ফ্যাসিস্ট আমলে বিএনপিকে সহায়তার অভিযোগে থেকেছেন কারাগারে,এখন সেলিম প্রধানকে আওয়ামী লীগ বানাচ্ছে কারা?
- আপডেট: ১১:৪৯:১৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫
- / ১৮০১৩
নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা
শেখ পরিবারের এক নিকটাত্মীয় ও সাবেক এক সেনা প্রধানের দুই ভাইয়ের সাথে ব্যবসায়ীক বিরোধ থাকায় আওয়ামী লীগের আমলে কথিত ক্যাসিনো অভিযানে গ্রেফতার করা হয় বিশিষ্ট শিল্পপতি, ব্যবসায়ী জাপান বাংলাদেশ গ্রুপের কর্ণধার সেলিম প্রধানকে। সেসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয় সেলিম প্রধানের সাথে বিএনপি,বিশেষ করে তারেক রহমানের সাথে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। এমনকি দল পরিচালনার জন্য আর্থিক সহায়তাও করছে সেলিম প্রধান। এ নিয়ে সেসময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে ঢালাও করে সংবাদ প্রকাশও হয়েছিল।
ফ্যাসিস্ট সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের সাজানো ক্যাসিনো অভিযানে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর একের পর এক মিথ্যা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। যার কারণে আওয়ামী লীগ আমলে প্রায় পুরোটা সময় তাকে কারাবন্দি থাকতে হয়েছে। বিশেষ করে বিএনপিকে সহায়তা করায় নারায়ণগঞ্জে রুপগঞ্জে সেলিম প্রধানের বাড়ি ভাঙচুর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দখল করা হয়।
পরবর্তী ২০২৩ সালের শেষের দিকে আদালত সেলিম প্রধানকে জামিন দিলে ফের ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন সেলিম প্রধান। তার পর থেকে অন্যতম আওয়ামী লীগের শীর্ষ দুই রাজনীতিবিদ সাবেক পাট ও বস্তমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী ও শামীম ওসমানের সঙ্গে যুদ্ধ করে তাকে টিকে থাকতে হয়েছে। সবশেষ ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিজের রাশিয়ান স্ত্রী জিনাকে নিয়ে পাশে থেকেছেন ছাত্র-জনতার।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর প্রকাশ্যে আসে সেলিম প্রধান। নিজ উপজেলা রূপগঞ্জকে ভালোবেসে এলাকাটির সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের পাশে নিয়ে তিনি নানান সামাজিক কর্মকাণ্ড চালানো শুরু করেন তিনি। তবে হঠাৎই একটি পক্ষ যখন বুঝতে পারে এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সেলিম প্রধানের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে উঠছে তখন সেলিম প্রধানকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে কুৎসা রটনা শুরু হয়।
২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি ধারণ করে ও বিষয়টির তাৎপর্য বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ মানুষদের মধ্যে তুলে ধরতে চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে রাজধানীর বারিধারার ডিপ্লোম্যাটিক জোনে ‘নেক্সাস ক্যাফে প্যালেস’ নামের একটি কফি শপ ও লাইব্রেরি চালু করেন সেলিম প্রধানের স্ত্রী জিনা। সেখানে আবু সাঈদ-মুগ্ধসহ জুলাই নিহতদের স্মৃতি ধরে রাখতে ব্যানার পোস্টার এর পাশাপাশি শহীদ আবু সাঈদ মুগ্ধ কর্নার খোলা হয়, পাশাপাশি সংগ্রহ করা হয় জুলাই আন্দোলনকে ঘিরে লেখা নানান বই। গুলশানের ডিপ্লোম্যাটিক জোন হওয়ায় সেই কফি সাথে সবসময় ডিপ্লোম্যাটিক ব্যক্তিরাই বেশি যেত। তবে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে সেলিম প্রধানের স্ত্রীকে ভুল বুঝিয়ে ওই কফি শপের এক কর্মচারী সেখানে সীসার সরঞ্জাম এনে রাখে। যা পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাৎক্ষণিক জব্দ করে ও সেখান থেকে সেলিম প্রধানকে গ্রেফতার করে। এ ঘটনায় গুলশান থানায় মামলা হওয়ার পর সেলিম প্রধানকে কারাগারে পাঠায় আদালত।
গুলশান থানায় হওয়া মাদকদ্রব্য আইনের মামলাটিতে গতকাল সোমবার আদালত সেলিম প্রধানকে জামিন দেন। তবে মঙ্গলবার হঠাৎই গুলশান থানার হওয়া সন্ত্রাস বিরোধী আইনের একটি মামলায় সেলিম প্রধানকে গ্রেফতার দেখায় পিডাব্লিউ জারি করা হয়। যে মামলাটি মূলত আওয়ামী লীগের মিছিলের কারণে করা হয়। একটি পক্ষ দাবি করছে ওই সময় সেলিম প্রধান আওয়ামী লীগের হয়ে ককটেল ফাটিয়েছে, কিন্তু যে আওয়ামী লীগের আমলে তাকে জেল জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে এমনকি বিএনপি ও তারেক রহমানকে সহায়তার কথা তুলে তাকে এখন কারা তাকে আওয়ামী লীগ বানানোর চেষ্টা করছে সেই প্রশ্ন উঠেছে। এ ঘটনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি ফ্যাসিস্ট হাসিনে বিরোধীশক্তি এই ব্যবসায়ীকে মুক্তির জন্য আহ্বান জানিয়েছে তার পরিবার।
এদিকে একটি সূত্র জানায়, সেলিম প্রধান চলতি বছরে সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের নিয়ে বাংলাদেশ রিপাবলিক পার্টি নামক একটি রাজনৈতিক দল চালু করেন। যে দলটির প্রধান উপদেষ্টার ভূমিকায় আছেন তিনি। আসন্ন নির্বাচনে এই দলটি থেকে সেলিম প্রধান নির্বাচন করবে বলে সেলিম প্রদানের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনাকারী চক্রটি ভীত হয়ে পড়েছে। এজন্য সেলিম প্রধানকে প্রশাসনের সহায়তায় আওয়ামী লীগ বানিয়ে নতুন মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
অন্যদিকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র বলছে, পরবর্তীতে আরো মামলায় গ্রেফতার দেখানো হতে পারে সেলিম প্রধানকে। এমন অনেক মামলার তথ্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।




















