০২:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫

ভবিষ্যতের বাংলাদেশ : তারুণ্যের প্রত্যাশা ও বাস্তবতা

  • আপডেট: ০৮:০৬:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ১৮০৫৯

জুয়েল হাসান

তারুণ্য,বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী সমপদ। ইতিহাসের প্রতিটি ধাপে তরুণ প্রজন্মই দেশের পরিবর্তনের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতা এবং প্রত্যাশার মধ্যে রয়েছে এক অদৃশ্য ফাঁক। যেখানে আশা উজ্জ্বল, সেখানে বাস্তবতা কখনো কখনো সীমাবদ্ধতা এবং চ্যালেঞ্জে মুখে পড়ে পথচলা কঠিন করে তোলে।

বর্তমান বাংলাদেশের তরুণসমাজের প্রেক্ষাপটে তাদের আশা এবং চ্যালেঞ্জের মধ্যে একটি সূক্ষ্ম দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। একই সঙ্গে অর্থনৈতিক সুযোগের সীমাবদ্ধতা, চাকরির বাজারের চাপ, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সামাজিক কাঠামোর সীমাবদ্ধতা প্রায়শই তাদের উদ্যমকে বাধাগ্রস্ত করে। এই দ্বন্দ্বই তাদের প্রত্যাশাকে বাস্তবতায় রূপান্তরিত করার পথে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে একটি প্রবল আগ্রহ লক্ষ করা যায়—উদ্ভাবনী প্রযুক্তি,বিজ্ঞান, স্টার্টআপ এবং সামাজিক উদ্যোগের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক চিত্র পরিবর্তন করার।

তবে সেই আগ্রহ যদি উপযুক্ত সুযোগ ও সমর্থন না পায়, তবে তা শুধু স্বপ্নে সীমাবদ্ধ থেকে যায়।

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ এক বিশাল নদীর মতো, যেখানে তরুণরাই পানির ঢেউ। তাদের শক্তি, উদ্যম এবং দৃষ্টি নদীকে গতি দেয়। কিন্তু নদীকে সুস্থভাবে প্রবাহিত করতে প্রয়োজন বাঁধ, চ্যানেল এবং সঠিক দিকনির্দেশনা, যা রাষ্ট্র এবং সমাজের সমন্বিত ভূমিকা ছাড়া সম্ভব নয়।

শিক্ষার মানোন্নয়ন,উদ্যোক্তা এবং প্রযুক্তি কেন্দ্রগুলোতে বিনিয়োগ ও সমান সুযোগ নিশ্চিত করা হলো সেই বাঁধ এবং চ্যানেল তরুণদের স্বপ্নকে বাস্তবতার সঙ্গে মিলিয়ে দেয়।
চ্যালেঞ্জগুলো শুধু শিক্ষাগত বা প্রযুক্তিগত নয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও তা প্রতিফলিত হয়। নারীর ক্ষমতায়ন, বৈষম্য কমানো, সামাজিক ন্যায়ের প্রতি দায়বদ্ধতা—এসব ক্ষেত্রে তরুণরাই নতুন মানদণ্ড স্থাপন করছে। তবে সামাজিক সংস্কৃতির স্থিতিশীলতা এবং নৈতিক দায়বদ্ধতা ছাড়া এই পরিবর্তন দমনের আশঙ্কা থাকে। তাই সমাজের প্রতিটি স্তরে তরুণদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।

অর্থনীতির দিক থেকেও তরুণরা দেশের ভবিষ্যতের মূল চালক। নতুন ব্যবসা, স্টার্টআপ, উদ্যোক্তা প্রকল্প, প্রযুক্তি উদ্ভাবন—এসব ক্ষেত্র তরুণদের উদ্ভাবনী শক্তিকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে। কিন্তু একটি দেশের অর্থনৈতিক চেহারা শুধু তরুণদের আগ্রহের ওপর নির্ভর করতে পারে না, প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক সমর্থন, বিনিয়োগ এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। শিক্ষিত ও উদ্যমী যুবসমাজকে যদি সঠিক পরিবেশ দেওয়া যায়, তবে বাংলাদেশ বিশ্বের মানচিত্রে উদ্ভাবন ও সৃজনশীলতার নতুন কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।

তারুণ্যের প্রত্যাশা ও বাস্তবতার মধ্যে সংঘর্ষ সব সময়ই একটি শিক্ষণীয় প্রক্রিয়া। প্রত্যাশা ছাড়া উদ্যোগ জন্মায় না, আর বাস্তবতা ছাড়া প্রত্যাশা শক্তিশালী হয় না। বাংলাদেশে তরুণদের উদ্যম এবং স্বপ্ন যদি বাস্তবতার সঙ্গে মেলানো যায়, তবে দেশ শুধু সমৃদ্ধ হবে না, বরং মানবিক ও নৈতিক সমাজ হিসেবে গড়ে উঠবে। শিক্ষা, সামাজিক সচেতনতা, প্রযুক্তি এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির মধ্যে সঠিক সমন্বয়ই দেশের ভবিষ্যতের মূল চাবিকাঠি।

