০৬:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫

প্রেমিকার ‘ফাঁদ’, বন্ধুর বিশ্বাসভঙ্গ: জুসে ঘুমের ওষুধ, এরপর ২৬ টুকরা লাশ

  • আপডেট: ০৪:১৫:১২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫
  • / ১৮০০৩

নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা

ঢাকার হাই কোর্টের সামনে প্লাস্টিকের ড্রামের ভেতর থেকে আশরাফুল হক নামে রংপুরের এক ব্যবসায়ীর খণ্ডিত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় গ্রেফতার প্রধান সন্দেহভাজন জরেজের ভাষ্যমতে গোয়েন্দা পুলিশ জানিয়েছে,হত্যাকাণ্ডটা ঘটেছে প্রেমঘটিত সংকটে।

এর আগে জরেজের প্রেমিকা শামীমা আক্তারকে গ্রেফতারের পর শনিবার সকালে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব জানিয়েছিল, প্রেমিকাকে দিয়ে ‘ফাঁদে ফেলে’ আশরাফুলের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা আদায়ের পরিকল্পনা ছিল জরেজের।

সে পরিকল্পনায় আশরাফুলকে ঢাকায় আনার কথা র‌্যাবকে জানিয়েছেন শামীমা। কিন্তু টাকা আদায় না করে কেন তাকে খুন করা হল,সেটির ‘স্পষ্ট ধারণা’ পাওয়া যায়নি।

তখন হত্যাকাণ্ডের ‘মোটিভ’নিশ্চিত হতে জরেজের বক্তব্যের জন্য অপেক্ষা করতে বলেছিল র‌্যাব, যাকে শুক্রবার রাতে কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে গ্রেপ্তার করে ডিবি।

শনিবার (১৫ নভেম্বর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে জরেজকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবিপ্রধান) মো.শফিকুল ইসলাম বলেছেন,এটা আসলে একটা ত্রিভুজ প্রেমের কাহিনী।

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হাই কোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ মাঠের গেইটের কাছে নীল ড্রাম থেকে খণ্ড-বিখণ্ড লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

২৬ টুকরো লাশের প্রথমে পরিচয় পাওয়া না গেলেও আঙুলের ছাপ নিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটাবেইজ থেকে পরিচয় শনাক্ত করা হয়।

জানা যায়,লাশটি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজলার গোপালপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের আশরাফুল হকের।

এ ঘটনায় গতকাল শুক্রবার শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেন নিহতের বোন। এ হত্যাকাণ্ডে নিহতের ‘বন্ধু’ জরেজ নামে একজনকে ‘প্রধান সন্দেহভাজন’ হিসেবে খোঁজার কথা বলেছিল পুলিশ।

রাতেই ডিবি পুলিশ জরেজকে এবং র‌্যাব কর্তৃক জরেজের প্রেমিকা শামীমাকে গ্রেফতারের তথ্য জানিয়েছে।

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন,মালয়েশিয়া প্রবাসী জরেজ মাস দেড়েক আগে দেশে ফেরেন। সেখানে থাকা অবস্থায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুমিল্লার শামীমার পরিচয় হয় এবং তাদের মধ্যে সম্পর্ক হয়।

জরেজের দেশে ফেরার দিন শামীমাই তাকে ঢাকার বিমানবন্দরে ‘রিসিভ করেন’ এবং পরে যে যার বাড়ি চলে যান।

দেশে ফেরার পর তাদের মধ্যে চলতে থাকা যোগাযোগের বিষয়টি জরেজের স্ত্রী ‘ধরে ফেলেন’। আর এ বিষয়ে সহায়তার জন্য তিনি দ্বারস্থ হন জরেজের ঘনিষ্ট বন্ধু আশরাফুলের।

ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন,জরেজের স্ত্রী আশরাফুলকে শামীমার নাম্বার দেন। তাকে ফোন করে যেন তার স্বামীর জীবন থেকে সরে যেতে বলেন সেই অনুরোধ করেন। এরমধ্যে আশরাফুল শামীমাকে ফোন দেয়,একসময় তার সঙ্গে কথা বলতে বলতে প্রেমে পড়ে যায়। আশরাফুল ও শামীমা নিয়মিত কথা বলতেন ও ভিডিও চ্যাটিং করতেন।

এরমধ্যে আশরাফুল ও শামীমা পরিকল্পনা করে জরেজকে জাপানে পাঠিয়ে দেবে,এরমধ্যে তারা দুইজনের জাপান যাওয়ার খরচ ৭ লাখ করে ১৪ লাখ দিবেন।

জাপান যাওয়ার প্রক্রিয়া এবং টাকা নেওয়ার জন্য শামীমা তাদেরকে ঢাকায় যেতে বলেন,সে অনুযায়ী দুই বন্ধু মিলে গত মঙ্গলবার ঢাকায় রওনা দেন।

পরদিন সকালে তাদেরকে সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডে রিসিভ করেন শামীমা। এরপর তারা শনির আখড়ায় একটি ভাড়া বাসায় উঠেন।

