০৪:৪৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫

মেজর-কর্নেল পরিচয়ে সরকারি চাকরির প্রলোভনে প্রতারণা, মূলহোতাসহ গ্রেফতার ৬

  • আপডেট: ০১:২৪:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ১৮০৩০

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

সফিপুর আনসার ব্যাটালিয়ন একাডেমিতে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রাথমিক বাছাইয়ে বাদ পড়েন রাজু(১৯) নামের একজন অংশগ্রহনকারী। এর কিছুক্ষন পর মেজর ও কর্নেল পরিচয় দিয়ে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানায় পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীর কিছু শারীরিক সমস্যা আছে। সেই সমস্যার সমাধান করে চাকরি পাইয়ে দেয়ার নামে দাবি করা হয় মোটা অংকের টাকা।

এরপর ভুক্তভোগীর পরিবারের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়ে হাতে ধরিয়ে দেয়া হয় একটি ভূয়া নিয়োগপত্র। এমনই এক প্রতারক চক্রের মূলহোতাসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

মঙ্গলবার (২৩সেপ্টেম্বর) সকালে মিরপুর -১ নম্বরে অবস্থিত র‍্যাব-৪ এ আয়োজিত এক সংবাদ সন্মেলনে এসব তথ্য জানান কোম্পানি কমান্ডার শাহাবুদ্দিন কবীর।

গ্রেফতারকৃতরা হলো-সোহেল রানা ওরফে মিলন(৩৩),তৈয়ব ওরফে মোস্তাক(৪৬),মো.সজীব মুন্সি(৪৪),শামীম আহমেদ (৪৫),মো.মওলাদ আলী খান(৫২) এবং সোহেল রানা ওরফে জিন্নাহ(৩৭)।

গ্রেফতারকালে তাদের হেফাজত থেকে ১টি প্রাইভেট কার, ৭টি মোবাইল ফোন,২টি ভূয়া নিয়োগপত্র এবং নগদ ৯৫ হাজার ২০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।

শাহাবুদ্দিন কবীর বলেন,গত কয়েক দিন আগে জনৈক সোহেল রানা আমাদের নিকট একটি অভিযোগ দায়ের করেন। সেখানে তারা একটি প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে জানান। তিনি জানান,তার আপন ছোট ভাই গত ১৪ সেপ্টেম্বর সফিপুর আনসার ব্যাটালিয়ন একাডেমিতে নিয়োগ পরীক্ষা চলাকালে প্রাথমিক বাছাইয়ে বাদ পড়ে।

এসময় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি মোবাইলে ফোনের মাধ্যমে জানায় তার ভাইয়ের কিছু শারীরিক সমস্যা আছে। ভুক্তভোগী তার পরিচয় জানতে চাইলে সে নিজেকে মেজর সোহেল পরিচয় দেয় এবং তার সাথে পরে দেখা করতে বলে।

পরবর্তীতে ভুক্তভোগী ঢাকা মহানগরীর শাহ আলী থানায় অবস্থিত একটি হোটেলে আসামি সোহেল রানা এর সাথে দেখা করে। আসামি সোহেল রানা নিজেকে সেনাবাহিনীর মেজর পরিচয় দেয় এবং তার সাথে থাকা অপর প্রতারক তৈয়বুর রহমানকে সেনাবাহিনীর কর্নেল বলে পরিচয় করিয়ে দেয়। সোহেল ভুক্তভোগীর ভাইকে আনসার ব্যাটালিয়ন সিপাহী পদে চাকুরী দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে জানায় তার সাথে আনসারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যোগাযোগ আছে। ১২ লাখ টাকা দিলে তার ছোট ভাইকে চাকুরীতে নিয়োগ নিশ্চিত করতে পারবে। এই প্রস্তাবে ভুক্তভোগী রাজি হয় এবং সে মোতাবেক গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রাইভেট একটি ব্যাংক এ্যাকাউন্টের মাধ্যমে চার লাখ টাকা দেন। টাকা পাওয়ার পর মেজর পরিচয় দানকারী সোহেল,কর্নেল পরিচয় দানকারী তৈয়বুর রহমানসহ অন্যান্য আসামিরা ভুক্তভোগীকে তার ভাই রাজু(১৯) এর আনসার ব্যাটালিয়নে যোগদানের নিয়োগপত্র দেয়। নিয়োগপত্রটি দেওয়ার পর বিকাশ ও নগদ এ্যাকাউন্টের মাধ্যমে আরো এক লাখ টাকা নেয়।