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ মূলত তারুণ্যের হাতে, তাদের উদ্যম, সৃজনশীলতা, স্বপ্ন এবং সংকল্পই দেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে। তবে শুধু স্বপ্ন দেখা যথেষ্ট নয়, সেই স্বপ্নকে বাস্তবের রঙে রাঙাতে দরকার সমর্থন, সুযোগ এবং দিকনির্দেশনা। তরুণদের সক্ষমতা ঠিকভাবে বিকাশ পেলে তারা দেশের শিক্ষাব্যবস্থা, প্রযুক্তি, অর্থনীতি, সামাজিক ন্যায় এবং নৈতিক মূল্যবোধে যথার্থ অবদান রাখতে পারবে। আমাদের সমাজ, প্রতিষ্ঠান এবং রাষ্ট্রকে তাদের এই সম্ভাবনাকে সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। তরুণরা হলো দেশের জীবন্ত শক্তি—তাদের উদ্যমের সঙ্গে সমন্বিত করা হলে সৃষ্টিশীলতা, উদ্ভাবন এবং নেতৃত্বের নতুন মাত্রা উন্মোচিত হবে। যদি তারা শিক্ষা, গবেষণা, সামাজিক উদ্যোগ এবং উদ্যোক্তা মনোভাবের মাধ্যমে দেশের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারে, তবে বাংলাদেশ শুধু সমৃদ্ধ হবে না, বরং একটি মানবিক, ন্যায়পরায়ণ এবং স্থিতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। তাই আজকের প্রজন্মের প্রতি আমাদের দায়িত্ব হলো তাদের স্বপ্নকে উপযুক্ত পরিবেশ ও সুযোগ দিয়ে বাস্তবায়নে সহায়তা করা।

অতএব শুধু আশা নয়, নিরন্তর চেষ্টা এবং দায়বদ্ধ উদ্যোগই হবে দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ভিত্তি। যখন তরুণদের শক্তি ও উদ্যমের সঙ্গে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সমর্থন মিলিত হবে, তখনই বাংলাদেশের স্বপ্ন সত্যিকারের আলো ছড়িয়ে দেবে। এই আলোই আমাদের জাতির নতুন পথে অগ্রসর হওয়ার প্রেরণা এবং শক্তি।

লেখক : প্রকৌশলী এবং কলাম লেখক

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

ভবিষ্যতের বাংলাদেশ : তারুণ্যের প্রত্যাশা ও বাস্তবতা

আপডেট: ০৮:০৬:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

জুয়েল হাসান

তারুণ্য,বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী সমপদ। ইতিহাসের প্রতিটি ধাপে তরুণ প্রজন্মই দেশের পরিবর্তনের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতা এবং প্রত্যাশার মধ্যে রয়েছে এক অদৃশ্য ফাঁক। যেখানে আশা উজ্জ্বল, সেখানে বাস্তবতা কখনো কখনো সীমাবদ্ধতা এবং চ্যালেঞ্জে মুখে পড়ে পথচলা কঠিন করে তোলে।

বর্তমান বাংলাদেশের তরুণসমাজের প্রেক্ষাপটে তাদের আশা এবং চ্যালেঞ্জের মধ্যে একটি সূক্ষ্ম দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। একই সঙ্গে অর্থনৈতিক সুযোগের সীমাবদ্ধতা, চাকরির বাজারের চাপ, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সামাজিক কাঠামোর সীমাবদ্ধতা প্রায়শই তাদের উদ্যমকে বাধাগ্রস্ত করে। এই দ্বন্দ্বই তাদের প্রত্যাশাকে বাস্তবতায় রূপান্তরিত করার পথে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে একটি প্রবল আগ্রহ লক্ষ করা যায়—উদ্ভাবনী প্রযুক্তি,বিজ্ঞান, স্টার্টআপ এবং সামাজিক উদ্যোগের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক চিত্র পরিবর্তন করার।

তবে সেই আগ্রহ যদি উপযুক্ত সুযোগ ও সমর্থন না পায়, তবে তা শুধু স্বপ্নে সীমাবদ্ধ থেকে যায়।

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ এক বিশাল নদীর মতো, যেখানে তরুণরাই পানির ঢেউ। তাদের শক্তি, উদ্যম এবং দৃষ্টি নদীকে গতি দেয়। কিন্তু নদীকে সুস্থভাবে প্রবাহিত করতে প্রয়োজন বাঁধ, চ্যানেল এবং সঠিক দিকনির্দেশনা, যা রাষ্ট্র এবং সমাজের সমন্বিত ভূমিকা ছাড়া সম্ভব নয়।

