১০:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৯ অগাস্ট ২০২৫

না.গঞ্জ এলএ শাখার সবচেয়ে বড় টাকার কুমির! বিভাগীয় কমিশনার-ডিসি-এডিসি আমার ডান পকেটে রাখি: সার্ভেয়ার মামুন

সোনালী খবর
সোনালী খবর
  • আপডেট: ০৮:৫৩:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ অগাস্ট ২০২৫
  • / ১৮০০৭

মোঃ মনিরুজ্জামান:
“সর্বাঙ্গে ব্যাথা মলম দিব কোথা” একসময়ের এ প্রবাদ বাক্যটি এখন দেশের সবকটি সরকারি প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে ভুমি অফিস, এসিল্যান্ড অফিসগুলোতে প্রবল প্রচলিত। কারন দেশের ভুমি অফিসগুলোতে এখনো ঘাপটি মেরে বসে আছে ফ্যাসিস্ট পতিত সরকারের ঘুষখোর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কর্মচারী। এমনই একটি অফিস হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ জেলার ভুমি অধিগ্রহণ শাখা। যার পরদে পরদে ঘুষ দুর্নীতি যেন প্রতিটি ইটের সাথে মিশে আছে। আর এই নারায়ণগঞ্জ জেলার ভুমি অধিগ্রহণ শাখার দুর্নীতিতে সবচেয়ে বড় টাকার কুমির সার্ভেয়ার মামুন। সার্ভেয়ার মামুন নারায়ণগঞ্জ জেলার ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় ২০১৯ সার্ভেয়ার পদে পোষ্টিং পায় তৎকালীন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের ক্ষমতাধর এমপির তদবিরে নারায়ণগঞ্জ ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় বদলি হয়ে আসেন। ৫ আগষ্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর ২০২৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর এর পরে বাংলাদেশের ভূমি প্রশাসনের সকল স্তরের কর্মকর্তা কর্মচারী বদলি হয়। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ ভূমি অধিগ্রহণ শাখার টাকার কুমির সার্ভেয়ার মামুনকে কোনো ধরনের বদলি করা হয়নি। তার ডান বাম পকেটে তিনি বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি এডিসিকে রাখেন বলে বুকফুলিয়ে জানান। টাকার বিনিময়ে তিনি চাইলে বাঘের দুধও নাকি কিনতে পারেন আর তাইতে এখনো কেউ তার কিছুই করতে পারেন নাই। অনুসন্ধানে জানা যায়, ততকালীন আওয়ামীলীগ সরকার আমলে নিয়োগ প্রাপ্ত সার্ভেয়ার মামুন, আনোয়ার কানুনগো হাবিবুর রহমান বিভিন্ন উপায়ে ঢাকা সিলেট মহাসড়কের জমি অধিগ্রহণ ক্ষেত্রে জমির মূল্য বেশী করে দেখানোর কথা বলে সাধারণ মানুষ এর কাছ থেকে নাল শ্রেণির জমিকে ভিটি এবং বাণিজ্যিক শ্রেণির জমি দেখিয়ে মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা উত্তোলন করছেন। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক প্রশস্ত করার প্রকল্প নেওয়া হয় ২০২২ সালে। এই প্রকল্পের আওতায় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় জমি অধিগ্রহণে ঘটেছে নজিরবিহিন দুর্নীতি। ঘুষের বিনিময়ে নাল, ভিটি ও ডোবা হয়েছে বাণিজ্যিক, আর ঘুষ না পেলেই বাণিজ্যিক জমি হয়ে গেছে ভিটা। এতে সরকারের বাড়তি খরচ হয়েছে অন্তত ৪৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। আর এসব কিছুর পেছনে রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ ডিসি অফিসের কানুনগো এবিএম হাবিব উল্লাহ, সার্ভেয়ার মো. মামুন হোসেন, মো. আনোয়ার হোসেন এবং সড়ক ও জনপথের সার্ভেয়ার দেওয়ান মো. সোহাগ। