ডিসির ভাই মাহমুদের নিয়ন্ত্রণে ক্যান্টনমেন্ট রাজস্ব সার্কেল

- আপডেট: ০৮:৩২:০২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫
- / ১৮০৪৪
মোঃ মনিরুজ্জামান :
ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রাজস্ব সার্কেল বর্তমানে পুরোপুরি একজন দালালের নিয়ন্ত্রণে নাম তার মাহমুদ। নিজেকে পরিচয় দেন ঢাকা জেলার বর্তমান জেলা প্রশাসক (ডিসি) তানভীর আহমেদ এর ভাই হিসেবে। আর এই ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে তিনি গড়ে তুলেছেন ভয়ঙ্কর তদবির ও ঘুষের সিন্ডিকেট। দালালি করতে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত তিনি নিয়মিত অফিস করেন যেন পুরো সার্কেল তার ব্যক্তিগত ব্যবসার কেন্দ্র। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা সেবা প্রত্যাশীরা বৈধ কাগজপত্র নিয়েও ঘুরপাক খাচ্ছেন মাহমুদের তদবিরে। ফাইল জমা দিতে গেলে তিনি নিজ হাতে তা গ্রহণ করেন এবং বলে “ফাইল আমার কাছে দেন, আমি এসি ল্যান্ডের কাছেই করিয়ে দেব, সরকারি যে ঘুষের রেট আছে, আমি তার চেয়ে কম নেব। কিন্তু বাস্তবে অনেক ফাইলের জন্য তিনি ২০ থেকে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেন এবং যারা দিতে পারবে না তাদের ফাইল আটকে রাখার হুমকি দেন। ভুক্তভোগীরা জানান, “ভুমি অফিসে ঢুকলেই বোঝা যায় এটি সরকারি অফিস নয়, মাহমুদের ব্যক্তিগত অফিস। ফাইল দিলে বলে ‘আমার কাছে দেন, কম খরচে করিয়ে দেব, পরে দেখা যায় দ্বিগুণ টাকা দিতে হয়, কেউ টাকা দিতে না পারলে কাজটি সম্পন্ন হয় না এবং মাহমুদ সরাসরি হুমকি দেন। ভুমি অফিসের ভেতরে এখন এক অঘোষিত ‘মাহমুদের শাসন। অফিসের কর্মচারীরাও তার বিরুদ্ধে কিছু বলতে সাহস পান না। একাধিক কর্মকর্তা ও সাধারণ মানুষ স্বীকার করেছেন, প্রতিটি ফাইল, নামজারি, মিস কেস, খতিয়ান সবই ঘুষের বিনিময়ে সম্পন্ন হয়, অভিযোগ রয়েছে, প্রতিটি ফাইলের পেছনে ৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়া হয় এবং কেউ টাকা দিতে না পারলে হুমকির মুখোমুখি হয়। এক ভুক্তভোগী জানিয়েছেন, “আমি জমির খতিয়ান করাতে এসেছিলাম, প্রথমে বলা হলো ১৫ হাজার টাকায় হবে, কিন্তু মাহমুদ নিজে হস্তক্ষেপ করে ৪৫ হাজার টাকা দাবি করলেন। না দিলে ফাইল আটকে রাখবেন, শেষমেষ সবাই টাকা দিতে বাধ্য হয়। আরেকজন জানান, “নামজারি করাতে এসে দেখা গেল, এক ফাইলের জন্য মাত্র ১১শ টাকার সরকারি খরচ, কিন্তু মাহমুদ এই ফাইলের জন্য ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিলেন। অনুসন্ধানে আরো জানা যায় নামজারি কেস নং ১৯৯৫৯/২৪-২৫ এবং ২১১৫৮/২৪-২৫ এর জন্য মাহমুদ প্রায় ৭০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ঢাকা জেলা প্রশাসকের ভাই পরিচয়ে ক্ষমতা দেখিয়ে। ভুক্তভোগীরা জানান, মাহমুদ নিজেকে বর্তমান ঢাকা জেলা প্রশাসক তানভীর আহমেদ এর ভাই নাম ভাঙিয়ে পরিচয় দেন এবং বলে, “ফাইল আমার কাছে দিলে আগে পাবেন ভাইকে দিয়ে (ডিসি) করিয়ে দিব দ্রুত। আমি কম খরচে করিয়ে দেব। কিন্তু বাস্তবে তিনি সরকারি ফি থেকে অনেক বেশি