পরে নিয়েগপত্রটি পেয়ে ভুক্তভোগী তার ভাই কে নিয়ে বাড়ি আসে। বাড়িতে এসে তারা তাদের গ্রামের আনসারের সিপাহি পদে নিয়োগপত্র পেয়েছে এমন একটি ছেলের নিয়োগপত্রের সাথে তাদের নিয়োগপত্রটির অনেক গরমিল দেখতে পায়। পরবর্তীতে ভুক্তোভোগী খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারে আসামীদের দেওয়া নিয়োগপত্রটি ভুয়া।

তিনি বলেন,এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শাহ আলী থানা এবং র‌্যাব-৪ বরাবর অভিযোগ দায়ের করে। পরে র‌্যাব-৪এর একটি চৌকস আভিযানিক দল আসামিদের অবস্থান সনাক্ত করে গতকাল রাতে (২৩ সেপ্টেম্বর) ঢাকা ও সাভারে অভিযান পরিচালনা করে প্রতারক চক্রের মূলহোতাসহ ছয় জনকে গ্রেফতার করে। এছাড়াও আসামিদের গ্রেফতারের সময় অন্য আরেকজন ভিকটিমকে পাওয়া যায়,যাকে সেনাবাহিনীতে চাকুরী দেওয়ার নাম করে নিয়ে এসেছিল।

গ্রেফতারকৃত আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের কতথ্য জানিয়ে তিনি বলেন,আসামিরা সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য দীর্ঘদিন যাবত ঢাকা মহানগরীতে অবস্থান করে বিভিন্ন জেলার চাকুরী প্রত্যাশীদের কাছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে টাকার মাধ্যমে চাকুরি দেয়ার নামে প্রতারণা করে আসছিলো। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা আছে। এর আগেও একই ধরনের অপরাধে জড়িত থাকার কারণে র‌্যাব-৪ কর্তৃক দুইবার গ্রেফতার করা হয়েছিল তাদের।

গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা ও সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান তিনি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

মেজর-কর্নেল পরিচয়ে সরকারি চাকরির প্রলোভনে প্রতারণা, মূলহোতাসহ গ্রেফতার ৬

আপডেট: ০১:২৪:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

সফিপুর আনসার ব্যাটালিয়ন একাডেমিতে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রাথমিক বাছাইয়ে বাদ পড়েন রাজু(১৯) নামের একজন অংশগ্রহনকারী। এর কিছুক্ষন পর মেজর ও কর্নেল পরিচয় দিয়ে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানায় পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীর কিছু শারীরিক সমস্যা আছে। সেই সমস্যার সমাধান করে চাকরি পাইয়ে দেয়ার নামে দাবি করা হয় মোটা অংকের টাকা।

এরপর ভুক্তভোগীর পরিবারের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়ে হাতে ধরিয়ে দেয়া হয় একটি ভূয়া নিয়োগপত্র। এমনই এক প্রতারক চক্রের মূলহোতাসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

মঙ্গলবার (২৩সেপ্টেম্বর) সকালে মিরপুর -১ নম্বরে অবস্থিত র‍্যাব-৪ এ আয়োজিত এক সংবাদ সন্মেলনে এসব তথ্য জানান কোম্পানি কমান্ডার শাহাবুদ্দিন কবীর।

গ্রেফতারকৃতরা হলো-সোহেল রানা ওরফে মিলন(৩৩),তৈয়ব ওরফে মোস্তাক(৪৬),মো.সজীব মুন্সি(৪৪),শামীম আহমেদ (৪৫),মো.মওলাদ আলী খান(৫২) এবং সোহেল রানা ওরফে জিন্নাহ(৩৭)।

গ্রেফতারকালে তাদের হেফাজত থেকে ১টি প্রাইভেট কার, ৭টি মোবাইল ফোন,২টি ভূয়া নিয়োগপত্র এবং নগদ ৯৫ হাজার ২০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।

