০৮:৫৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫

রফতানির আড়ালে ৯৭ মিলিয়ন ডলার পাচার: বেক্সিমকো গ্রুপের বিরুদ্ধে ১৭ মামলায় অভিযোগপত্র দিচ্ছে সিআইডি

  • আপডেট: ০৪:৫৯:১৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৫
  • / ১৮০০৭

নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা

রফতানির আড়ালে প্রায় ৯৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা) বিদেশে পাচারের অভিযোগে বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, চেয়ারম্যান এএসএফ রহমানসহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে দায়ের করা ১৭টি মানিলন্ডারিং মামলার অভিযোগপত্র দাখিলের অনুমোদন দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

রবিবার(৯ নভেম্বর) বিকালে রাজধানীর মালিবাগে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি ছিগবাত উল্লাহ এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন,“সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট তদন্তে প্রমাণ পেয়েছে যে,২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বেক্সিমকো গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত ১৭টি করপোরেট প্রতিষ্ঠান বৈদেশিক বাণিজ্যের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করেছে।”

রফতানির নামে অর্থ পাচার তদন্তে জানা যায়,এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে— এডভান্স গার্মেন্টস,এপোলো এপারেলস, অটোম্যান লুপ এপারেলস,বিক্সটেক্স গার্মেন্টস,কসমোপলিটান এপারেলস,কজি এপারেলস,ইসেস ফ্যাশন ইন্টারন্যাশনাল, কাচপুর এপারেলস,মিড ওয়েস্ট গার্মেন্টস,পিয়ারলেস গার্মেন্টস, পিঙ্ক মেকার গার্মেন্টস,প্লাটিউর গার্মেন্টস,স্কাইনেট এপারেলস, ইস্প্রিংফুল এপারেলস,আরবান ফ্যাশন এবং উইন্ট্রা ইস্প্রিন্ট গার্মেন্টস লিমিটেড।

এসব প্রতিষ্ঠান জনতা ব্যাংক পিএলসি’র মতিঝিল শাখা থেকে এলসি খুলে রফতানি দেখালেও বিপরীতে অর্থ দেশে ফেরত আনা হয়নি। বরং সেই অর্থ পাঠানো হয়েছে দুবাইভিত্তিক আর আর গ্লোবাল ট্রেডিং লিমিটেড-এর মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাত,সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা,যুক্তরাজ্য,যুক্তরাষ্ট্র ও আইয়ারল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে।

আর আর গ্লোবাল ট্রেডিং লিমিটেডের মালিকানা রয়েছে সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান এবং চেয়ারম্যান এএসএফ রহমানের ছেলে আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের নামে।

২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ৯৬,৯৬,৬৮০ মার্কিন ডলার রফতানি দেখানো হলেও এর বিপরীতে কোনো বৈদেশিক মুদ্রা দেশে ফেরত আসেনি, যা সরাসরি মানিলন্ডারিংয়ের শামিল বলে সিআইডির তদন্তে উঠে এসেছে।

মামলা ও সম্পদ ক্রোক এই ঘটনায় ২০২৪ সালের ১৭ ও ১৮ সেপ্টেম্বর মতিঝিল থানায় ১৭টি মানিলন্ডারিং মামলা দায়ের করে সিআইডি। তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দাখিলের অনুমোদন চাওয়া হলে তা সম্প্রতি অনুমোদন পায়।

এরই মধ্যে আদালতের নির্দেশে আসামিদের বিভিন্ন অস্থাবর ও স্থাবর সম্পদ ক্রোক করেছে সিআইডি। এর মধ্যে রয়েছে—ঢাকার দোহার উপজেলার প্রায় ২ হাজার শতক জমি ও স্থাপনা, গুলশানের ‘দ্য এনভয় বিল্ডিং’-এর ৬,১৮৯.৫৪ বর্গফুট ফ্ল্যাট ও গুলশান ৬৮/এ, রোড ৩১-এর ২,৭১৩ বর্গফুটের ট্রিপ্লেক্স ফ্ল্যাট। এছাড়া আসামিদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে এবং বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। ক্রোককৃত সম্পত্তির আনুমানিক বাজারমূল্য ৬০০ থেকে ৭০০ কোটি টাকা।

আসামি ও গ্রেপ্তার পরিস্থিতি মামলাগুলোতে বেক্সিমকো চেয়ারম্যান এএসএফ রহমান,ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান, আহমেদ শাহরিয়ার রহমানসহ মোট ২৮ জন ব্যক্তি ও ১৯টি প্রতিষ্ঠানকে আসামি করা হয়েছে।

এ বছরের জানুয়ারিতে বেক্সিমকোর সহযোগী প্রতিষ্ঠান অটোম্যান লুপ এপারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াসিউর রহমানকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। বর্তমানে কারাগারে থাকা সালমান এফ রহমানকেও এই মামলাগুলোতে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট জানায়,“ট্রেড-বেইজড মানিলন্ডারিংয়ের এই জটিল তদন্ত দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করে রাষ্ট্রের আর্থিক স্বার্থ রক্ষায় আমরা নিরলসভাবে কাজ করছি।”