টাকা হাতিয়ে নেন। একজন ভুক্তভোগী বলেন, “নামজারি করতে গিয়ে মাহমুদ প্রায় ৭০ হাজার টাকা দাবি করল। কেউ দিতে না পারলে ফাইল আটকে রাখার হুমকি দেওয়া হয়। এই কেসটি শুধু একটি উদাহরণ; অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রতিদিনের কার্যক্রমে ফাইল, নামজারি ও খতিয়ান ঘুষের বিনিময়ে সম্পন্ন হচ্ছে। মাহমুদের এই কার্যক্রম কেবল অর্থের লোভ নয়, ক্ষমতার ভয় দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে প্রভাবিত করছে।
অফিসে এমন দৃশ্য প্রতিদিন ঘটে, অফিসে প্রবেশ করলে দেখা যায়, ফাইলের লাইনে দাঁড়ানো মানুষদের মধ্যে অনেকে কাঁদছেন, কেউ ঘুষ দিতে পারার চাপে লজ্জায় মাথা নিচু করেছেন। মাহমুদের আশেপাশে শুধুই ধনসম্পদের লোভী ও ভীত সেবাপ্রত্যাশী। অফিসের কর্মীরা ফাইল দিতে এসে জানেন এখানে না দিলে তাদের কাজ হবে না, কেউ টাকার পরিমাণ কম দেয়ার চেষ্টা করলে সরাসরি হুমকি। এভাবে প্রতিদিন হাজারো মানুষের দুর্ভোগ চলতে থাকে। নামজারি করার জন্য প্রথমে অফিসে ফাইল জমা দিতে হয়, সেখানে মাহমুদ সরাসরি হস্তক্ষেপ করেন। তিনি ফাইল পরীক্ষা করেন এবং সরকারি ফি দেখার পরেও ঘুষের অতিরিক্ত পরিমাণ দাবি করেন। মিস কেসের ক্ষেত্রে অফিসে গাফিলতির নাম করে তিনি টাকা নেন এবং ফাইল সম্পূর্ণ করার আগে বারবার অতিরিক্ত ঘুষের দাবি তোলেন। দীর্ঘদিন ধরে এই বাণিজ্যের মাধ্যমে মাহমুদ কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে রেখেছেন। অভিযোগ রয়েছে যে এই সিন্ডিকেটে শুধু মাহমুদই নয় কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরও সক্রিয় সহায়তা রয়েছে। অফিসের কর্মীরা স্বীকার করেছেন, অফিসে ঢুকলেই মনে হয় এটি সরকারি অফিস নয় বরং এক মাফিয়া সাম্রাজ্য। প্রতিদিনের ফাইল প্রক্রিয়া ঘুষের মাধ্যমে সম্পন্ন হয় যারা দিতে পারবে না তাদের ফাইল আটকে রাখা হয়। অনেকেই জানান এখানে কেউ ঘুষ না দিলে কাজ হয় না, এটি শুধু অর্থের লোভ নয়, একই সঙ্গে ক্ষমতার ভয় দেখিয়ে সেবা প্রত্যাশীদের জিম্মি করার কৌশল। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রাজস্ব সার্কেল বর্তমানে মাহমুদের দালালি ও দুর্নীতির অভয়ারণ্য।
এই বিষয়ে ক্যান্টনমেন্ট রাজস্ব সার্কেলে ডিসির ভাই পরিচয়দানকারী মাহমুদ অফিসে উপস্থিত থাকাকালীন প্রতিবেদক জানতে চাইলে মাহমুদ দৈনিক সোনালী খবর এর প্রতিবেদককে বলেন ‘আমি ডিসির ভাই, ডিসির নির্দেশ আছে এই সার্কেলে থাকার জন্য। বিশেষভাবে বলা যায়, জেলা প্রশাসকের নাম ব্যবহার করে এই সিন্ডিকেট এক অঘোষিত নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে, যা ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট রাজস্ব সার্কেলকে সাধারণ মানুষের জন্য এক আতঙ্কের জায়গায় পরিণত করেছে। মাহমুদ সিন্ডিকেটের বিষয়ে বর্তমান ঢাকার জেলা প্রশাসক তানভির আহমেদকে ফোন করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা দ্রুতই তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে যাতে সেবাপ্রত্যাশীরা মুক্তি পায় দালালচক্রের হাত থেকে।