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব এর মাধ্যমে জেলা প্রশাসক এবং বিভাগীয় কমিশনার ঢাকা বিভাগ ঢাকাকে মাসিক চাঁদা দিয়ে নারায়ণগঞ্জ এলএ শাখায় বহাল তবিয়তে আছেন সার্ভেয়ার মামুন। কামিয়েছেন বিপুল পরিমান কালো টাকা।
সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনে জমা পড়া একটি অভিযোগ থেকে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে। বিষয়টি আমলে নিয়ে দুদকের পক্ষ থেকে যাচাই করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
অনুসন্ধানে দেখা যায় সার্ভেয়ার মামুন এর পূর্বাচল উপশহরে তার নামে পাঁচ কাঠা এবং তার স্ত্রীর নামে পাঁচ কাঠা, ঝিলমিল প্রকল্পে তিন কাঠা তার স্ত্রীর নামে, উত্তরা নিগার প্লাজায় রূপসী কালেকশান নামে তার একটি কসমেটিক দোকান আছে। যার বর্তমান মূল্য ৩-৪ কোটি টাকা। ঢাকার মীরহাজারি বাগের রূপসী কালেকশান নামে শীটের দোকান আছে। ঢাকার উত্তরাতে ৬ নম্বর সেক্টরের রোড নং ১১ বিথি অহির নামে একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন, বর্তমানে ইনটোরিয়রের কাজ চলছে। ঢাকা উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টর, রোড নম্বর ৩/এ একটি বায়িং হাউজ খুলছেন তার বন্ধু সুলতানকে এমডি করছেন। আর তার নাম হচ্ছে ইকরা লাইট হাউজ। তাঁর নিজ বাড়ি পটুয়াখালী জেলার বাউফল থানা শহরের মদনপুরা ইউনিয়নে। তার কৃষক বাবার নামে ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকার জমি কিনে দিয়েছেন। বাউফল উপজেলার মদনপুরা ইউনিয়নে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট এর একজন নেতাকে সার্ভেয়ার মামুন কোটি টাকা খরচ করে চেয়ারম্যান বানিয়েছেন। বর্তমানে সে পলাতক অনেক মামলার আসামি মামুন তাকে বিভিন্নভাবে টাকা দিয়ে সহযোগিতা ও আশ্রয়-প্রদান করছে। প্রশ্ন উঠেছে, একজন ১২ গ্রেডের সরকারী কর্মকর্তার ২৪ হাজার টাকা বেসিকে সর্বসাকুল্যে যার বেতন ৪০ হাজার টাকা অথচ তিনি অফিস করেন ব্যক্তিগত টয়োটা প্রিমিও মডেলের খয়েরি কালারের গাড়িতে চড়ে।
তার ড্রাইভার সোহেল জানান, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের পূর্বপাশে মামুনের রয়েছে ব্যক্তিগত অফিস । ১৫ হাজার টাকা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে ব্যক্তিগত অফিস সাজিয়েছেন তিনি। এখানে বসেই সকল লেনদেন করা হয়।
সার্ভেয়ার মামুনের ইচ্ছার বাহিরে নারায়ণগঞ্জ ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় কোনো সার্ভেয়ার বা কোনো ধরনের ষ্টাফ বদলি করা হয় না মামুন এর তৎপরতায়। আরও জানা যায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব মোঃ জাহিদ হাসান সিদ্দিকী তার মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ ভুমি অধিগ্রহণ শাখায় সার্ভেয়ার মামুন নিয়ন্ত্রণ করে একটা বিশাল সিন্ডিকেট তৈরি করে রেখেছেন। সার্ভেয়ার মামুন