ঢাকায় প্রতি মাসে ২০ টি হত্যা ও ৫ ডাকাতির ঘটনা ঘটছে: ডিএমপি

- আপডেট: ০২:৪৮:৫৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫
- / ১৮০০৬
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
রাজধানীতে প্রতি মাসে গড়ে ২০টিরও বেশি হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও মাসে ৫ টি ডাকাতি ও ১৭৮টি চুরির ঘটনার মামলা নথিভুক্ত হয়েছে।
যদিও সার্বিকভাবে ডিএমপির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল আছে বলে মনে করছে কর্মকর্তারা।
বুধবার (৩০ জুলাই) সকালে মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।
সাম্প্রতিক সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ডিএমপির কার্যক্রমের বিষয় ডিসি তালেবুর রহমান বলেন,জননিরাপত্তা বিধান ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ঢাকা মহানগর পুলিশ নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এরই অংশ হিসেবে টহল ও চেকপোস্ট বৃদ্ধি করা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় ডিএমপিতে ৪৪১টি টহল টিম মোতায়েন ছিলো। এরমধ্যে দিনে ২৫৯ ও রাতে ২২১টি। ফুট পেট্রোল ২২১টি,মোটরপেট্রোল ২৭টি, এছাড়া বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত স্থানে চেকপোস্ট পরিচালনা করা হয়। গত ২৪ ঘন্টায় সাড়াশি অভিযানে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ৪১৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের মধ্যে ডাকাত,চোর,মাদক কারবারি ও পরোয়ানভুক্ত আসামি রয়েছে। অভিযানে মোবাইল ও নগদ ১৩ হাজার টাকা,মাদক উদ্ধার করা হয়।
তালেবুর রহমান জানান,থানা পুলিশের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। গতকাল ডিবি ওয়ারির একটি টিম ১২৩টি চোরাই মোবাইলসহ চক্রের ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে।
মোহাম্মদপুরের কিশোর গ্যাং কব্জি কাটা গ্রুপের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বিঘ্নিত করাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। সেই কব্জি কাটা গ্রুপের আনোয়ারের দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলো-নিশাত ও রাসেল ওরফে এসটি রাসেল। এছাড়া গুলশানে সাবেক সংসদ সদস্যের বাসায় ৫০ লাখ টাকা চাঁদাদাবির ঘটনায় ৫ জন রিমান্ডে রয়েছে। তাদের একজনের বাসা থেকে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। এই ঘটনায় একটি মামলা কলাবাগান থানায় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
ডিএমপির মামলার পরিসংখ্যান তুলে ধরে ডিসি মিডিয়া বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত ৬ মাসে ঢাকায় মহানগরের ৫০ থানায় ৩৩টি ডাকাতি,২৪৮টি ছিনতাই, ১২১টি খুন এবং ১ হাজার ৬৮টি চুরির মামলা হয়েছে। প্রতি মাসে ২০টির অধিক, ডাকাতি ৫টির ঘটনা ঘটেছে। প্রতি মাসে গড়ে ৪৬টি ছিনতাই মামলা, মাসে ৭০টি চাঁদাবাজির মামলা হয়েছে।
সার্বিকভাবে ডিএমপির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল আছে বলে মনে করছে ডিএমপি।
ডিএমপির ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার বিষয় ডিসি তালেব বলেন, ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় আমরা নিত্যনতুন কৌশল অবলম্বন করছি। বিভিন্ন ডাইবেরশন,ট্রাফিক আইনে ২৪ ঘন্টায় ২৮৪৫টি মামলা ২৮২ ডাম্পিং ও ৮৩টি গাড়ি র্যাকার করা হয়েছে।
গুলশানে ৫ সমন্বয়ক গ্রেফতারের বিষয়ের এক প্রশ্নের জবাবে ডিসি বলেন,বিষয়টি তদন্ত চলছে। একটি ২ কোটি ২৫ লাখ টাকার চেক পাওয়া গেছে। মামলায় গ্রেপ্তার রিয়াদ নামের এককজনের বাসা থেকে এটা উদ্ধার করা হয়েছে। যদি ভুক্তভোগী পুলিশকে আগে জানালে অপরাধ ঘটনার আগে নিয়ন্ত্রণ করা যেতো। চাঁদা দেওয়ার বিষয়টা আমরা ক্ষতিয়ে দেখিছি। কি কারণে চাঁদা কেনো দিয়েছে।
রিমান্ডে থাকা সমম্বয়করা বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর কাছে চাঁদা চেয়েছিল। তাদের ব্যাংক একাউন্টে অস্বাভাবিক লেনদের দেখা গেছে। এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কারো দলীয় পরিচয় মূখ্য বিষয় না। আমরা সম্ভাব্য কারণ ও আর কেউ জড়িত আছে কি না সেটা জানা যাবে। তদন্ত চলছে।
১১ দিনের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিশেষ নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে নির্দেশনা দিয়েছে এসবি ও পুলিশ সদরদপ্তর। আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করার কোনো তথ্য আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমরা যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় ডিএমপি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। কেউ যদি চেষ্টা করে তাহলে তাদের আইন অনুযায়ী মোকাবেলা করা হবে। এর বাইরে গোয়েন্দা তথ্য কাজে লাগিয়ে আইনশৃঙ্খলা স্থিতিশীল রাখতে কাজ করছি।
রাতের অন্ধকারে থানায় বিভিন্ন দেনদরবার হয়। বিশেষ করে এনসিপি ও জামায়াতের নেতাদের আড্ডাখানা বা শালিস করা স্থান থানা না। এ বিষয়ে ডিসি মিডিয়া বলেন, থানায় এমন শালিসি করার কোনো সুযোগ নেই। কোনো বাদী বা আসামি চাইলে মীমাংসার বিষয় আলোচনা করতে পারে। এর বাইরে থানায় বসে দেনদরবার করার সুযোগ নেই। এ বিষয় কোনো অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মোহাম্মদপুরে ছিনতাই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। রাজধানী জুড়ে ছিনতাই ও চাঁদাবাজি মহা উৎসব চলছে। এ বিষয় তিনি বলেন, পুলিশ যথেষ্ট সক্রিয় রগেছে। রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা স্থিতিশীল রয়েছে। এর বাইরে কিছু অপরাধ ঘটছে না তা না, তবে ঘটনা ঘটলে আমরা আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও সহনীয় মাত্রায় রাখতে কাজ করছি। পাশাপাশি আমাদের সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। সামনে নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। আমাদের সদস্যদের মনোভাব পজিটিভ।
নগরবাসীকে আইন মেনে চলার অনুরোধ জানিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন,আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। অপরাধীর বিষয়ে তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহযোগিতা করবেন। আপনাদের নিরাপত্তা ও নিরাপদ চলাচলে ডিএমপি আন্তরিকভাবে সার্বক্ষণিক কাজ করছে।