০৬:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫

বিআরটিএ প্রধান কার্যালয় বনানী ঢাকায় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা প্রশাসন শাখায় গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল

  • আপডেট: ০৪:২০:২১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫
  • / ১৮০০৭

নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা

সরকার পরিবর্তনের পরও বদলির বাইরে বিআরটিএর গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন বিতর্কিত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন; রাজনৈতিক পরিচয়, প্রভাবশালী আত্মীয়ের সমর্থন ও অনিয়মের অভিযোগে ঘিরে সমালোচনা

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে ব্যাপক পরিবর্তন এলেও সড়ক পরিবহন খাতের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) বেশ কিছু পদে পূর্বের প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের বহাল অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বিশেষ করে উচ্চমান সহকারী তোফাজ্জল হোসেনকে কেন্দ্র করে নানা আলোচনা চলছে।

অভিযোগ রয়েছে, তেজগাঁও কলেজের ছাত্রলীগের সাবেক নেতা হওয়ায় সেই প্রভাবে  হিসেবে পরিচিত তোফাজ্জল হোসেন ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির সঙ্গে দীর্ঘদিন যুক্ত ছিলেন। সেই প্রভাবের কারণেই তিনি বিআরটিএর একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে দীর্ঘ সময় ধরে দায়িত্ব পালন করেন। অভিযোগকারীদের দাবি, দিনের বেলা তিনি দপ্তরে দায়িত্ব পালন করলেও রাতে তৎকালীন যুব মহিলা লীগের প্রভাবশালী নেতা অপু উকিলের চেম্বারে নিয়মিত যাতায়াত করতেন।

২০১২ সালে তিনি ঢাকা মেট্রো সার্কেল–২ এ দায়িত্ব পান এবং একটানা প্রায় ছয় বছর সেখানে কর্মরত থাকেন। সাধারণ প্রশাসনিক রোটেশনের নিয়ম অনুযায়ী কর্মকর্তাদের নির্দিষ্ট সময় পর বদলির কথা থাকলেও তার ক্ষেত্রে তা কার্যকর হয়নি। ঢাকার বাইরে তাকে কোনোদিনই পাঠানো হয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে।

ঢাকা মেট্রো সার্কেল–২ এর পর তিনি ঢাকা মেট্রো সার্কেল–১, ড্রাইভিং লাইসেন্স বোর্ড, এবং সদর কার্যালয়ের প্রশাসন বিভাগে দায়িত্ব পালন করেন—যার ফলে তার পুরো চাকরি জীবনের অধিকাংশ সময়ই রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটগুলোতেই কাটে।

লাইসেন্স বোর্ডে ঘুষ বাণিজ্য ও অনিয়মের অভিযোগ

বিভিন্ন সূত্রের দাবি, লাইসেন্স বোর্ডে দায়িত্ব পালনকালে তোফাজ্জল হোসেন ব্যাপক ঘুষ বাণিজ্য ও বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এসব অভিযোগ নিয়ে সংস্থার ভেতরে অসন্তোষ থাকলেও প্রভাবশালী রাজনৈতিক সমর্থনের কারণে তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলার সাহস পেতেন না।

তার পেছনে শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রভাব হিসেবে উঠে আসে তার আপন চাচা কৃষিবিদ মশিউর রহমান হুমায়ুনের নাম, যিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং দলের শীর্ষ পর্যায়ে ব্যাপক প্রভাবশালী ছিলেন। অভিযোগকারীরা বলছেন, এই সম্পর্কই তাকে বহু বছর ধরে “অস্পর্শযোগ্য” করে রেখেছিল।

ছাত্র আন্দোলনের পর প্রশাসনে ব্যাপক পরিবর্তন এলেও তোফাজ্জল হোসেন এখনো তার পদে বহাল আছেন। এতে বিআরটিএর অন্যান্য কর্মকর্তা–কর্মচারীদের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে—দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি কিভাবে বদলির বাইরে রয়ে গেলেন?

