সূত্রাপুরে গুলিতে নিহত মামুন, পরিবারের অভিযোগ—শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের নির্দেশে খুন
- আপডেট: ০৮:৪৭:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫
- / ১৮০০২
নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা
ফের উত্তপ্ত হচ্ছে ঢাকার’আন্ডারওয়ার্ল্ড’।বিদেশে থেকে রাজধানীর অপরাধ সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছেন শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে পটপরিবর্তনের পর উদ্ভূত পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কারাগার থেকে জামিনে বের হয়ে আসেন তালিকাভুক্ত ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর ছয়জন। এক থেকে দেড় যুগের বেশি সময় ধরে তারা ছিলেন কারাঅন্তরীণ। আধিপত্য ধরে রাখতে কারামুক্ত হয়েই মরিয়া হয়ে উঠেছেন ছয় শীর্ষ সন্ত্রাসীর মধ্যে অন্যতম সানজিদুল ইসলাম ইমন।
রাজধানীর সুত্রাপুরে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের সামনে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত ব্যক্তির পরিচয় জানা গেছে। তার নাম তারিক সাইফ মামুন (৫৫), বাড়ি লক্ষ্মীপুর সদরে। তিনি ঢাকার তালিকাভূক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী।
সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মামুনকে গুলি করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে সেখানেই পড়ে থাকেন তিনি।প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ বলছে, দুর্বৃত্তরা খুব কাছ থেকে তাকে গুলি করে।
মামুনের বোন দিনা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তার ভাইকে শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনই মেরে ফেলেছে। তিনি ভাই হত্যার বিচার দাবি করেন।
কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ইয়াসিন বলেন, ‘গুলির শব্দ শুনতে পেয়ে ন্যাশনাল হাসপাতালের সামনে এসে দেখি অজ্ঞাত এক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে আছেন। খুব কাছ থেকে তাকে গুলি করা হয়েছে।’
প্রত্যক্ষদর্শী এক ব্যক্তি বলেন, দুজন ব্যক্তি ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের প্রবেশমুখে এসে ওই ব্যক্তিকে পেছন থেকে গুলি করে। বেশ কয়েকটি গুলি করার পর ওই ব্যক্তি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এরপর তারা মোটরসাইকেলযোগে পালিয়ে যান।
গুলিবিদ্ধ মামুনকে ঢামেকে নেওয়া হলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে মৃত ঘোষণা করেন।
চিকিৎসকের বরাত দিয়ে ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. ফারুক মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘মরদেহ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।’
নিহত মামুন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মোবারক কলোনী সমসেরা বাদ গ্রামের এস এম ইকবাল এর ছেলে। বর্তমানে বাড্ডার আফতাব নগরের ভাড়া বাসায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন।
নিহতের স্ত্রী বিলকিস আক্তার রীপা বলেন, ‘সোমবার সকালে কোর্টে হাজিরা দেওয়ার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন তিনি।পরে সংবাদ পাই তাকে গুলি করা হয়েছে। তবে কি কারণে শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের সহযোগীরা কেন গুলি করা হয়েছে তা জানতে পারিনি।
৫ আগস্টের পর কারাগার থেকে মুক্ত হওয়া ছয় শীর্ষ সন্ত্রাসীর মধ্যে অন্যতম সানজিদুল ইসলাম ইমন। গত ১৫ আগস্ট বিকালে তিনি জামিনে মুক্তি পান। অভিযোগ উঠেছে, মুক্তি পেয়েই আধিপত্য বিস্তারে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন ইমন ও তার ক্যাডাররা। জোন ভাগ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে গড়ে তুলেছেন চাঁদাবাজির বলয়। ঢাকা দক্ষিণের প্রায় সব এলাকার টেন্ডার (ময়লা অপসারণ, রাস্তা-ঘাট নির্মাণ-সংস্কার) বাণিজ্য, ডিশ-ইন্টারনেট ব্যবসা, পরিবহন, ফুটপাত, বাজার, ঝুট ব্যবসা, সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি দখল, ভবন নির্মাণ (ডেভেলপার) প্রতিষ্ঠান, গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন খাত থেকে আসা কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজির নাটাই এখন ইমনের হাতে। ফুটপাতের চা-দোকানি থেকে বহুতল ভবনের ব্যবসায়ীকেও মাসিক চাঁদার হার বেঁধে দিয়েছে তার ক্যাডাররা। দাবিকৃত চাঁদার টাকা না দিলেই সদলবলে অস্ত্র নিয়ে হামলে পড়ছে ব্যবসায়ীদের ওপর।
সর্বশেষ চাঁদার টাকা না পেয়ে গত শুক্রবার মধ্যরাতে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের সামনের সড়কে প্রকাশ্যে দুই কম্পিউটার ব্যবসায়ী নেতাকে কুপিয়েছে ইমনের মুখোশধারী ক্যাডাররা।
এই বিষয়ে ডিএমপির মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের (ডিসি)মোহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন,নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ মামলা করলে আমরা তদন্ত করে এই খুনের সাথে কারা জড়িত ছিলেন তা আমরা খতিয়ে দেখে আইনের আওতায় নিয়ে আসবো।




















