নির্বাচন হলে দেশ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল হবে: সেনাসদর
- আপডেট: ০৩:৪৭:১৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫
- / ১৮০০৭
নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা
যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন সেনাবাহিনী আরও ঐক্যবদ্ধ, শৃঙ্খলাবদ্ধ এবং ভ্রাতৃত্ববোধে দৃঢ় বলে জানিয়েছেন জেনারেল অফিসার কমান্ডিং, সদর দপ্তর আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড (জিওসি আর্টডক) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো.মাইনুর রহমান।
বুধবার (৫ নভেম্বর) সেনাসদরে সেনাবাহিনীর কার্যক্রম সম্পর্কিত আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেস ‘এ’-তে সংবাদ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জেনারেল অফিসার কমান্ডিং, সদর দপ্তর আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড (জিওসি আর্টডক) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাইনুর রহমান বলেন, যে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে আমরা গত ১৫ মাস দায়িত্ব পালন করেছি, তা একেবারেই সহজ ছিল না। বাংলাদেশ এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি প্রতিদিন হয় না। তাই আমরাও চাই একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হোক এবং আমরা সেনানিবাসে ফিরে যাই।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেনাবাহিনীকে ঘিরে প্রচারিত বিভিন্ন গুজব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত ১৫ মাস সেনাবাহিনী অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে দায়িত্ব পালন করেছে। এ সময় কিছু স্বার্থান্বেষী চক্র সেনাবাহিনীর নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করার উদ্দেশ্যে মিথ্যা ও সাজানো অপপ্রচার চালিয়েছে।
এ সময় তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, আমি আপনাদের নিশ্চিত করতে চাই, সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য সেনাবাহিনীর প্রধান ও সিনিয়র লিডারশিপের প্রতি শতভাগ অনুগত। যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন সেনাবাহিনী আরও ঐক্যবদ্ধ, শৃঙ্খলাবদ্ধ এবং ভ্রাতৃত্ববোধে দৃঢ়।
তিনি আরও বলেন, সেনাবাহিনী দেশের জনগণের সেনাবাহিনী; তাই জনগণের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় দায়িত্ব সেনাবাহিনী পালন করে যাবে।
তিনি বলেন, দেশের জনগণের মতো সেনাবাহিনীও চায় সরকারের রূপরেখা অনুযায়ী একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। সে রূপরেখার মধ্যে সময়সীমাও দেওয়া আছে। আমরা আশা করি নির্বাচন হলে দেশের স্থিতিশীলতা আরও ভালো হবে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে আরও স্বাভাবিক হবে এবং সেনাবাহিনী তখন সেনানিবাসে ফিরে যেতে পারবে। আমরা সেদিকে তাকিয়ে আছি।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাইনুর রহমান আরও বলেন, সরকার এখন পর্যন্ত নির্বাচনের যেটুকু রূপরেখা প্রনয়ণ করেছে সেটার উপর ভিত্তি করে সেনাবাহিনী যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। আমাদের যে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম এখন সীমিত আকারে চলছে তারমধ্য নির্বাচনের সময় আমাদের কী করণীয় সেটাকে ফোকাসে রেখেই প্রশিক্ষণ করছি।
তিনি আরও বলেন, প্রশিক্ষণের সঙ্গে একটি বিষয় সম্পর্কিত তা হলো শান্তিকালীন সময়ে সেনাবাহিনীর দায়িত্ব হলো যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া। আমরা বলে থাকি ‘উই ট্রেইন এজ উই ফাইট’।
গত ১৫ মাস সেনাবাহিনী বাইরে আছে উল্লেখ করে সেনাবাহিনীর এই কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচন পর্যন্ত বা তার কিছুটা পরেও যদি বাইরে থাকতে হয় তাহলে আরও কিছুদিন বাইরে থাকতে হবে। এতে করে আমাদের প্রশিক্ষণ বিঘ্নিত হচ্ছে।
এর আগে সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশনসের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল দেওয়ান মোহাম্মদ মনজুর হোসেনকে গত দুই দিন আগে একটি দল জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়ন ঘোষণা করেছে এরপর কিছু জেলায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে এ অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, যখনই আইনশৃঙ্খলা রক্ষার বিষয় আসে তখনই নজরদারি করা হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকায় অন্যসব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগীতা করে।
নির্বাচনকালীন সরকার ও নির্বাচন পেছানোর কথা শোনা যাচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ মনজুর হোসেন বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য সরকারের যে ইচ্ছা এবং গাইডলাইন দেওয়া আছে এবং নির্বাচন কমিশন যে পরিপত্র প্রকাশ করবে সেই অনুযায়ী বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রধান করবে।
এসময় আসন্ন নির্বাচন কে নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মনজুর হোসেন বলেন, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধান দেখা করেছেন। কি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে ইতিমধ্যে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের পূর্ব শর্ত হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ থাকা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন স্বাভাবিক থাকে সেই লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বদ্ধপরিকর। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে যখন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে সহযোগিতা করার জন্য নিয়োজিত করা হয়েছে তখনই আমরা আমাদের সর্বাত্মক দিয়ে চেষ্টা করছি। নির্বাচনকালীন সময়ে আমরা ৯০ হাজার থেকে এক লক্ষ সদস্য মাঠ পর্যায়ে মোতায়েন করব। যেটা এযাবতকালের সর্বোচ্চ। আমাদের পরিকল্পনায় আছে জেলা পর্যায়ে, উপজেলা পর্যায়ে এমনকি আসন ভিত্তিক ক্যাম্প স্থাপন করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করব। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হিসেবে সম্পূর্ণ করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করার জন্য যা যা করা প্রয়োজন সবকিছু করার জন্য আমরা সদা প্রস্তুত থাকবো।



