ইতোমধ্যে তার চাকরি ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় ছয় বছরের অধিক হওয়ায় বর্তমানে এডিসি জাহিদ হাসান সিদ্দিকীর মাধ্যমে প্রায় কোটি টাকা খরচ করে তার বদলি আদেশ নবায়ন করে নেন। মামুন গংদের দূর্নীতির ফিরিস্তি হিসেবে রয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন মৌজায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক প্রশস্তকরণের জন্য প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। তার মধ্যে রূপগঞ্জ উপজেলায় ২১/২০২১-২০২২ নং এলএ কেসের মাধ্যমে অধিগ্রহণ কার্যক্রম ২০২১ সালে শুরু করা হয় এবং ২০২২ সালে ৪(১) ধারা নোটিশ মাঠে জারী করা হয়। ৪(১) ধারা নোটিশ জারীর পর ৪ (৭) ধারা মোতাবেক নোটিশ জারীর পর অসৎ উদ্দেশ্যে স্থাপনা নির্মাণ বা শ্রেণি পরিবর্তন বা অন্য কোন পরিবর্তন করা হলে তা যৌথ তদন্তে অন্তর্ভূক্ত না করার নির্দেশনা রয়েছে কিন্তু এ প্রকল্পে ঘুষের বিনিময়ে ৪(১) ধারা নোটিশের পর দীর্ঘ দিন পর পর প্রকল্প সংশোধন করে বাস্তব শ্রেণী পরিবর্তন করতে তারা সহায়তা করেন। অপরদিকে যে টাকা দিয়েছে তাকে বাণিজ্যিক শ্রেণী দেয়া হয়ছে উদাহরণস্বরূপ যেমন বরপা মৌজার ৩৯১ নং দাগে আলামিনের মুদি দোকানকে বাণিজ্যিক কিন্তু সুমি আক্তারের দোকানকে দোকান দেয়া হয়েছে, বরপা মৌজার ৭৭২ নং দাগে মনিরুল আলমের মার্কেটের মতো দোকানকে দোকান দেয়া হয়েছে, বরপা মৌজার ৭৭৩ নং দাগে হাজী মোখলেছুর রহমান ৪(১) ধারা নোটিশের পর ফ্যক্টরী সেড নির্মাণ করার পর ও তা উত্তোলন করেন এবং এই সেড দেখিয়ে দাগে ৩ জনের জমিই বাণিজ্যিক দেখানো হয়েছে, বরপা মৌজার ৭৭৬ নং দাগে ইমাম হোসেনের কোন স্থাপনাই নাই অথচ ইমাম হোসেনের জমিকে বাণিজ্যিক দেখানো হয়েছে, বরপা মৌজার ৭৮৪ নং দাগে লোকমান হোসেনের দোকানকে বানিজ্যিক দেখানো হয়েছে, বরপা মৌজার ৭৮৭ নং দাগে হাজী চিনু বেপারীর দোকান সমূহকে বাণিজ্যিক দেখানো হয়েছে, বরপা মৌজার ৭৮৯ নং দাগে আবুল হোসেন সাউদ এর দোকান সমূহকে বাণিজ্যিক দেখানো হয়েছে, বরপা মৌজার ৭৯০ নং দাগে শাহ আলম, নুরুজ্জামান, আসলাম ভূইয়া, মোরসালিন ভূইয়া এর দোকান সমূহকে বাণিজ্যিক দেখানো হয়েছে, খাদুন মৌজায় ৯২ ও ৯৫ নং দাগে সিটি গ্রুপের খালী জমিকে বানিজ্যিক দেখানো হয়েছে অথচ আধুরিয়া মৌজায় রাজ্জাক টেক্সটাইল মিলের ও মাহনা মৌজার ৩১, ৩৩, ৩৮, ৩৯, ১১৯, ১২০,১২১ নং দাগে মেট্রো স্পিনিং মিল ও রাজ্জাক টেক্সটাইল মিল এবং টেক্স মেক্স লিঃ এর খালী জমিকে ভিটি দেখানো হয়েছে, খাদুন মৌজার ৪৩২ নং দাগে মাহাবুব আলম এর দোকানকে বাণিজ্যিক দেখানো হয়েছে, আড়িয়াব মৌজার ১০৫ নং দাগে মজিবর ভূইয়ার দোকানের জমিকে বানিজ্যিক দেখানো হয়েছে আবার ১০৬ নং দাগে শাহিন ভূইয়া ও নুরুল হকের দোকানকে দোকান শ্রেনী দেখানো হয়েছে ১০৭ নং দাগে ইমাম হোসেনের দোকানকে দোকান হিসেবে দেখানো হয়েছে, ১৯৫ নং দাগে রিতা রানীর দোকানকে দোকান হিসেবে দেখানো হয়েছে, ১৯৬ নং দাগে লক্ষি রানী ও অভিরাম এর দোকানকে দোকান হিসেবে দেখানে হয়েছে, এখানে এ কারনে দেখানো হলো যে একই শ্রেনীর জমি ১ জন টাকা দিলো আর তার জমি বাণিজ্যিক হলো আরেকজন টাকা দেয়ানি এ জন্য তার জমি দোকান শ্রেণির রয়ে গেল।
