০৭:২২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫

মালিবাগে স্বর্ণচুরির ঘটনায় চট্টগ্রাম–বরিশাল–নারায়ণগঞ্জে অভিযান:১৯০ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার,গ্রেফতার ৪

  • আপডেট: ০৩:১৬:৫৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫
  • / ১৮০১৪

নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা

রাজধানীর ফরচুন শপিং মলে স্বর্ণের দোকানে চাঞ্চল্যকর চুরির ঘটনায় প্রায় ১৯০ ভরি স্বর্ণ,৯৩.৫ গ্রাম রুপা,নগদ ১ লাখ ৭৭ হাজার ২০০ টাকা এবং একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) লালবাগ বিভাগ। একইসঙ্গে এই ঘটনায় জড়িত চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

গ্রেফতারকৃতরা হলো— শাহিন মাতব্বর ওরফে শাহিন, নুরুল ইসলাম, উত্তম চন্দ্র সূর ও অনিতা রায়।

পুলিশ জানায়,এই চোর চক্রটি প্রায় তিন মাস আগে থেকে এই স্বর্ণের দোকানে চুরির পরিকল্পনায় রেকি শুরু করে। এরপর ঘটনার দিন দিনের বেলা ওই মার্কেটের ওয়াশরুমের জানালায় ইউলুপ ভাবে একটি চিকন সুতা ঝুলিয়ে রাখে। পরে সেই সুতার সাহায্যে একটি মোটা দড়ি বাঁধা ওপরে উঠে জানালার গ্রিল ভেঙে মার্কেটের ভেতরে প্রবেশ করে। সেখানেই আগে থেকে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল বোরকাসহ চুরির কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জান। এরপর বোরকা পরে করা হয় চুরি।

গত ৭২ ঘন্টা চট্টগ্রাম,বরিশাল ও নারায়ণগঞ্জ জেলায় টানা অভিযানে বিভিন্ন জেলা থেকে চোর চক্রটির চারজনকে গ্রেফতার করা হয়।

শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) রাজধানীর মিন্টুরোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সন্মেলনে এসব জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মো.শফিকুল ইসলাম।

মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন,ফরচুন মার্কেটের দোতলায় সম্পা জুয়েলার্সে গত ৮ অক্টোবর দিবাগত রাতে চুরির ঘটনা ঘটে। এঘটনায় রমনা থানায় মামলা দায়েরের পর আমরা ছায়া তদন্ত শুরু করি। সিসিটিভি ফুটেজ,তথ্য-প্রযুক্তি ও মাঠতথ্যের ভিত্তিতে তিন দিনের টানা অভিযানে চোরচক্রকে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়।

মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন,তারা (চুরির ঘটনায় জড়িত আসামিরা) প্রায় তিন মাস ধরে এই দোকান ও মার্কেট পর্যবেক্ষণ (রেকি) করে। ঘটনার দিন দিনের বেলা বাথরুমের জানালায় ইউলুপ করে চিকন সুতা বেঁধে যায়। রাতে এসে সেই সুতার সঙ্গে রশি বেঁধে উপরে উঠে গ্রিল কেটে মার্কেটে প্রবেশ করে। সেখানে বাথরুমে আগে থেকেই বোরকাসহ চুরির কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জান লুকি রাখা ছিলো। এরপর তারা মার্কেটে প্রবেশ করে চুরি সংঘটিত করে।

তিনি বলেন,ডিবির তিনটি টিম টানা ৭২ ঘণ্টা দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়। প্রথমে চট্টগ্রাম থেকে শাহিন মাতব্বরকে,ফরিদপুর থেকে চুরিকৃত স্বর্ণ উদ্ধার,পরে বরিশাল থেকে আরও দুইজনকে গ্রেফতার করে। ঢাকায় ফিরে ডিবি গ্রেফতার করে এই চক্রের সমন্বয়কারী নুরুল ইসলামকে যিনি মোটরসাইকেল ব্যবহার করে মার্কেটের রেকি করেন এবং চুরি শেষে সেই মোটরসাইকেলে করে আসামিদের গন্তব্যে পৌঁছে দিয়ে আসে।