শাহাবুদ্দিন কবীর বলেন,গত কয়েক দিন আগে জনৈক সোহেল রানা আমাদের নিকট একটি অভিযোগ দায়ের করেন। সেখানে তারা একটি প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে জানান। তিনি জানান,তার আপন ছোট ভাই গত ১৪ সেপ্টেম্বর সফিপুর আনসার ব্যাটালিয়ন একাডেমিতে নিয়োগ পরীক্ষা চলাকালে প্রাথমিক বাছাইয়ে বাদ পড়ে।

এসময় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি মোবাইলে ফোনের মাধ্যমে জানায় তার ভাইয়ের কিছু শারীরিক সমস্যা আছে। ভুক্তভোগী তার পরিচয় জানতে চাইলে সে নিজেকে মেজর সোহেল পরিচয় দেয় এবং তার সাথে পরে দেখা করতে বলে।

পরবর্তীতে ভুক্তভোগী ঢাকা মহানগরীর শাহ আলী থানায় অবস্থিত একটি হোটেলে আসামি সোহেল রানা এর সাথে দেখা করে। আসামি সোহেল রানা নিজেকে সেনাবাহিনীর মেজর পরিচয় দেয় এবং তার সাথে থাকা অপর প্রতারক তৈয়বুর রহমানকে সেনাবাহিনীর কর্নেল বলে পরিচয় করিয়ে দেয়। সোহেল ভুক্তভোগীর ভাইকে আনসার ব্যাটালিয়ন সিপাহী পদে চাকুরী দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে জানায় তার সাথে আনসারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যোগাযোগ আছে। ১২ লাখ টাকা দিলে তার ছোট ভাইকে চাকুরীতে নিয়োগ নিশ্চিত করতে পারবে। এই প্রস্তাবে ভুক্তভোগী রাজি হয় এবং সে মোতাবেক গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রাইভেট একটি ব্যাংক এ্যাকাউন্টের মাধ্যমে চার লাখ টাকা দেন। টাকা পাওয়ার পর মেজর পরিচয় দানকারী সোহেল,কর্নেল পরিচয় দানকারী তৈয়বুর রহমানসহ অন্যান্য আসামিরা ভুক্তভোগীকে তার ভাই রাজু(১৯) এর আনসার ব্যাটালিয়নে যোগদানের নিয়োগপত্র দেয়। নিয়োগপত্রটি দেওয়ার পর বিকাশ ও নগদ এ্যাকাউন্টের মাধ্যমে আরো এক লাখ টাকা নেয়।

পরে নিয়েগপত্রটি পেয়ে ভুক্তভোগী তার ভাই কে নিয়ে বাড়ি আসে। বাড়িতে এসে তারা তাদের গ্রামের আনসারের সিপাহি পদে নিয়োগপত্র পেয়েছে এমন একটি ছেলের নিয়োগপত্রের সাথে তাদের নিয়োগপত্রটির অনেক গরমিল দেখতে পায়। পরবর্তীতে ভুক্তোভোগী খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারে আসামীদের দেওয়া নিয়োগপত্রটি ভুয়া।

তিনি বলেন,এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শাহ আলী থানা এবং র‌্যাব-৪ বরাবর অভিযোগ দায়ের করে। পরে র‌্যাব-৪এর একটি চৌকস আভিযানিক দল আসামিদের অবস্থান সনাক্ত করে গতকাল রাতে (২৩ সেপ্টেম্বর) ঢাকা ও সাভারে অভিযান পরিচালনা করে প্রতারক চক্রের মূলহোতাসহ ছয় জনকে গ্রেফতার করে। এছাড়াও আসামিদের গ্রেফতারের সময় অন্য আরেকজন ভিকটিমকে পাওয়া যায়,যাকে সেনাবাহিনীতে চাকুরী দেওয়ার নাম করে নিয়ে এসেছিল।

গ্রেফতারকৃত আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের কতথ্য জানিয়ে তিনি বলেন,আসামিরা সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য দীর্ঘদিন যাবত ঢাকা মহানগরীতে অবস্থান করে বিভিন্ন জেলার চাকুরী প্রত্যাশীদের কাছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে টাকার মাধ্যমে চাকুরি দেয়ার নামে প্রতারণা করে আসছিলো। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা আছে। এর আগেও একই ধরনের অপরাধে জড়িত থাকার কারণে র‌্যাব-৪ কর্তৃক দুইবার গ্রেফতার করা হয়েছিল তাদের।

গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা ও সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান তিনি।