একইভাবে আরো বেশ কয়েকটি মৌজা ও দাগ নাম্বারের নাল জমিকে দোকান হিসেবে দেখিয়ে লুটের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন সার্ভেয়ার মামুন গং। প্রকল্পটি ঘিরে নারায়ণগঞ্জ জেলার এলএ শাখার কানুনগো এবিএম হাবিব উল্লাহ ও সার্ভেয়ার মামুন হোসেন, সার্ভেয়ার আনোয়ার হোসেন এবং সড়ক জনপথের সার্ভেয়ার দেওয়ান মো. সোহাগ একটি সিন্ডিকেডের মাধ্যমে আনুমানিক প্রায় ৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে সরকারের প্রকল্প ব্যায় প্রায় ৪৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা বৃদ্ধি করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে এতো অভিযোগের পরও মামুন বড়াই করে বলে বেড়ান, এসব কর্মকাণ্ড তিনি বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি, এডিসিকে ম্যানেজ করে এগুলো করে থাকেন।
এদিকে সাধারণ ভুমি সেবাপ্রত্যাশিরা এই দুর্নীতিবাজ সার্ভেয়ার মামুন ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের অনৈতিক ঘুষ লেনদেনে অতিষ্ট হয়ে তাদের শাস্তির দাবী জানান। সরকারি চাকুরীতে ঘুষ দুর্নীতির অভিযোগ বা প্রমাণ পেলে লঘু দন্ড হিসেবে হয় বদলি না হয় সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কিন্তু জনদাবী হচ্ছে সার্ভেয়ার মামুনদের মত দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কর্মচারীদের চাকুরী থেকে গুরু দন্ড হিসেবে চাকুরিচ্যুত করে আইনের আওতায় আনা হোক।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

না.গঞ্জ এলএ শাখার সবচেয়ে বড় টাকার কুমির! বিভাগীয় কমিশনার-ডিসি-এডিসি আমার ডান পকেটে রাখি: সার্ভেয়ার মামুন

আপডেট: ০৮:৫৩:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ অগাস্ট ২০২৫

মোঃ মনিরুজ্জামান:
“সর্বাঙ্গে ব্যাথা মলম দিব কোথা” একসময়ের এ প্রবাদ বাক্যটি এখন দেশের সবকটি সরকারি প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে ভুমি অফিস, এসিল্যান্ড অফিসগুলোতে প্রবল প্রচলিত। কারন দেশের ভুমি অফিসগুলোতে এখনো ঘাপটি মেরে বসে আছে ফ্যাসিস্ট পতিত সরকারের ঘুষখোর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কর্মচারী। এমনই একটি অফিস হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ জেলার ভুমি অধিগ্রহণ শাখা। যার পরদে পরদে ঘুষ দুর্নীতি যেন প্রতিটি ইটের সাথে মিশে আছে। আর এই নারায়ণগঞ্জ জেলার ভুমি অধিগ্রহণ শাখার দুর্নীতিতে সবচেয়ে বড় টাকার কুমির সার্ভেয়ার মামুন। সার্ভেয়ার মামুন নারায়ণগঞ্জ জেলার ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় ২০১৯ সার্ভেয়ার পদে পোষ্টিং পায় তৎকালীন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের ক্ষমতাধর এমপির তদবিরে নারায়ণগঞ্জ ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় বদলি হয়ে আসেন। ৫ আগষ্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর ২০২৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর এর পরে বাংলাদেশের ভূমি প্রশাসনের সকল স্তরের কর্মকর্তা কর্মচারী বদলি হয়। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ ভূমি অধিগ্রহণ শাখার টাকার কুমির সার্ভেয়ার মামুনকে কোনো ধরনের বদলি করা হয়নি। তার ডান বাম পকেটে তিনি বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি এডিসিকে রাখেন বলে বুকফুলিয়ে জানান। টাকার বিনিময়ে তিনি চাইলে বাঘের দুধও নাকি কিনতে পারেন আর তাইতে এখনো কেউ তার কিছুই করতে পারেন নাই। অনুসন্ধানে জানা যায়, ততকালীন আওয়ামীলীগ সরকার আমলে নিয়োগ প্রাপ্ত সার্ভেয়ার মামুন, আনোয়ার কানুনগো হাবিবুর রহমান বিভিন্ন উপায়ে ঢাকা সিলেট মহাসড়কের জমি অধিগ্রহণ ক্ষেত্রে জমির মূল্য বেশী করে দেখানোর কথা বলে সাধারণ মানুষ এর কাছ থেকে নাল শ্রেণির জমিকে ভিটি এবং বাণিজ্যিক শ্রেণির জমি দেখিয়ে মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা উত্তোলন করছেন। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক প্রশস্ত করার প্রকল্প নেওয়া হয় ২০২২ সালে। এই প্রকল্পের আওতায় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় জমি অধিগ্রহণে ঘটেছে নজিরবিহিন দুর্নীতি। ঘুষের বিনিময়ে নাল, ভিটি ও ডোবা হয়েছে বাণিজ্যিক, আর ঘুষ না পেলেই বাণিজ্যিক জমি হয়ে গেছে ভিটা। এতে সরকারের বাড়তি খরচ হয়েছে অন্তত ৪৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। আর এসব কিছুর পেছনে রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ ডিসি অফিসের কানুনগো এবিএম হাবিব উল্লাহ, সার্ভেয়ার মো. মামুন হোসেন, মো. আনোয়ার হোসেন এবং সড়ক ও জনপথের সার্ভেয়ার দেওয়ান মো. সোহাগ। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব এর মাধ্যমে জেলা প্রশাসক এবং বিভাগীয় কমিশনার ঢাকা বিভাগ ঢাকাকে মাসিক চাঁদা দিয়ে নারায়ণগঞ্জ এলএ শাখায় বহাল তবিয়তে আছেন সার্ভেয়ার মামুন। কামিয়েছেন বিপুল পরিমান কালো টাকা।
সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনে জমা পড়া একটি অভিযোগ থেকে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে। বিষয়টি আমলে নিয়ে দুদকের পক্ষ থেকে যাচাই করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
অনুসন্ধানে দেখা যায় সার্ভেয়ার মামুন এর পূর্বাচল উপশহরে তার নামে পাঁচ কাঠা এবং তার স্ত্রীর নামে পাঁচ কাঠা, ঝিলমিল প্রকল্পে তিন কাঠা তার স্ত্রীর নামে, উত্তরা নিগার প্লাজায় রূপসী কালেকশান নামে তার একটি কসমেটিক দোকান আছে। যার বর্তমান মূল্য ৩-৪ কোটি টাকা। ঢাকার মীরহাজারি বাগের রূপসী কালেকশান নামে শীটের দোকান আছে। ঢাকার উত্তরাতে ৬ নম্বর সেক্টরের রোড নং ১১ বিথি অহির নামে একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন, বর্তমানে ইনটোরিয়রের কাজ চলছে। ঢাকা উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টর, রোড নম্বর ৩/এ একটি বায়িং হাউজ খুলছেন তার বন্ধু সুলতানকে এমডি করছেন। আর তার নাম হচ্ছে ইকরা লাইট হাউজ। তাঁর নিজ বাড়ি পটুয়াখালী জেলার বাউফল থানা শহরের