০৫:৪৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫

ডিভোর্সের পরও ভয়ভীতি দেখিয়ে রাত্রিযাপন,বর্তমান স্বামীকে নিয়ে সাবেক স্বামীকে হত্যা

  • আপডেট: ০২:৪৮:৫২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ১৮০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা

ডিভোর্সের পরও ভয়ভীতি দেখিয়ে সাবেক স্ত্রীকে রাত্রিযাপনে বাধ্য করতেন কুমিল্লার লালমাইয়ের দুলাল হোসেন (৩৫)। সাবেক এই স্বামীর অত্যচার থেকে পরিত্রাণ পেতে বর্তমান স্বামী ও বাবা-মাকে নিয়ে সাবেক স্বামীকে হত্যা করেন ফাতেমা আক্তার সিনথিয়া নামের ওই নারী।

একই সঙ্গে হত্যার পর লাশ গুম করতে ফেলে রাখে রেল লাইনের পাশে। এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় জড়িত ৭ জনকে গ্রেফতার করে র‍্যাব-১১।

মঙ্গলবার (১৬সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সন্মেলনে এসব জানান র‍্যাব-১১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন।

গ্রেফতারকৃতরা হলো-নিহতের সাবেক স্ত্রী ফাতেমা আক্তার সিনথিয়া (১৯), তার বর্তমান স্বামী আবুল হাসেম (৩৪),তার বাবা মো.ফারুক (৪৫),মা মরিয়ম (৩৭),তার স্বামীর বন্ধু মো.মফিজুল ইসলাম (৪৫),তাজুল ইসলাম (৪২) ও রুবেল আহাম্মেদ (৩৯)।

সাজ্জাদ হোসেন বলেন,গত ১০ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা লালমাই উপজেলার পেরুল এলাকায় রেললাইনের পাশ থেকে অজ্ঞাত পরিচয় এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে লাকসাম রেলওয়ে পুলিশ। নিহত অজ্ঞাতনামা যুবকের মাথার ডান পাশে রক্তাক্ত জখম এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল। পরে অজ্ঞাতনামা যুবকের মরদেহ সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে ময়নাতন্তের জন্য পাঠানো হয়। পরে যুবকের পরিচয় শনাক্ত হয়। তিনি কুমিল্লা জেলার আদর্শ সদর উপজেলার ভল্লবপুর গ্রামের জব্বর মালের ছেলে দুলাল হোসেন।

তিনি বলেন,র‍্যাব ১১ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল নিজস্ব গোয়েন্দা নজরদারি ও সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে ১৫ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার ও লাকসাম থানা এবং ঢাকা জেলার যাত্রাবাড়ি খানা এলাকায় পৃথক অভিযান পরিচালনা করে এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ৭ জনকে গ্রেফতার করে।

তিনি বলেন,গ্রেফতারকৃত আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও আসামীদের ভাষ্যমতে জানা যায়,গ্রেফতারকৃত আসামি ফাতেমা আক্তার সিনথিয়ার সাথে প্রায় ৬ মাস আগে নিহত দুলালের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে তারা নিমসার বাজারে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করত। বিয়ের কিছুদিন পর থেকে দুলাল সিনথিয়াকে বিভিন্নভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করত। এরই মধ্যে ফাতেমা আক্তার সিনথিয়া গ্রেফতারকৃত আরেক আসামি দুবাই প্রবাসী আবুল হাসেমের সাথে ইমুর মাধ্যমে পরিচয় হয় এবং পরিচয়ের একপর্যায়ে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। পরবর্তিতে স্বামী দুলালকে ডিভোর্স দিয়ে মায়ের বাড়িতে চলে যায়। এর মধ্যে প্রবাসী আবুল হাসেম ২ মাস আগে দেশে এলে এর ৩-৪ দিনের মধ্যে সিনথিয়ার সাথে বিয়ে হয়। কিন্তু দুলাল ডিভোর্স না মেনে প্রায় সময় হাসেমের অনুপস্থিতিতে জোরপূর্বক বিভিন্ন ভয়-ভীতি দেখিয়ে সিনথিয়ার বাসায় গিয়ে রাত্রি যাপন করত। প্রথমে বিষয়টি সিনথিয়া গোপন করিলে পরবর্তিতে বাধ্য হয়ে তার বর্তমান স্বামী হাসেমকে জানায়। এর পর থেকে সিনথিয়া, তার বর্তমান স্বামী হাসেম,সিনথিয়ার বাবা-মা মিলে দুলালকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

তিনি আরো বলেন,ঘটনার দিন নিহত দুলাল সিনথিয়ার বাসায় যায় এবং সিনথিয়া তার বর্তমান স্বামী হাসেমের কথামত জুসের সাথে ৪টি ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে দেয়। ঘুমের ঔষধ মিশানো জুস খেয়ে দুলাল ঘুমিয়ে পড়লে গ্রেফতারকৃত সকল আসামি মিলে দুলালালের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে এবং শ্বাস রোধ করে হত্যা করে। পরবর্তীতে লাশ গুম করার জন্য গ্রেফতারকৃত আরেক আসামি ড্রাইভার রুবেল নোহা গাড়ি নিয়ে লাশ লালমাই রেললাইনের পাশে রেখে আসে।

গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন বলে জানান র‍্যাব-১১ এর অধিনায়ক এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

