল অংশীদারদের। এই সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে শহরে আরও কার্যকর, সুরক্ষিত, নিরাপদ এবং সুশৃঙ্খল ট্র্যাফিক পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব হবে বলে বক্তারা বিশ্বাস করেন।

পুলিশ কমিশনার সাজ্জাত আলী তার বক্তব্যে নিজের একটি ঘটনা তুলে ধরেন। বলেন— টোকিও থেকে আসা একজন জাপানি নাগরিক হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার পর ট্রাফিক পরিস্থিতি দেখে হতবাক হয়ে যান। ওই নাগরিক বিস্ময় প্রকাশ করে প্রশ্ন তোলেন, ‘কীভাবে চলছে ঢাকা?’। ট্রাফিক পরিস্থিতি এতটাই নাজুক যে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।

ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার সাজ্জাত আলী বলেন, ‘এই আধুনিক সময়ে ঢাকা শহরে পুরোনো বা সেকেলে পদ্ধতি ব্যবহার না করা উচিত।’

সাবেক ট্রাফিক কর্মকর্তা হিসেবে নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে সাজ্জাত আলী বলেন, ‘আমি দেখেছি যখন একজন সার্জেন্ট অন্যদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ (প্রসিকিউট) করছিলো, তখন তাকেই আবার অন্যভাবে অভিযুক্ত হতে হচ্ছে বা কোনো প্রভাবশালী চক্রের অংশ হিসেবে ছাড় পাচ্ছেন। এই অব্যবস্থা পুরো পরিস্থিতিকে অত্যন্ত খারাপ করে তুলেছে।’ এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার।

তিনি বলেন, ‘ঢাকা মহানগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের জন্য অন্যান্য রাজধানী শহরের মতো একটি কাঠামো তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি। এই কর্মসূচির মাধ্যমে ট্রাফিক বিষয়ে গণসচেতনতা সৃষ্টি করা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।’

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

ঢাকায় সড়ক নিরাপত্তা জোরদারে ডিএমপি-জাইকার যৌথ সেমিনার

আপডেট: ০৫:১২:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ— ডিএমপির উদ্যোগে এবং জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি— জাইকার অংশীদারিত্বে পরিচালিত ‘ঢাকা রোড ট্রাফিক সেফটি প্রজেক্ট’ বিষয়ক একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রচার সেমিনার সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই সেমিনারে প্রকল্পের তিন বছরের অভিজ্ঞতা, ফলাফল এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষণীয় বিষয়গুলো ভাগ করে নেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, পুলিশ কমিশনার সাজ্জাত আলী। বিশেষ অতিথি ছিলেন জাইকা বাংলাদেশের প্রধান প্রতিনিধি ইচিগুচি তোমোহিদে। মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) জিল্লুল রহমান। উপস্থিত ছিলেন— ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অ্যাডমিন) মো. সারওয়ার।

বক্তব্যে জানানো হয়, ঢাকা রোড ট্রাফিক সেফটি প্রকল্পটি ২০২২ সালের মার্চ মাসে শুরু হয়েছিল। যেখানে রাজধানীর সড়ক নিরাপত্তা উদ্যোগ বাস্তবায়নের সক্ষমতা উন্নত করা, দুর্ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করা এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি করায় ছিল প্রধান লক্ষ্য। গত তিন বছরে, প্রকল্পটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সহযোগিতা করেছে এবং ব্যবহারিক সরঞ্জাম এবং প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা তৈরি করেছে; যা শহরটিকে আরও নিরাপদ ও সুসংগঠিত করতে পারে।

বক্তারা জানান, আজকের এই সেমিনারটি অভিজ্ঞতা, ফলাফল এবং শিক্ষণীয় বিষয়গুলো ভাগ করে নেওয়ার এক মূল্যবান সুযোগ। এছাড়াও, ঢাকা শহরের জন্য একটি ‘টেকসই ও কার্যকর সড়ক নিরাপত্তা কাঠামো’ গড়ে তোলার জন্য উপস্থিত সকলের মতামত, প্রতিক্রিয়া এবং পরামর্শ শোনার একটি সুযোগ এটি।

সেমিনারে জোর দিয়ে বলা হয়, সড়ক নিরাপত্তার উন্নতি কেবল পুলিশের দায়িত্ব নয়, বরং এটি একটি ‘ভাগ করা অঙ্গীকার’। এই অঙ্গীকার সরকারি সংস্থা থেকে শুরু করে উন্নয়ন সহযোগী, চালক ও পথচারী থেকে শুরু করে সিটি প্ল্যানার এবং শিক্ষাবিদসহ সকল অংশীদারদের। এই সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে শহরে আরও কার্যকর, সুরক্ষিত, নিরাপদ এবং সুশৃঙ্খল ট্র্যাফিক পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব হবে বলে বক্তারা বিশ্বাস করেন।

পুলিশ কমিশনার সাজ্জাত আলী তার বক্তব্যে নিজের একটি ঘটনা তুলে ধরেন। বলেন— টোকিও থেকে আসা একজন জাপানি নাগরিক হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার পর ট্রাফিক পরিস্থিতি দেখে হতবাক হয়ে যান। ওই নাগরিক বিস্ময় প্রকাশ করে প্রশ্ন তোলেন, ‘কীভাবে চলছে ঢাকা?’। ট্রাফিক পরিস্থিতি এতটাই নাজুক যে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।

ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার সাজ্জাত আলী বলেন, ‘এই আধুনিক সময়ে ঢাকা শহরে পুরোনো বা সেকেলে পদ্ধতি ব্যবহার না করা উচিত।’

সাবেক ট্রাফিক কর্মকর্তা হিসেবে নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে সাজ্জাত আলী বলেন, ‘আমি দেখেছি যখন একজন সার্জেন্ট অন্যদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ (প্রসিকিউট) করছিলো, তখন তাকেই আবার অন্যভাবে অভিযুক্ত হতে হচ্ছে বা কোনো প্রভাবশালী চক্রের অংশ হিসেবে ছাড় পাচ্ছেন। এই অব্যবস্থা পুরো পরিস্থিতিকে অত্যন্ত খারাপ করে তুলেছে।’ এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার।

তিনি বলেন, ‘ঢাকা মহানগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের জন্য অন্যান্য রাজধানী শহরের মতো একটি কাঠামো তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি। এই কর্মসূচির মাধ্যমে ট্রাফিক বিষয়ে গণসচেতনতা সৃষ্টি করা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।’