০৮:৪৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫

গ্রিসে চাকরির প্রলোভনে লিবিয়ায় পাচার: দেশে বসে মুক্তিপণ আদায়, চক্রের সদস্য গ্রেফতার

  • আপডেট: ০২:১১:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫
  • / ১৮০১৬

নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা

ইউরোপের দেশ গ্রিসে উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে লিবিয়ায় মানব পাচার ও নির্যাতন করে দেশে বসে মুক্তিপণ আদায় করে আসছিলো একটি চক্র। এমন অভিযোগে মানব পাচারকারী চক্রের সক্রিয় এক সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গ্রেফতারকৃতের নাম মোহাম্মদ নজির হোসেন (৫৫)। গতকাল বুধবার (১০ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টা ৩০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে সিআইডিতে মানব পাচার আইনে তদন্তাধীন দুটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।

বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে সংস্থাটি মিডিয়া বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে দায়ের হওয়া মামলায় চক্রের গ্রীসপ্রবাসী সদস্য মো. শরীফ উদ্দিন গত বছর দেশে এসে ভুক্তভোগী যুবককে গ্রিসে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখান। জনপ্রতি ১৫ লাখ টাকায় চুক্তি হলে ভুক্তভোগীরা প্রথমে পাসপোর্ট ও ২ লাখ টাকা শরীফের কাছে জমা দেন।

ওই বছরের জুলাইয়ে দুজনকে বাংলাদেশ থেকে দুবাই—মিশর হয়ে লিবিয়ায় পাঠানো হয়। সেখানে পৌঁছানোর পর স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে তাদেরকে মাফিয়া গোষ্ঠীর কাছে তুলে দেওয়া হয়। মাফিয়ারা তাদের ইউরো-ডলার ছিনিয়ে নেয় এবং আটকে রেখে নির্মম নির্যাতন চালায়।

সিআইডি জানায়, গ্রেফতার নজির ও তার সহযোগীরা লিবিয়ায় আটক দুই ভুক্তভোগীর পরিবারের কাছ থেকে ২১ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং অন্যজনের কাছ থেকে ১৬ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করে। মুক্তিপণ নিলেও তাদের ছেড়ে না দিয়ে লিবিয়ার পুলিশের হাতে তুলে দেয় পাচারকারীরা। ৪৫ দিন জেল খাটার পর আন্তর্জাতিক একটি সংস্থার সহায়তায় দুইজন ২৯ আগস্ট দেশে ফেরে।

এছাড়া ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ডেমরা থানায় দায়ের হওয়া আরেক মামলার তদন্তেও একই চক্রের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। সেখানে অভিযোগ রয়েছে—চক্রের সদস্য মো. বাহাদুর ফারাজীর টোপে এক যুবক গ্রিসে চাকরির আশায় ৮ লাখ টাকা ও পাসপোর্ট দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে ভুক্তভোগীর পাসপোর্ট, ভিসা ও টিকেট সরবরাহ করেন নজির। পরে লিবিয়ায় নিয়ে তাকে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয় এবং ১১ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করা হয়। টাকা নেওয়ার পর তাকে মরুভূমিতে ফেলে যায় দালালরা। সেও একইভাবে ২৫ আগস্ট দেশে ফিরতে সক্ষম হন।

সিআইডি জানায়, নজির হোসেন এর আগেও বিমানবন্দর থানার প্রতারণা মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামি ছিলেন।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নজির স্বীকার করেন—তিনি দীর্ঘদিন ধরে মানুষকে লোভ দেখিয়ে ইউরোপ নেওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় পাচার করতেন। চক্রটি এ পর্যন্ত ১৯ জনের কাছ থেকে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এর মধ্যে ৯ জন আন্তর্জাতিক সংগঠনের সহায়তায় দেশে ফিরলেও বাকিরা এখনো লিবিয়ার বিভিন্ন মাফিয়া গোষ্ঠীর কাছে আটক রয়েছে।

মানব পাচার ইউনিট (THB) জানিয়েছে, গ্রেফতার নজির দুই মামলার অভিযোগ স্বীকার করেছেন। তাকে আদালতে সোপর্দ ও রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।
চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতার ও পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটনে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান চলমান রয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