মদনপুরা ইউনিয়নে। তার কৃষক বাবার নামে ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকার জমি কিনে দিয়েছেন। বাউফল উপজেলার মদনপুরা ইউনিয়নে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট এর একজন নেতাকে সার্ভেয়ার মামুন কোটি টাকা খরচ করে চেয়ারম্যান বানিয়েছেন। বর্তমানে সে পলাতক অনেক মামলার আসামি মামুন তাকে বিভিন্নভাবে টাকা দিয়ে সহযোগিতা ও আশ্রয়-প্রদান করছে। প্রশ্ন উঠেছে, একজন ১২ গ্রেডের সরকারী কর্মকর্তার ২৪ হাজার টাকা বেসিকে সর্বসাকুল্যে যার বেতন ৪০ হাজার টাকা অথচ তিনি অফিস করেন ব্যক্তিগত টয়োটা প্রিমিও মডেলের খয়েরি কালারের গাড়িতে চড়ে।
তার ড্রাইভার সোহেল জানান, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের পূর্বপাশে মামুনের রয়েছে ব্যক্তিগত অফিস । ১৫ হাজার টাকা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে ব্যক্তিগত অফিস সাজিয়েছেন তিনি। এখানে বসেই সকল লেনদেন করা হয়।
সার্ভেয়ার মামুনের ইচ্ছার বাহিরে নারায়ণগঞ্জ ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় কোনো সার্ভেয়ার বা কোনো ধরনের ষ্টাফ বদলি করা হয় না মামুন এর তৎপরতায়। আরও জানা যায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব মোঃ জাহিদ হাসান সিদ্দিকী তার মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ ভুমি অধিগ্রহণ শাখায় সার্ভেয়ার মামুন নিয়ন্ত্রণ করে একটা বিশাল সিন্ডিকেট তৈরি করে রেখেছেন। সার্ভেয়ার মামুন ইতোমধ্যে তার চাকরি ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় ছয় বছরের অধিক হওয়ায় বর্তমানে এডিসি জাহিদ হাসান সিদ্দিকীর মাধ্যমে প্রায় কোটি টাকা খরচ করে তার বদলি আদেশ নবায়ন করে নেন। মামুন গংদের দূর্নীতির ফিরিস্তি হিসেবে রয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন মৌজায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক প্রশস্তকরণের জন্য প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। তার মধ্যে রূপগঞ্জ উপজেলায় ২১/২০২১-২০২২ নং এলএ কেসের মাধ্যমে অধিগ্রহণ কার্যক্রম ২০২১ সালে শুরু করা হয় এবং ২০২২ সালে ৪(১) ধারা নোটিশ মাঠে জারী করা হয়। ৪(১) ধারা নোটিশ জারীর পর ৪ (৭) ধারা মোতাবেক নোটিশ জারীর পর অসৎ উদ্দেশ্যে স্থাপনা নির্মাণ বা শ্রেণি পরিবর্তন বা অন্য কোন পরিবর্তন করা হলে তা যৌথ তদন্তে অন্তর্ভূক্ত না করার নির্দেশনা রয়েছে কিন্তু এ প্রকল্পে ঘুষের বিনিময়ে ৪(১) ধারা নোটিশের পর দীর্ঘ দিন পর পর প্রকল্প সংশোধন করে বাস্তব শ্রেণী পরিবর্তন করতে তারা সহায়তা করেন। অপরদিকে যে টাকা দিয়েছে তাকে বাণিজ্যিক শ্রেণী দেয়া হয়ছে উদাহরণস্বরূপ যেমন বরপা মৌজার ৩৯১ নং দাগে আলামিনের মুদি দোকানকে বাণিজ্যিক কিন্তু সুমি আক্তারের দোকানকে দোকান দেয়া হয়েছে, বরপা মৌজার ৭৭২ নং দাগে মনিরুল আলমের মার্কেটের মতো দোকানকে দোকান দেয়া হয়েছে, বরপা মৌজার ৭৭৩ নং দাগে হাজী মোখলেছুর রহমান ৪(১) ধারা নোটিশের পর ফ্যক্টরী সেড নির্মাণ করার পর ও তা উত্তোলন করেন এবং এই সেড দেখিয়ে দাগে ৩ জনের জমিই বাণিজ্যিক দেখানো হয়েছে, বরপা মৌজার ৭৭৬ নং দাগে ইমাম হোসেনের কোন স্থাপনাই নাই অথচ ইমাম হোসেনের জমিকে বাণিজ্যিক দেখানো হয়েছে, বরপা মৌজার ৭৮৪ নং দাগে লোকমান হোসেনের দোকানকে বানিজ্যিক দেখানো হয়েছে, বরপা মৌজার ৭৮৭ নং দাগে হাজী চিনু বেপারীর দোকান সমূহকে বাণিজ্যিক দেখানো হয়েছে, বরপা মৌজার ৭৮৯ নং দাগে আবুল হোসেন সাউদ এর দোকান সমূহকে বাণিজ্যিক দেখানো হয়েছে, বরপা মৌজার ৭৯০ নং দাগে শাহ আলম, নুরুজ্জামান, আসলাম ভূইয়া, মোরসালিন ভূইয়া এর দোকান সমূহকে বাণিজ্যিক দেখানো হয়েছে, খাদুন মৌজায় ৯২ ও ৯৫ নং দাগে সিটি গ্রুপের খালী জমিকে বানিজ্যিক দেখানো হয়েছে অথচ আধুরিয়া মৌজায় রাজ্জাক টেক্সটাইল মিলের ও মাহনা মৌজার ৩১, ৩৩, ৩৮, ৩৯, ১১৯, ১২০,১২১ নং দাগে মেট্রো স্পিনিং মিল ও রাজ্জাক টেক্সটাইল মিল এবং টেক্স মেক্স লিঃ এর খালী জমিকে ভিটি দেখানো হয়েছে, খাদুন মৌজার ৪৩২ নং দাগে মাহাবুব আলম এর দোকানকে বাণিজ্যিক দেখানো হয়েছে, আড়িয়াব মৌজার ১০৫ নং দাগে মজিবর ভূইয়ার দোকানের জমিকে বানিজ্যিক দেখানো হয়েছে আবার ১০৬ নং দাগে শাহিন ভূইয়া ও নুরুল হকের দোকানকে দোকান শ্রেনী দেখানো হয়েছে ১০৭ নং দাগে ইমাম হোসেনের দোকানকে দোকান হিসেবে দেখানো হয়েছে, ১৯৫ নং দাগে রিতা রানীর দোকানকে দোকান হিসেবে দেখানো হয়েছে, ১৯৬ নং দাগে লক্ষি রানী ও অভিরাম এর দোকানকে দোকান হিসেবে দেখানে হয়েছে, এখানে এ কারনে দেখানো হলো যে একই শ্রেনীর জমি ১ জন টাকা দিলো আর তার জমি বাণিজ্যিক হলো আরেকজন টাকা দেয়ানি এ জন্য তার জমি দোকান শ্রেণির রয়ে গেল।
একইভাবে আরো বেশ কয়েকটি মৌজা ও দাগ নাম্বারের নাল জমিকে দোকান হিসেবে দেখিয়ে লুটের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন সার্ভেয়ার মামুন গং। প্রকল্পটি ঘিরে নারায়ণগঞ্জ জেলার এলএ শাখার কানুনগো এবিএম হাবিব উল্লাহ ও সার্ভেয়ার মামুন হোসেন, সার্ভেয়ার আনোয়ার হোসেন এবং সড়ক জনপথের সার্ভেয়ার দেওয়ান মো. সোহাগ একটি সিন্ডিকেডের মাধ্যমে আনুমানিক প্রায় ৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে সরকারের প্রকল্প ব্যায় প্রায় ৪৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা বৃদ্ধি করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে এতো অভিযোগের পরও মামুন বড়াই করে বলে বেড়ান, এসব কর্মকাণ্ড তিনি বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি, এডিসিকে ম্যানেজ করে এগুলো করে থাকেন।
এদিকে সাধারণ ভুমি সেবাপ্রত্যাশিরা এই দুর্নীতিবাজ সার্ভেয়ার মামুন ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের অনৈতিক ঘুষ লেনদেনে অতিষ্ট হয়ে তাদের শাস্তির দাবী জানান। সরকারি চাকুরীতে ঘুষ দুর্নীতির অভিযোগ বা প্রমাণ পেলে লঘু দন্ড হিসেবে হয় বদলি না হয় সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কিন্তু জনদাবী হচ্ছে সার্ভেয়ার মামুনদের মত দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কর্মচারীদের চাকুরী থেকে গুরু দন্ড হিসেবে চাকুরিচ্যুত করে আইনের আওতায় আনা হোক।