শিক্ষার মানোন্নয়ন,উদ্যোক্তা এবং প্রযুক্তি কেন্দ্রগুলোতে বিনিয়োগ ও সমান সুযোগ নিশ্চিত করা হলো সেই বাঁধ এবং চ্যানেল তরুণদের স্বপ্নকে বাস্তবতার সঙ্গে মিলিয়ে দেয়।
চ্যালেঞ্জগুলো শুধু শিক্ষাগত বা প্রযুক্তিগত নয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও তা প্রতিফলিত হয়। নারীর ক্ষমতায়ন, বৈষম্য কমানো, সামাজিক ন্যায়ের প্রতি দায়বদ্ধতা—এসব ক্ষেত্রে তরুণরাই নতুন মানদণ্ড স্থাপন করছে। তবে সামাজিক সংস্কৃতির স্থিতিশীলতা এবং নৈতিক দায়বদ্ধতা ছাড়া এই পরিবর্তন দমনের আশঙ্কা থাকে। তাই সমাজের প্রতিটি স্তরে তরুণদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।

অর্থনীতির দিক থেকেও তরুণরা দেশের ভবিষ্যতের মূল চালক। নতুন ব্যবসা, স্টার্টআপ, উদ্যোক্তা প্রকল্প, প্রযুক্তি উদ্ভাবন—এসব ক্ষেত্র তরুণদের উদ্ভাবনী শক্তিকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে। কিন্তু একটি দেশের অর্থনৈতিক চেহারা শুধু তরুণদের আগ্রহের ওপর নির্ভর করতে পারে না, প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক সমর্থন, বিনিয়োগ এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। শিক্ষিত ও উদ্যমী যুবসমাজকে যদি সঠিক পরিবেশ দেওয়া যায়, তবে বাংলাদেশ বিশ্বের মানচিত্রে উদ্ভাবন ও সৃজনশীলতার নতুন কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।

তারুণ্যের প্রত্যাশা ও বাস্তবতার মধ্যে সংঘর্ষ সব সময়ই একটি শিক্ষণীয় প্রক্রিয়া। প্রত্যাশা ছাড়া উদ্যোগ জন্মায় না, আর বাস্তবতা ছাড়া প্রত্যাশা শক্তিশালী হয় না। বাংলাদেশে তরুণদের উদ্যম এবং স্বপ্ন যদি বাস্তবতার সঙ্গে মেলানো যায়, তবে দেশ শুধু সমৃদ্ধ হবে না, বরং মানবিক ও নৈতিক সমাজ হিসেবে গড়ে উঠবে। শিক্ষা, সামাজিক সচেতনতা, প্রযুক্তি এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির মধ্যে সঠিক সমন্বয়ই দেশের ভবিষ্যতের মূল চাবিকাঠি।

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ মূলত তারুণ্যের হাতে, তাদের উদ্যম, সৃজনশীলতা, স্বপ্ন এবং সংকল্পই দেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে। তবে শুধু স্বপ্ন দেখা যথেষ্ট নয়, সেই স্বপ্নকে বাস্তবের রঙে রাঙাতে দরকার সমর্থন, সুযোগ এবং দিকনির্দেশনা। তরুণদের সক্ষমতা ঠিকভাবে বিকাশ পেলে তারা দেশের শিক্ষাব্যবস্থা, প্রযুক্তি, অর্থনীতি, সামাজিক ন্যায় এবং নৈতিক মূল্যবোধে যথার্থ অবদান রাখতে পারবে। আমাদের সমাজ, প্রতিষ্ঠান এবং রাষ্ট্রকে তাদের এই সম্ভাবনাকে সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। তরুণরা হলো দেশের জীবন্ত শক্তি—তাদের উদ্যমের সঙ্গে সমন্বিত করা হলে সৃষ্টিশীলতা, উদ্ভাবন এবং নেতৃত্বের নতুন মাত্রা উন্মোচিত হবে। যদি তারা শিক্ষা, গবেষণা, সামাজিক উদ্যোগ এবং উদ্যোক্তা মনোভাবের মাধ্যমে দেশের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারে, তবে বাংলাদেশ শুধু সমৃদ্ধ হবে না, বরং একটি মানবিক, ন্যায়পরায়ণ এবং স্থিতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। তাই আজকের প্রজন্মের প্রতি আমাদের দায়িত্ব হলো তাদের স্বপ্নকে উপযুক্ত পরিবেশ ও সুযোগ দিয়ে বাস্তবায়নে সহায়তা করা।

অতএব শুধু আশা নয়, নিরন্তর চেষ্টা এবং দায়বদ্ধ উদ্যোগই হবে দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ভিত্তি। যখন তরুণদের শক্তি ও উদ্যমের সঙ্গে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সমর্থন মিলিত হবে, তখনই বাংলাদেশের স্বপ্ন সত্যিকারের আলো ছড়িয়ে দেবে। এই আলোই আমাদের জাতির নতুন পথে অগ্রসর হওয়ার প্রেরণা এবং শক্তি।

লেখক : প্রকৌশলী এবং কলাম লেখক