গ্রিসে চাকরির প্রলোভনে লিবিয়ায় পাচার: দেশে বসে মুক্তিপণ আদায়, চক্রের সদস্য গ্রেফতার

আপডেট: ০২:১১:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা

ইউরোপের দেশ গ্রিসে উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে লিবিয়ায় মানব পাচার ও নির্যাতন করে দেশে বসে মুক্তিপণ আদায় করে আসছিলো একটি চক্র। এমন অভিযোগে মানব পাচারকারী চক্রের সক্রিয় এক সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গ্রেফতারকৃতের নাম মোহাম্মদ নজির হোসেন (৫৫)। গতকাল বুধবার (১০ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টা ৩০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে সিআইডিতে মানব পাচার আইনে তদন্তাধীন দুটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।

বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে সংস্থাটি মিডিয়া বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে দায়ের হওয়া মামলায় চক্রের গ্রীসপ্রবাসী সদস্য মো. শরীফ উদ্দিন গত বছর দেশে এসে ভুক্তভোগী যুবককে গ্রিসে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখান। জনপ্রতি ১৫ লাখ টাকায় চুক্তি হলে ভুক্তভোগীরা প্রথমে পাসপোর্ট ও ২ লাখ টাকা শরীফের কাছে জমা দেন।

ওই বছরের জুলাইয়ে দুজনকে বাংলাদেশ থেকে দুবাই—মিশর হয়ে লিবিয়ায় পাঠানো হয়। সেখানে পৌঁছানোর পর স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে তাদেরকে মাফিয়া গোষ্ঠীর কাছে তুলে দেওয়া হয়। মাফিয়ারা তাদের ইউরো-ডলার ছিনিয়ে নেয় এবং আটকে রেখে নির্মম নির্যাতন চালায়।

সিআইডি জানায়, গ্রেফতার নজির ও তার সহযোগীরা লিবিয়ায় আটক দুই ভুক্তভোগীর পরিবারের কাছ থেকে ২১ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং অন্যজনের কাছ থেকে ১৬ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করে। মুক্তিপণ নিলেও তাদের ছেড়ে না দিয়ে লিবিয়ার পুলিশের হাতে তুলে দেয় পাচারকারীরা। ৪৫ দিন জেল খাটার পর আন্তর্জাতিক একটি সংস্থার সহায়তায় দুইজন ২৯ আগস্ট দেশে ফেরে।

এছাড়া ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ডেমরা থানায় দায়ের হওয়া আরেক মামলার তদন্তেও একই চক্রের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। সেখানে অভিযোগ রয়েছে—চক্রের সদস্য মো. বাহাদুর ফারাজীর টোপে এক যুবক গ্রিসে চাকরির আশায় ৮ লাখ টাকা ও পাসপোর্ট দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে ভুক্তভোগীর পাসপোর্ট, ভিসা ও টিকেট সরবরাহ করেন নজির। পরে লিবিয়ায় নিয়ে তাকে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয় এবং ১১ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করা হয়। টাকা নেওয়ার পর তাকে মরুভূমিতে ফেলে যায় দালালরা। সেও একইভাবে ২৫ আগস্ট দেশে ফিরতে সক্ষম হন।

সিআইডি জানায়, নজির হোসেন এর আগেও বিমানবন্দর থানার প্রতারণা মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামি ছিলেন।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নজির স্বীকার করেন—তিনি দীর্ঘদিন ধরে মানুষকে লোভ দেখিয়ে ইউরোপ নেওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় পাচার করতেন। চক্রটি এ পর্যন্ত ১৯ জনের কাছ থেকে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এর মধ্যে ৯ জন আন্তর্জাতিক সংগঠনের সহায়তায় দেশে ফিরলেও বাকিরা এখনো লিবিয়ার বিভিন্ন মাফিয়া গোষ্ঠীর কাছে আটক রয়েছে।

মানব পাচার ইউনিট (THB) জানিয়েছে, গ্রেফতার নজির দুই মামলার অভিযোগ স্বীকার করেছেন। তাকে আদালতে সোপর্দ ও রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।
চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতার ও পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটনে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান চলমান রয়েছে।