শফিকুল ইসলাম আরও বলেন,নিজেরা একান্তে সময় কাটাতে আশরাফুলকে জুসের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাওয়ায় জরেজ ও শামীমা,কিন্তু সে ঘুমায় না। আশরাফুল বার বার শামীমার সান্নিধ্যে যেতে চেষ্টা করে, এতে জরেজ বাধা দেয়। এ নিয়ে তাদের মধ্যে তর্কাতর্কি হয়।

একপর্যায়ে জরেজ বাসা থেকে বেরিয়ে যায় এবং দেখতে একইরকম হওয়ায় ভুলে আশরাফুলের মোবাইল নিয়ে বেরিয়ে যায়। সে বাড়ি চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও মোবাইল নিতে আবার বাসায় ফেরত যায়।

ডিবিপ্রধান বলেন,জরেজ বাসায় ঢুকলে শামীমা তাকে ভেতরে যেতে বলে এবং আশরাফুল ঘুমিয়ে গেছে বলে জানায়। ঘুমিয়েছে কি না দেখার জন্য শামীমা আশরাফুলের গায়ে হাত দিলে সে জেগে যায়। তখন জরেজুল আড়ালে লুকিয়ে থাকে।

আশরাফুল শামীমাকে বিকৃত যৌনাচারের জন্য জোর করতে থাকে,তখন শামীমা প্রলোভন দেখিয়ে দড়ি দিয়ে তার হাত বেধে দেয়। এরমধ্যে শামীমা চিৎকার করলে জরেজ বেরিয়ে হাতুড়ি দিয়ে আশরাফুলের হাঁটুতে বাড়ি দেয়। সে চিৎকার করতে থোকলে শামীমা তার মুখে ওড়না পুরে দিয়ে স্কচটেপ পেঁচায়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর দেখে আশরাফুল আর নড়াচড়া করতেছে না,সে মারা গেছে।

তারা এ অবস্থায় লাশটা নিয়ে রাতে এক বাসায় থাকে,নানা পরিকল্পনার পর বৃহস্পতিবার সকালবেলা বাইরে থেকে ড্রাম এবং অন্যান্য জিনিস কিনে আনে। লাশটি ২৬ টুকরা করে ড্রামে ভরে উপরে চাল দিয়ে ঢেকে দেয়।

এরপর সিএনজিতে করে এসে হাইকোর্টের সামলে ড্রাম দুটি রেখে,তারা সায়েদাবাদ চলে যায়। সেখান থেকে শামীমা নিজের বাড়ি লাকসামে চলে যায় এবং জরেজ দাউদকান্দিতে তার পূর্ব পরিচিত একজনের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন,যেখান থেকে তাকে গ্রেফতার করে ডিবি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

প্রেমিকার ‘ফাঁদ’, বন্ধুর বিশ্বাসভঙ্গ: জুসে ঘুমের ওষুধ, এরপর ২৬ টুকরা লাশ

আপডেট: ০৪:১৫:১২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা

ঢাকার হাই কোর্টের সামনে প্লাস্টিকের ড্রামের ভেতর থেকে আশরাফুল হক নামে রংপুরের এক ব্যবসায়ীর খণ্ডিত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় গ্রেফতার প্রধান সন্দেহভাজন জরেজের ভাষ্যমতে গোয়েন্দা পুলিশ জানিয়েছে,হত্যাকাণ্ডটা ঘটেছে প্রেমঘটিত সংকটে।

এর আগে জরেজের প্রেমিকা শামীমা আক্তারকে গ্রেফতারের পর শনিবার সকালে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব জানিয়েছিল, প্রেমিকাকে দিয়ে ‘ফাঁদে ফেলে’ আশরাফুলের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা আদায়ের পরিকল্পনা ছিল জরেজের।

সে পরিকল্পনায় আশরাফুলকে ঢাকায় আনার কথা র‌্যাবকে জানিয়েছেন শামীমা। কিন্তু টাকা আদায় না করে কেন তাকে খুন করা হল,সেটির ‘স্পষ্ট ধারণা’ পাওয়া যায়নি।

তখন হত্যাকাণ্ডের ‘মোটিভ’নিশ্চিত হতে জরেজের বক্তব্যের জন্য অপেক্ষা করতে বলেছিল র‌্যাব, যাকে শুক্রবার রাতে কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে গ্রেপ্তার করে ডিবি।

শনিবার (১৫ নভেম্বর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে জরেজকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবিপ্রধান) মো.শফিকুল ইসলাম বলেছেন,এটা আসলে একটা ত্রিভুজ প্রেমের কাহিনী।

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হাই কোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ মাঠের গেইটের কাছে নীল ড্রাম থেকে খণ্ড-বিখণ্ড লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

২৬ টুকরো লাশের প্রথমে পরিচয় পাওয়া না গেলেও আঙুলের ছাপ নিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটাবেইজ থেকে পরিচয় শনাক্ত করা হয়।

জানা যায়,লাশটি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজলার গোপালপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের আশরাফুল হকের।

এ ঘটনায় গতকাল শুক্রবার শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেন নিহতের বোন। এ হত্যাকাণ্ডে নিহতের ‘বন্ধু’ জরেজ নামে একজনকে ‘প্রধান সন্দেহভাজন’ হিসেবে খোঁজার কথা বলেছিল পুলিশ।

রাতেই ডিবি পুলিশ জরেজকে এবং র‌্যাব কর্তৃক জরেজের প্রেমিকা শামীমাকে গ্রেফতারের তথ্য জানিয়েছে।

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন,মালয়েশিয়া প্রবাসী জরেজ মাস দেড়েক আগে দেশে ফেরেন। সেখানে থাকা অবস্থায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুমিল্লার শামীমার পরিচয় হয় এবং তাদের মধ্যে সম্পর্ক হয়।

জরেজের দেশে ফেরার দিন শামীমাই তাকে ঢাকার বিমানবন্দরে ‘রিসিভ করেন’ এবং পরে যে যার বাড়ি চলে যান।

দেশে ফেরার পর তাদের মধ্যে চলতে থাকা যোগাযোগের বিষয়টি জরেজের স্ত্রী ‘ধরে ফেলেন’। আর এ বিষয়ে সহায়তার জন্য তিনি দ্বারস্থ হন জরেজের ঘনিষ্ট বন্ধু আশরাফুলের।

ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন,জরেজের স্ত্রী আশরাফুলকে শামীমার নাম্বার দেন। তাকে ফোন করে যেন তার স্বামীর জীবন থেকে সরে যেতে বলেন সেই অনুরোধ করেন। এরমধ্যে আশরাফুল শামীমাকে ফোন দেয়,একসময় তার সঙ্গে কথা বলতে বলতে প্রেমে পড়ে যায়। আশরাফুল ও শামীমা নিয়মিত কথা বলতেন ও ভিডিও চ্যাটিং করতেন।

এরমধ্যে আশরাফুল ও শামীমা পরিকল্পনা করে জরেজকে জাপানে পাঠিয়ে দেবে,এরমধ্যে তারা দুইজনের জাপান যাওয়ার খরচ ৭ লাখ করে ১৪ লাখ দিবেন।

জাপান যাওয়ার প্রক্রিয়া এবং টাকা নেওয়ার জন্য শামীমা তাদেরকে ঢাকায় যেতে বলেন,সে অনুযায়ী দুই বন্ধু মিলে গত মঙ্গলবার ঢাকায় রওনা দেন।

পরদিন সকালে তাদেরকে সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডে রিসিভ করেন শামীমা। এরপর তারা শনির আখড়ায় একটি ভাড়া বাসায় উঠেন।

শফিকুল ইসলাম আরও বলেন,নিজেরা একান্তে সময় কাটাতে আশরাফুলকে জুসের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাওয়ায় জরেজ ও শামীমা,কিন্তু সে ঘুমায় না। আশরাফুল বার বার শামীমার সান্নিধ্যে যেতে চেষ্টা করে, এতে জরেজ বাধা দেয়। এ নিয়ে তাদের মধ্যে তর্কাতর্কি হয়।

একপর্যায়ে জরেজ বাসা থেকে বেরিয়ে যায় এবং দেখতে একইরকম হওয়ায় ভুলে আশরাফুলের মোবাইল নিয়ে বেরিয়ে যায়। সে বাড়ি চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও মোবাইল নিতে আবার বাসায় ফেরত যায়।

ডিবিপ্রধান বলেন,জরেজ বাসায় ঢুকলে শামীমা তাকে ভেতরে যেতে বলে এবং আশরাফুল ঘুমিয়ে গেছে বলে জানায়। ঘুমিয়েছে কি না দেখার জন্য শামীমা আশরাফুলের গায়ে হাত দিলে সে জেগে যায়। তখন জরেজুল আড়ালে লুকিয়ে থাকে।

আশরাফুল শামীমাকে বিকৃত যৌনাচারের জন্য জোর করতে থাকে,তখন শামীমা প্রলোভন দেখিয়ে দড়ি দিয়ে তার হাত বেধে দেয়। এরমধ্যে শামীমা চিৎকার করলে জরেজ বেরিয়ে হাতুড়ি দিয়ে আশরাফুলের হাঁটুতে বাড়ি দেয়। সে চিৎকার করতে থোকলে শামীমা তার মুখে ওড়না পুরে দিয়ে স্কচটেপ পেঁচায়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর দেখে আশরাফুল আর নড়াচড়া করতেছে না,সে মারা গেছে।

তারা এ অবস্থায় লাশটা নিয়ে রাতে এক বাসায় থাকে,নানা পরিকল্পনার পর বৃহস্পতিবার সকালবেলা বাইরে থেকে ড্রাম এবং অন্যান্য জিনিস কিনে আনে। লাশটি ২৬ টুকরা করে ড্রামে ভরে উপরে চাল দিয়ে ঢেকে দেয়।

এরপর সিএনজিতে করে এসে হাইকোর্টের সামলে ড্রাম দুটি রেখে,তারা সায়েদাবাদ চলে যায়। সেখান থেকে শামীমা নিজের বাড়ি লাকসামে চলে যায় এবং জরেজ দাউদকান্দিতে তার পূর্ব পরিচিত একজনের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন,যেখান থেকে তাকে গ্রেফতার করে ডিবি।