বিআরটিএর কোনো কর্মকর্তা এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করতে রাজি না হলেও অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, সংস্থাটিকে সুশাসনের পথে ফেরাতে হলে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত প্রশাসন নিশ্চিত করা জরুরি।

এখন প্রশ্ন—প্রশাসনকে সংস্কারের পথে এগিয়ে নিতে গেলে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে, নাকি তারা আগের মতোই বহাল তবিয়তে দায়িত্ব পালন করবেন

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

বিআরটিএ প্রধান কার্যালয় বনানী ঢাকায় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা প্রশাসন শাখায় গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল

আপডেট: ০৪:২০:২১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা

সরকার পরিবর্তনের পরও বদলির বাইরে বিআরটিএর গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন বিতর্কিত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন; রাজনৈতিক পরিচয়, প্রভাবশালী আত্মীয়ের সমর্থন ও অনিয়মের অভিযোগে ঘিরে সমালোচনা

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে ব্যাপক পরিবর্তন এলেও সড়ক পরিবহন খাতের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) বেশ কিছু পদে পূর্বের প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের বহাল অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বিশেষ করে উচ্চমান সহকারী তোফাজ্জল হোসেনকে কেন্দ্র করে নানা আলোচনা চলছে।

অভিযোগ রয়েছে, তেজগাঁও কলেজের ছাত্রলীগের সাবেক নেতা হওয়ায় সেই প্রভাবে  হিসেবে পরিচিত তোফাজ্জল হোসেন ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির সঙ্গে দীর্ঘদিন যুক্ত ছিলেন। সেই প্রভাবের কারণেই তিনি বিআরটিএর একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে দীর্ঘ সময় ধরে দায়িত্ব পালন করেন। অভিযোগকারীদের দাবি, দিনের বেলা তিনি দপ্তরে দায়িত্ব পালন করলেও রাতে তৎকালীন যুব মহিলা লীগের প্রভাবশালী নেতা অপু উকিলের চেম্বারে নিয়মিত যাতায়াত করতেন।

২০১২ সালে তিনি ঢাকা মেট্রো সার্কেল–২ এ দায়িত্ব পান এবং একটানা প্রায় ছয় বছর সেখানে কর্মরত থাকেন। সাধারণ প্রশাসনিক রোটেশনের নিয়ম অনুযায়ী কর্মকর্তাদের নির্দিষ্ট সময় পর বদলির কথা থাকলেও তার ক্ষেত্রে তা কার্যকর হয়নি। ঢাকার বাইরে তাকে কোনোদিনই পাঠানো হয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে।

ঢাকা মেট্রো সার্কেল–২ এর পর তিনি ঢাকা মেট্রো সার্কেল–১, ড্রাইভিং লাইসেন্স বোর্ড, এবং সদর কার্যালয়ের প্রশাসন বিভাগে দায়িত্ব পালন করেন—যার ফলে তার পুরো চাকরি জীবনের অধিকাংশ সময়ই রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটগুলোতেই কাটে।

লাইসেন্স বোর্ডে ঘুষ বাণিজ্য ও অনিয়মের অভিযোগ

বিভিন্ন সূত্রের দাবি, লাইসেন্স বোর্ডে দায়িত্ব পালনকালে তোফাজ্জল হোসেন ব্যাপক ঘুষ বাণিজ্য ও বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এসব অভিযোগ নিয়ে সংস্থার ভেতরে অসন্তোষ থাকলেও প্রভাবশালী রাজনৈতিক সমর্থনের কারণে তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলার সাহস পেতেন না।

তার পেছনে শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রভাব হিসেবে উঠে আসে তার আপন চাচা কৃষিবিদ মশিউর রহমান হুমায়ুনের নাম, যিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং দলের শীর্ষ পর্যায়ে ব্যাপক প্রভাবশালী ছিলেন। অভিযোগকারীরা বলছেন, এই সম্পর্কই তাকে বহু বছর ধরে “অস্পর্শযোগ্য” করে রেখেছিল।

ছাত্র আন্দোলনের পর প্রশাসনে ব্যাপক পরিবর্তন এলেও তোফাজ্জল হোসেন এখনো তার পদে বহাল আছেন। এতে বিআরটিএর অন্যান্য কর্মকর্তা–কর্মচারীদের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে—দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি কিভাবে বদলির বাইরে রয়ে গেলেন?

বিআরটিএর কোনো কর্মকর্তা এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করতে রাজি না হলেও অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, সংস্থাটিকে সুশাসনের পথে ফেরাতে হলে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত প্রশাসন নিশ্চিত করা জরুরি।

এখন প্রশ্ন—প্রশাসনকে সংস্কারের পথে এগিয়ে নিতে গেলে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে, নাকি তারা আগের মতোই বহাল তবিয়তে দায়িত্ব পালন করবেন