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

রফতানির আড়ালে ৯৭ মিলিয়ন ডলার পাচার: বেক্সিমকো গ্রুপের বিরুদ্ধে ১৭ মামলায় অভিযোগপত্র দিচ্ছে সিআইডি

আপডেট: ০৪:৫৯:১৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা

রফতানির আড়ালে প্রায় ৯৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা) বিদেশে পাচারের অভিযোগে বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, চেয়ারম্যান এএসএফ রহমানসহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে দায়ের করা ১৭টি মানিলন্ডারিং মামলার অভিযোগপত্র দাখিলের অনুমোদন দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

রবিবার(৯ নভেম্বর) বিকালে রাজধানীর মালিবাগে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি ছিগবাত উল্লাহ এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন,“সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট তদন্তে প্রমাণ পেয়েছে যে,২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বেক্সিমকো গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত ১৭টি করপোরেট প্রতিষ্ঠান বৈদেশিক বাণিজ্যের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করেছে।”

রফতানির নামে অর্থ পাচার তদন্তে জানা যায়,এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে— এডভান্স গার্মেন্টস,এপোলো এপারেলস, অটোম্যান লুপ এপারেলস,বিক্সটেক্স গার্মেন্টস,কসমোপলিটান এপারেলস,কজি এপারেলস,ইসেস ফ্যাশন ইন্টারন্যাশনাল, কাচপুর এপারেলস,মিড ওয়েস্ট গার্মেন্টস,পিয়ারলেস গার্মেন্টস, পিঙ্ক মেকার গার্মেন্টস,প্লাটিউর গার্মেন্টস,স্কাইনেট এপারেলস, ইস্প্রিংফুল এপারেলস,আরবান ফ্যাশন এবং উইন্ট্রা ইস্প্রিন্ট গার্মেন্টস লিমিটেড।

এসব প্রতিষ্ঠান জনতা ব্যাংক পিএলসি’র মতিঝিল শাখা থেকে এলসি খুলে রফতানি দেখালেও বিপরীতে অর্থ দেশে ফেরত আনা হয়নি। বরং সেই অর্থ পাঠানো হয়েছে দুবাইভিত্তিক আর আর গ্লোবাল ট্রেডিং লিমিটেড-এর মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাত,সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা,যুক্তরাজ্য,যুক্তরাষ্ট্র ও আইয়ারল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে।

আর আর গ্লোবাল ট্রেডিং লিমিটেডের মালিকানা রয়েছে সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান এবং চেয়ারম্যান এএসএফ রহমানের ছেলে আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের নামে।

২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ৯৬,৯৬,৬৮০ মার্কিন ডলার রফতানি দেখানো হলেও এর বিপরীতে কোনো বৈদেশিক মুদ্রা দেশে ফেরত আসেনি, যা সরাসরি মানিলন্ডারিংয়ের শামিল বলে সিআইডির তদন্তে উঠে এসেছে।

মামলা ও সম্পদ ক্রোক এই ঘটনায় ২০২৪ সালের ১৭ ও ১৮ সেপ্টেম্বর মতিঝিল থানায় ১৭টি মানিলন্ডারিং মামলা দায়ের করে সিআইডি। তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দাখিলের অনুমোদন চাওয়া হলে তা সম্প্রতি অনুমোদন পায়।

এরই মধ্যে আদালতের নির্দেশে আসামিদের বিভিন্ন অস্থাবর ও স্থাবর সম্পদ ক্রোক করেছে সিআইডি। এর মধ্যে রয়েছে—ঢাকার দোহার উপজেলার প্রায় ২ হাজার শতক জমি ও স্থাপনা, গুলশানের ‘দ্য এনভয় বিল্ডিং’-এর ৬,১৮৯.৫৪ বর্গফুট ফ্ল্যাট ও গুলশান ৬৮/এ, রোড ৩১-এর ২,৭১৩ বর্গফুটের ট্রিপ্লেক্স ফ্ল্যাট। এছাড়া আসামিদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে এবং বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। ক্রোককৃত সম্পত্তির আনুমানিক বাজারমূল্য ৬০০ থেকে ৭০০ কোটি টাকা।

আসামি ও গ্রেপ্তার পরিস্থিতি মামলাগুলোতে বেক্সিমকো চেয়ারম্যান এএসএফ রহমান,ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান, আহমেদ শাহরিয়ার রহমানসহ মোট ২৮ জন ব্যক্তি ও ১৯টি প্রতিষ্ঠানকে আসামি করা হয়েছে।

এ বছরের জানুয়ারিতে বেক্সিমকোর সহযোগী প্রতিষ্ঠান অটোম্যান লুপ এপারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াসিউর রহমানকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। বর্তমানে কারাগারে থাকা সালমান এফ রহমানকেও এই মামলাগুলোতে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট জানায়,“ট্রেড-বেইজড মানিলন্ডারিংয়ের এই জটিল তদন্ত দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করে রাষ্ট্রের আর্থিক স্বার্থ রক্ষায় আমরা নিরলসভাবে কাজ করছি।”