ডিবি কর্মকর্তা বলেন,চক্রটি অত্যন্ত সংগঠিত ও পেশাদার। তারা এর আগেও ২০২১ সালে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী মার্কেটে স্বর্ণ চুরির ঘটনায় জড়িত ছিল। সেই ঘটনায় গ্রেফতারের পর জামিনে এসে আবার একই ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।

তদন্তে জানা গেছে,গ্রেফতারকৃতদের একজনের স্ত্রীও বিষয়টি জানতেন এবং সহযোগিতা করেছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে।

উদ্ধার ১৯০ ভরি,বাকি স্বর্ণ কোথায়? এমন প্রশ্নের উত্তরে ডিবি জানায়, চুরিকৃত স্বর্ণের মালিক দাবি করেছেন, তার দোকানে মোট ৫০০ ভরি স্বর্ণ ছিল। তবে উদ্ধার হয়েছে ১৯০ ভরি। বাকি স্বর্ণ কোথায় আছে, তা জানতে ডিবি তদন্ত অব্যাহত রেখেছে। একজন আসামি এখনও পলাতক আছে। তাকে গ্রেফতার করতে পারলে বাকি স্বর্ণের অবস্থান জানা যাবে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

তিনি আরও বলেন,চুরি হওয়া স্বর্ণ এখনো বিক্রির পর্যায়ে যায়নি। কিছু অংশ গলানো অবস্থায় পাওয়া গেছে, যেখানে দোকানের ট্যাগ এখনো লেগে আছে। বিক্রির আগে আমরা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি।

ডিবি এই কর্মকর্তা বলেন,চক্রের সদস্যরা সাধারণত কৃষিকাজ ও গরুর ফার্মে কাজ করার পরিচয়ে এলাকায় অবস্থান করতো। কিন্তু গোপনে পরিকল্পিতভাবে বড় ধরনের চুরির প্রস্তুতি নিত। সুযোগ পেলেই স্বর্ণ বা মূল্যবান জিনিস চুরি করতো।

তিনি বলেন,গত এক বছরে ঢাকা মহানগরীতে সংঘটিত বড় ধরনের সম্পদসংক্রান্ত অপরাধের প্রায় সবগুলোই উদ্ঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। ফরচুন মার্কেটের ঘটনাটিও তার একটি উদাহরণ।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

মালিবাগে স্বর্ণচুরির ঘটনায় চট্টগ্রাম–বরিশাল–নারায়ণগঞ্জে অভিযান:১৯০ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার,গ্রেফতার ৪

আপডেট: ০৩:১৬:৫৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা

রাজধানীর ফরচুন শপিং মলে স্বর্ণের দোকানে চাঞ্চল্যকর চুরির ঘটনায় প্রায় ১৯০ ভরি স্বর্ণ,৯৩.৫ গ্রাম রুপা,নগদ ১ লাখ ৭৭ হাজার ২০০ টাকা এবং একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) লালবাগ বিভাগ। একইসঙ্গে এই ঘটনায় জড়িত চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

গ্রেফতারকৃতরা হলো— শাহিন মাতব্বর ওরফে শাহিন, নুরুল ইসলাম, উত্তম চন্দ্র সূর ও অনিতা রায়।

পুলিশ জানায়,এই চোর চক্রটি প্রায় তিন মাস আগে থেকে এই স্বর্ণের দোকানে চুরির পরিকল্পনায় রেকি শুরু করে। এরপর ঘটনার দিন দিনের বেলা ওই মার্কেটের ওয়াশরুমের জানালায় ইউলুপ ভাবে একটি চিকন সুতা ঝুলিয়ে রাখে। পরে সেই সুতার সাহায্যে একটি মোটা দড়ি বাঁধা ওপরে উঠে জানালার গ্রিল ভেঙে মার্কেটের ভেতরে প্রবেশ করে। সেখানেই আগে থেকে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল বোরকাসহ চুরির কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জান। এরপর বোরকা পরে করা হয় চুরি।

গত ৭২ ঘন্টা চট্টগ্রাম,বরিশাল ও নারায়ণগঞ্জ জেলায় টানা অভিযানে বিভিন্ন জেলা থেকে চোর চক্রটির চারজনকে গ্রেফতার করা হয়।

শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) রাজধানীর মিন্টুরোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সন্মেলনে এসব জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মো.শফিকুল ইসলাম।

মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন,ফরচুন মার্কেটের দোতলায় সম্পা জুয়েলার্সে গত ৮ অক্টোবর দিবাগত রাতে চুরির ঘটনা ঘটে। এঘটনায় রমনা থানায় মামলা দায়েরের পর আমরা ছায়া তদন্ত শুরু করি। সিসিটিভি ফুটেজ,তথ্য-প্রযুক্তি ও মাঠতথ্যের ভিত্তিতে তিন দিনের টানা অভিযানে চোরচক্রকে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়।

মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন,তারা (চুরির ঘটনায় জড়িত আসামিরা) প্রায় তিন মাস ধরে এই দোকান ও মার্কেট পর্যবেক্ষণ (রেকি) করে। ঘটনার দিন দিনের বেলা বাথরুমের জানালায় ইউলুপ করে চিকন সুতা বেঁধে যায়। রাতে এসে সেই সুতার সঙ্গে রশি বেঁধে উপরে উঠে গ্রিল কেটে মার্কেটে প্রবেশ করে। সেখানে বাথরুমে আগে থেকেই বোরকাসহ চুরির কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জান লুকি রাখা ছিলো। এরপর তারা মার্কেটে প্রবেশ করে চুরি সংঘটিত করে।

তিনি বলেন,ডিবির তিনটি টিম টানা ৭২ ঘণ্টা দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়। প্রথমে চট্টগ্রাম থেকে শাহিন মাতব্বরকে,ফরিদপুর থেকে চুরিকৃত স্বর্ণ উদ্ধার,পরে বরিশাল থেকে আরও দুইজনকে গ্রেফতার করে। ঢাকায় ফিরে ডিবি গ্রেফতার করে এই চক্রের সমন্বয়কারী নুরুল ইসলামকে যিনি মোটরসাইকেল ব্যবহার করে মার্কেটের রেকি করেন এবং চুরি শেষে সেই মোটরসাইকেলে করে আসামিদের গন্তব্যে পৌঁছে দিয়ে আসে।

ডিবি কর্মকর্তা বলেন,চক্রটি অত্যন্ত সংগঠিত ও পেশাদার। তারা এর আগেও ২০২১ সালে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী মার্কেটে স্বর্ণ চুরির ঘটনায় জড়িত ছিল। সেই ঘটনায় গ্রেফতারের পর জামিনে এসে আবার একই ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।

তদন্তে জানা গেছে,গ্রেফতারকৃতদের একজনের স্ত্রীও বিষয়টি জানতেন এবং সহযোগিতা করেছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে।

উদ্ধার ১৯০ ভরি,বাকি স্বর্ণ কোথায়? এমন প্রশ্নের উত্তরে ডিবি জানায়, চুরিকৃত স্বর্ণের মালিক দাবি করেছেন, তার দোকানে মোট ৫০০ ভরি স্বর্ণ ছিল। তবে উদ্ধার হয়েছে ১৯০ ভরি। বাকি স্বর্ণ কোথায় আছে, তা জানতে ডিবি তদন্ত অব্যাহত রেখেছে। একজন আসামি এখনও পলাতক আছে। তাকে গ্রেফতার করতে পারলে বাকি স্বর্ণের অবস্থান জানা যাবে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

তিনি আরও বলেন,চুরি হওয়া স্বর্ণ এখনো বিক্রির পর্যায়ে যায়নি। কিছু অংশ গলানো অবস্থায় পাওয়া গেছে, যেখানে দোকানের ট্যাগ এখনো লেগে আছে। বিক্রির আগে আমরা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি।

ডিবি এই কর্মকর্তা বলেন,চক্রের সদস্যরা সাধারণত কৃষিকাজ ও গরুর ফার্মে কাজ করার পরিচয়ে এলাকায় অবস্থান করতো। কিন্তু গোপনে পরিকল্পিতভাবে বড় ধরনের চুরির প্রস্তুতি নিত। সুযোগ পেলেই স্বর্ণ বা মূল্যবান জিনিস চুরি করতো।

তিনি বলেন,গত এক বছরে ঢাকা মহানগরীতে সংঘটিত বড় ধরনের সম্পদসংক্রান্ত অপরাধের প্রায় সবগুলোই উদ্ঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। ফরচুন মার্কেটের ঘটনাটিও তার একটি উদাহরণ।