ডিভোর্সের পরও ভয়ভীতি দেখিয়ে রাত্রিযাপন,বর্তমান স্বামীকে নিয়ে সাবেক স্বামীকে হত্যা

আপডেট: ০২:৪৮:৫২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা

ডিভোর্সের পরও ভয়ভীতি দেখিয়ে সাবেক স্ত্রীকে রাত্রিযাপনে বাধ্য করতেন কুমিল্লার লালমাইয়ের দুলাল হোসেন (৩৫)। সাবেক এই স্বামীর অত্যচার থেকে পরিত্রাণ পেতে বর্তমান স্বামী ও বাবা-মাকে নিয়ে সাবেক স্বামীকে হত্যা করেন ফাতেমা আক্তার সিনথিয়া নামের ওই নারী।

একই সঙ্গে হত্যার পর লাশ গুম করতে ফেলে রাখে রেল লাইনের পাশে। এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় জড়িত ৭ জনকে গ্রেফতার করে র‍্যাব-১১।

মঙ্গলবার (১৬সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সন্মেলনে এসব জানান র‍্যাব-১১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন।

গ্রেফতারকৃতরা হলো-নিহতের সাবেক স্ত্রী ফাতেমা আক্তার সিনথিয়া (১৯), তার বর্তমান স্বামী আবুল হাসেম (৩৪),তার বাবা মো.ফারুক (৪৫),মা মরিয়ম (৩৭),তার স্বামীর বন্ধু মো.মফিজুল ইসলাম (৪৫),তাজুল ইসলাম (৪২) ও রুবেল আহাম্মেদ (৩৯)।

সাজ্জাদ হোসেন বলেন,গত ১০ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা লালমাই উপজেলার পেরুল এলাকায় রেললাইনের পাশ থেকে অজ্ঞাত পরিচয় এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে লাকসাম রেলওয়ে পুলিশ। নিহত অজ্ঞাতনামা যুবকের মাথার ডান পাশে রক্তাক্ত জখম এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল। পরে অজ্ঞাতনামা যুবকের মরদেহ সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে ময়নাতন্তের জন্য পাঠানো হয়। পরে যুবকের পরিচয় শনাক্ত হয়। তিনি কুমিল্লা জেলার আদর্শ সদর উপজেলার ভল্লবপুর গ্রামের জব্বর মালের ছেলে দুলাল হোসেন।

তিনি বলেন,র‍্যাব ১১ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল নিজস্ব গোয়েন্দা নজরদারি ও সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে ১৫ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার ও লাকসাম থানা এবং ঢাকা জেলার যাত্রাবাড়ি খানা এলাকায় পৃথক অভিযান পরিচালনা করে এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ৭ জনকে গ্রেফতার করে।

তিনি বলেন,গ্রেফতারকৃত আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও আসামীদের ভাষ্যমতে জানা যায়,গ্রেফতারকৃত আসামি ফাতেমা আক্তার সিনথিয়ার সাথে প্রায় ৬ মাস আগে নিহত দুলালের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে তারা নিমসার বাজারে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করত। বিয়ের কিছুদিন পর থেকে দুলাল সিনথিয়াকে বিভিন্নভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করত। এরই মধ্যে ফাতেমা আক্তার সিনথিয়া গ্রেফতারকৃত আরেক আসামি দুবাই প্রবাসী আবুল হাসেমের সাথে ইমুর মাধ্যমে পরিচয় হয় এবং পরিচয়ের একপর্যায়ে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। পরবর্তিতে স্বামী দুলালকে ডিভোর্স দিয়ে মায়ের বাড়িতে চলে যায়। এর মধ্যে প্রবাসী আবুল হাসেম ২ মাস আগে দেশে এলে এর ৩-৪ দিনের মধ্যে সিনথিয়ার সাথে বিয়ে হয়। কিন্তু দুলাল ডিভোর্স না মেনে প্রায় সময় হাসেমের অনুপস্থিতিতে জোরপূর্বক বিভিন্ন ভয়-ভীতি দেখিয়ে সিনথিয়ার বাসায় গিয়ে রাত্রি যাপন করত। প্রথমে বিষয়টি সিনথিয়া গোপন করিলে পরবর্তিতে বাধ্য হয়ে তার বর্তমান স্বামী হাসেমকে জানায়। এর পর থেকে সিনথিয়া, তার বর্তমান স্বামী হাসেম,সিনথিয়ার বাবা-মা মিলে দুলালকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

তিনি আরো বলেন,ঘটনার দিন নিহত দুলাল সিনথিয়ার বাসায় যায় এবং সিনথিয়া তার বর্তমান স্বামী হাসেমের কথামত জুসের সাথে ৪টি ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে দেয়। ঘুমের ঔষধ মিশানো জুস খেয়ে দুলাল ঘুমিয়ে পড়লে গ্রেফতারকৃত সকল আসামি মিলে দুলালালের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে এবং শ্বাস রোধ করে হত্যা করে। পরবর্তীতে লাশ গুম করার জন্য গ্রেফতারকৃত আরেক আসামি ড্রাইভার রুবেল নোহা গাড়ি নিয়ে লাশ লালমাই রেললাইনের পাশে রেখে আসে।

গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন বলে জানান র‍্যাব-১১ এর অধিনায়ক এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন।